নেসার আহমেদ!
ঠিকরে বেরিয়ে আসা চোখে দেখতে পেলো জেবা যুবকের ঠোঁটে একটা তীক্ষ্ণ বক্র হাসি।
ক্রমে নিঃসাড় হয়ে গেল জেবার নগ্ন দেহ।
.
০৩.
পরদিন সকাল আটটার দিকে শহীদের ড্রইংরুমে এসে ঢুকলেন মি. সিম্পসন। এ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান এই ভদ্রলোক সরকারী গোয়েন্দা বিভাগের পদস্থ কর্মচারী। সরকারী বৃত্তি পেয়ে স্কটল্যাওইয়ার্ডে তিন বছর বিশেষ শিক্ষা কোর্স কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করে সম্প্রতি মাসখানেক হলো ঢাকায় ফিরেছেন।
তীক্ষ্ণ প্রতিভাবান এই ভদ্রলোকের বয়স চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যে। লম্বা দোহারা গড়ন–মাথায় কাঁচা পাকা চুল। শহীদকে ইনি অত্যন্ত স্নেহ করেন এবং সেই সাথে করেন সমীহ। প্রায়ই তিনি জটিল কেস নিয়ে আসেন শহীদের সাথে আলাপ করতে। বিদেশ যাওয়ার আগে শহীদের সাথে কয়েকটা কেস নিয়ে তিনি একসঙ্গে কাজ করেছেন, সেই থেকেই পরিচয় এবং বন্ধুত্ব।
মহা সমাদরে মি. সিম্পসনকে বসতে বললো শহীদ। কিন্তু তিনি না বসে বললেন, শহীদ, তোমাকে আমার সাথে একটু যেতে হবে শাহবাগে। ওখানে একটা অদ্ভুত খুন হয়েছে-very interesting. আমি সেই spot থেকে সোজা তোমার এখানে চলে এসেছি-এক্ষুণি রেডি হয়ে নাও।
আচ্ছা আমি এক্ষুণি আসছি।
পাঁচ মিনিটে শহীদ বেরিয়ে এলো প্রস্তুত হয়ে। ড্রইংরুমে ফিরে এসেই দেখলো মি. সিম্পসন কার্পেটের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে গভীর মনোযোগর সাথে কি যেন নিরীক্ষণ করছেন। ঘাড় ফিরিয়ে শহীদকে জিজ্ঞেস করলেন, কাল রাতে তোমার ঘরে কোনো বানর জাজয় জন্তু এসেছিল?
না তো! কেন?
নিশ্চয়ই এসেছিল। কারো সাথে এই ঘরে তার ধস্তাধস্তিও হয়েছে। এই দেখ তার গায়ের লোম, একটা সাদা রুমালের ওপর সযত্নে কুড়িয়ে তোলা কিছু লোম দেখালেন মি. সিম্পসন।
ও আমার অ্যালসেশিয়ান কুকুরের লোম।শহীদ হেসে বললো।
অসম্ভব। বাইরে এসে দ্যাখো। এই পায়ের ছাপ কি তুমি কুকুরের বলতে চাও? বারান্দায় বেরিয়ে শহীদ দেখলো কাদামাখা অনেকগুলো থ্যাবড়া পায়ের চিহ্ন স্পষ্ট ছাপ রেখে গেছে তার বারান্দার ওপর।
তাই তো, strange!
কেবল তাই নয়, সেই জন্তুটার সাথে একজন খোঁড়া লোকও এসেছিল এই ঘরে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তারা এসেছিল গাড়িতে চড়ে। এবং এই একই পায়ের চিহ্ন পাবে তুমি শাহবাগের হোটেলে। চলো, let us start.
পথে যেতে যেতে ঘটনার বিবরণ ভেঙে বললেন মি. সিম্পসন। জেবা ফারাহ নামী এক মিশরীয় নৃত্যশিল্পীকে কে যেন তার কামরায় গলা টিপে হত্যা করে গেছে গত রাতে। হোটেল কর্তৃপক্ষের টেলিফোন পেয়ে কাল রাতেই পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে–এবং বিছানার ওপর জেবার সম্পূর্ণ নগ্ন মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে ।
.
