এবার? এবার কোথায় যাবে কুয়াশা?
খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নেসার আহমেদ। হাতে উদ্যত রিভলভার।
কোনও রকম চালাকীর চেষ্টা করো না। ভালোয় ভালোয় নক্সাটা বের করে দাও। বললো নেসার।
এবার কোমরে বাঁধা শিকলটা ছিড়বার জন্যে পাগলের মতো টানাটানি আরম্ভ করলো গোগী। চিনতে পেরেছে সে নেসারকে। ওর দিকে চাইতেই জ্বলে উঠলো নেসার আহমেদের হিংস্র দুটো চোখ। রিভলভারের মুখটা ঘুরে গেল গোগীর দিকে।
তুমিও আজ মজা টের পাবে বাছাধ। আজ শিকলে বাঁধা আছে। তোমার নাগালের বাইরে আজ আমি।
গুড়ুম করে গুলি ছুঁড়লো নেসার। কিন্তু পিছন থেকে কে যেন ওর হাতে একটা ধাক্কা দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দিলো ওকে। চমকে ঘুরে দাঁড়ালো নেসার। দেখলো একজন লোক দাঁড়িয়ে আসে ওর সামনে। মুখে একটা কালো মুখোশ পরা। প্রায় ছফুট লম্বা সবল সুঠাম দেহের অধিকারী এই আগন্তুক। বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে চুপচুপে হয়ে গেছে।
নেসারের কব্জিতে একটা বিশেষ কায়দায় চাপ দিতেই ঠিক শিশুর হাতের খেলনার মতোই রিভলভারটা পড়ে গেল মাটিতে। পা দিয়ে একটা লাথি মেরে রিভলভারটা ঘরের এক কোণে সরিয়ে দিলো মুখোশধারী। নেসার আহমেদ ততক্ষণে এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিয়েছে। অসুরের মতো শক্তিশালী নেসার এবার খালি হাতেই ঝাঁপিয়ে পড়লো লোকটার ওপর। এলোপাতাড়ি কয়েকটা ঘুসি খেয়ে আগন্তুক পিছিয়ে গেল কিছুটা। আবার বাঁপিয়ে পড়লো নেসার আহমেদ প্রবল বিক্রমে। এবার কিন্তু ফল হলো উল্টো। অদ্ভুত কায়দায় লোকটা অল্প একটু সরে গিয়ে নেসারের একটা হাত ধরে ফেললো। তারপর যুযুৎসুর এক প্যাঁচে আছড়ে ফেললো মাটিতে। নেসারও কম যায় না। মাটিতে পড়লো বটে কিন্তু মুখোশধারীকে নিয়েই পড়লো। আগন্তুকের বুকের ওপর উঠে বসে তার গলা টিপে ধরলো নেসার।
এদিকে কুয়াশা পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে একটা চাবি-গোগীর শিকল খুলবার চাবিটা পাওয়া যাচ্ছে না।
লোকটা। তখন পা দুটো ভাঁজ করে এনে নেসারের গলায় বাধিয়ে জোরে একটা লাথি মারলো সে। ডিগবাজী খেয়ে নেসার ছিটকে পড়লো দূরে। জোরে দেয়ালে ঠুকে গেল তার মাথাটা। এগিয়ে গিয়ে আগন্তুক বুশ শার্টের কলার ধরে টেনে তুললো নেসারকে, তারপর দেয়ালের সাথে ঠুকতে থাকলো ওর মাথাটা প্রবল বেগে যতক্ষণ না সে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়লো।
ড্রয়ার থেকে একটা শক্ত দড়ি বের করে ছুঁড়ে দিলো কুয়াশা মুখোশধারীর দিকে। বললো, তোমাকে চিনতে পারলাম না ভাই, কে তুমি, এমন ভাবে আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করে চিরঋণী করে রাখছো?