খোদা বক্স জানায় যে রাত আটটার দিকে একজন লোক জেবার কক্ষে প্রবেশ করে জেবার অনুমতিক্রমেই। তারপর ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণতঃ যারা এই ঘরে ঢোকে ঘন্টাখানেক পরই তারা বেরিয়ে যায়। কিন্তু, রাত এগারোটা বেজে গেলেও যখন সেই লোকটা বেরোলো না, তখন সে দরজায় করাঘাত করে। ভেতর থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায় না। বারবার করাঘাত করেও যখন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না, তখন সে নিচে গিয়ে রিসেপশন রুম থেকে জেবার কামরায় বারবার টেলিফোন করে।
ঘরে মৃতদেহ ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি? শহীদ জিজ্ঞেস করলো।
না। তবে কতগুলো অদ্ভুত পরস্পর বিরোধী পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। এবং তাতে ব্যাপারটা অত্যন্ত জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।বলতে বলতে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেল।
.
পুলিশ প্রহরী দাঁড়িয়ে রয়েছে কামরার সামনে। মিঃ সিম্পসনকে দেখেই সেলাম ঠুকে পথ ছেড়ে দিলো। সাদা কাপড়ে ঢাকা মৃতদেহটার ওপর একবার দূর থেকে চোখ বুলিয়েই শহীদ চলে গেল ঘরের পেছন দিককার ব্যালকনিতে। দেখলো, তার বাড়ির বারান্দায় যে দুটো পায়ের ছাপ মি, সিম্পসন তাকে দেখিয়েছেন ঠিক সেই চিহ্ন। ভ্রূকুঞ্চিত হয়ে গেল শহীদের, ব্যাপার কি! এ তো কুয়াশা এবং তার গরিলার পদচিহ্ন! তবে কি কুয়াশাই এই কাজ করলো?
.
খোদা বক্সকে ডেকে পাঠালো শহীদ। সেলাম জানিয়ে এসে দাঁড়ালো নিকষ কালো জোয়ান কাফ্রী খোদা বক্স। ক্ষণে ক্ষণে জলে ভিজে উঠেছে চোখ দুটো, বারবার রুমাল দিয়ে মুছে মুছে লাল করে ফেলেছে। ওকে বারান্দায় ডেকে নিয়ে শহীদ নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলো, কতদিন ধরে তুমি মিস জেবার কাছে কাজ নিয়েছো?
পাঁচ বছর।
কাল যে লোকটা এই কামরায় ঢুকেছিল, তার সাথে কোনও জন্তু জানোয়ার ছিলো?
জ্বী না।
লোকটার একটা পা কি খোঁড়া ছিলো?
স্ত্রী না।
তার হাতে কোনও লাঠি ছিলো। পরনে কালো আলখাল্লা ছিলো?
না। খয়েরী রঙের দামী স্যুট ছিলো পরনে। হাতে কোনও লাঠি-সোঁটা ছিলো না।
ভ্রু কুচকে বাইরের দিকে চেয়ে শহীদ কিছুক্ষণ কি যেন ভালো। তারপর বললো, পুলিশ যখন দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে তখনও কি ঘরটা ভেতর থেকেই বন্ধ ছিলো?
জ্বী হাঁ।
আচ্ছা তুমি যাও।
খোদা বক্স চলে যাচ্ছিলো, কিন্তু মি, সিম্পসন ওকে ডাকলেন। বললেন, খোদা বক্স এদিকে এসো। কাল যে লোকটা এখানে এসেছিল তার চেহারাটা. আমি বানিয়ে দিচ্ছি, আমার ভুল তুমি শুধরে দিবে বুঝলে?
একটা ছোটো বাক্স খুললেন মি. সিম্পসন। তার মধ্যে থরে থরে সাজানো প্লাস্টিকের নাক, কান, চোখ, ভুরু, গোঁফ, চুল বিভিন্ন রকমের। তার থেকে কয়েকটা জোড়া দিয়ে মোটামুটি একটা মানুষের মুখ তৈরি করলেন এক মিনিটের মধ্যেই। প্রায় শেষ হয়ে আসতেই খোদা বক্স বললো, মোচ জোড়া আরও বড় ছিলো।