কোনও জবাব না দিয়ে মুখোশধারী নেসারের হাত পা ভালো করে বেঁধে ফেললো। এমন সময় কাছেই কয়েকটা রাইফেলের গুলির আওয়াজ হতেই কুয়াশা ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে উঠলো। আগন্তুককেও একটু বিচলিত মনে হলো।
একটা বোতল থেকে কিছু এসিড ঢেলে দিলো কুয়াশা গোগীর কোমরে বাঁধা লোহার শিকলের ওপর। গলে গেল লোহা। মুক্তি পেয়েই গোগী নেসারের দিকে চললো।
ঠিক এমনি সময়ে সামনের খোলা দরজা দিয়ে ঘরে এসে ঢুকলেন মি, সিম্পসন, সাথে তিনজন রাইফেলধারী সেপাই। ঢুকেই বগম্ভীর কণ্ঠে বললেন, হ্যাণ্ড স আপ। যে যেখানে আছে দাঁড়িয়ে থাকো–কেউ এক পা নড়াচড়া করবে না।
গোগী থমকে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনলো, তারপর এগিয়ে গেল থপ থপ করে মি. সিম্পসনের দিকে। সেপাইগুলো এই ভয়ঙ্কর গরিলা মূর্তি দেখে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। এক মুহূর্তে মনস্থির করে গুলি করলেন মি. সিম্পসন। বাঁ হাতের কনুইয়ের একটু ওপরে লাগলো গুলিটা। যন্ত্রণায় কুঁচকে গেল বিকট গরিলার ভয়ঙ্কর মুখ। ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখলো রক্ত পড়ছে ক্ষত জায়গাটা থেকে। এবার সোজা হয়ে বুক ফুলিয়ে দাঁড়ালো গোগী। এক লাফে মি. সিম্পসনের পাশে গিয়ে উপস্থিত হলো। রাইফেলটা রি-লোড করবার আর অবসর হলো না। গোগীর ডান হাতের এক প্রচণ্ড চাপড়ে ধরাশায়ী হলেন মি. সিম্পসন। পেছনের সিপাইগুলো ততক্ষণে উধাও হয়েছে। ঠিক সেই সময় টমিগান হাতে দশ বারোজন মিলিটারীকে পেছনে নিয়ে ঘরে এসে ঢুকলেন কমাণ্ডার শেখ।
ঠুং করে একটা শব্দ হলো, যেন কোনও শিশি মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেল। এক মুহূর্তে ঘরটা পুরো ধোঁয়ায় ভরে গেল, আর সেই সাথে তীব্র বিষাক্ত গন্ধ। ঘরের মধ্যে কাউকে দেখতে পেলেন না কমাণ্ডার শেখ। শুধু শুনলেন, কে যেন মৃদুস্বরে বলছে, গোগী, কাম টু মি!
ধোঁয়া যখন একটু হাল্কা হলো, তখন ঘরের মধ্যে হাত-পা বাঁধা নেসার আর অজ্ঞান মি. সিম্পসন ছাড়া আর কাউকে পাওয়া গেল না।
.
আধঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে পেলেন মি. সিম্পসন। উঠেই বললেন, কুয়াশা কোথায়?
পালিয়ে গেছে। কে যেন পাশ থেকে বললো।
উঠে দাঁড়ালেন মি. সিম্পসন।
এক্ষুণি যেতে হবে এয়ারপোর্টে। ডাইভার, জলদি গাড়ি স্টার্ট করো।
ধানমণ্ডি থেকে একটা জীপ দ্রুত চলে গেল এয়ারপোর্টের দিকে। এবং তার পিছন পিছন চললো বড় একটা মিলিটারী ট্রাক।
মি. সিম্পসন যখন এয়ারপোর্টে পৌঁছলেন তখন একটা অস্টার প্লেন রানওয়ের ওপর এঞ্জিন স্টার্ট দেয়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপছে। ছুটে গেলেন তিনি প্লেনটার কাছে। কিন্তু বড় বেশি দেরি হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে চলতে আরম্ভ করলো প্লেনটা।
পাইলটের পাশের সীটের জানালা দিয়ে একটা ভয়ঙ্কর গরিলার মুখ বেরিয়ে এলো বাইরে। মি. সিম্পসন আর তার বাহিনীকে দেখে মুখ বিকৃত করে ভেংচি কাটলো গরিলাটা।