তাই যদি সে করে তবে আমার আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না মি. শহীদ। যে করে থোক আমাকে বাঁচান আপনি। এই দুশ্চিন্তায় আমি পাগল হয়ে
আপনি উতলা হবেন না চৌধুরী সাহেব। আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। আজই রাত আটটার মধ্যে সদলবলে ধরা পড়বে নেসার আহমেদ। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
আপনাদের এই অভিযানে আমিও যোগ দিতে চাই মি. শহীদ।
তাতে আমাদের সুবিধার চাইতে অসুবিধাই হবে বেশি। আমরা ছদ্মবেশে আগে ওদের আড্ডায় কয়েকজন ঢুকে পড়বো। ওদের পালাবার সব পথ বন্ধ করে দেয়ার পর পুলিশ বাহিনী প্রবেশ করবে ভেতরে। অনেক বিপদ-আপদ ঘটতে পারে। আপনার যাওয়া ঠিক হবে না সেখানে।
আমার যেতেই হবে মি. শহীদ। ওদিকে আমার মেয়ের কপালে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা জানতে না পেরে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় আমি ছটফট করতে করতে হার্টফেলই করবো। হাই রাডপ্রেশার আমার, যে কোনও সময় কোলাপ করতে পারি। আপনার কোনও অসুবিধার সৃষ্টি করবো না আমি। দয়া করে আমাকে সাথে নিন মি. শহীদ।
বেশ, যখন এতো করে অনুরোধ করছেন, নেয়া যাবে আপনাকে। আপনি সন্ধ্যার সময় আমার এখানে চলে আসবেন। ছদ্মবেশ পরিয়ে আপনার চেহারা পাল্টে নিতে হবে রওনা হবার আগে।
আমি ঠিক সাতটায় পৌঁছবো এখানে।
.
অন্ধকার একটা ঘরে ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে এলো রীণার। প্রথমে সে মনে করলো নিজের ঘরেই বুঝি শুয়ে আছে। তারপর হঠাৎ কলিমের কথা মনে পড়লো। এবং সাথে সাথে রাতের সমস্ত ঘটনা একসঙ্গে মনে পড়ে যেতেই চমকে উঠলো রীণা। কোথায় সে? উঠে বসতেই একটা নারীকণ্ঠে প্রশ্ন এলো, ঘুম ভাঙলো?
অবাক হয়ে চারপাশে চাইলো রীণা। অন্ধকারটা চোখে একটু সয়ে আসতেই দেখলো মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা স্ত্রীলোকের মূর্তি।
কে তুমি।
আমি? আমার পরিচয় নাই বা জানলে। মনে করে নাও আমিও তোমার মতোই একজন হতভাগিনী। ধরে নাও আমার নাম মোতিয়া।
মোতিয়া? আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে ওরা?
যেখানে আমাকেও একদিন এনেছিল এমনি করে বাবা-মা, ভাই-বোন, সমাজ-সংসার থেকে ছিন্ন করে।
কেন? আমাকে ধরে আনলো কেন?
তোমার বাবার কাছ থেকে তোমাদের জমিদার বাড়ির গুপ্ত কক্ষের চাবি আদায় করবার জন্যে।
চাবি পেলেই আমাকে ছেড়ে দেবে তো?
অসম্ভব। এরা তাকে একবার আনে, সে আর সমাজে ফিরে যেতে পারে না বোন! আমিও ভদ্রঘরের ভদ্র মেয়ে ছিলাম। একদিন এমনি করে মুখ চেপে ধরে নিয়ে এলো ওরা আমাকে। আজ আমি কলুষিত। কোথাও আমার স্থান নেই আর। প্রতিরাতে ওদের লালসার শিকার হওয়ার জন্যেই আমি বেঁচে আছি।
এখান থেকে পালাবার কোনও পথ নেই?
না। বিশ ফুট মাটির তলায় এই ঘর। ওপরে ওঠার পথই তুমি পাবে না।
এখন রাত কতো?
রাত কোথায়? দুপুর দুটো বাজে। আমি যাই, এখনই সর্দার ফিরবে। আমাকে এ ঘরে দেখলে চাবকে পিঠের চামড়া তুলে নেবে।
ত্রস্তপদে সোজা একটা দেয়ালের দিকে চলে গেল মোতিয়া, তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল। আশ্চর্য হয়ে রীণা একবার চোখ কচলালো, স্বপ্ন না সত্যি। উঠে দেয়ালের কাছে গিয়ে দেখলো কোনও দরজা নেই সেখানে। এবার ভয় পেয়ে গেল রীণা, ভূত নয় তো!
এমনি সময় ঘরের মধ্যে এক ঝলক তীব্র আলো এসে পড়লো। রীণা চেয়ে দেখলো অপর একটা দেয়ালে দরজার মতো একটা ফাঁক সৃষ্টি হয়েছে। পাশের ঘর থেকে উজ্জ্বল আলো এসে পড়েছে এই ঘরে।
ঘরের মধ্যে এসে দাঁড়ালো কোরবান আলী।
ঘুম ভেঙেছে সুন্দরী? বাহ, এই তো বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
দেয়ালটা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল। খশ করে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে একটা মোমবাতি ধরালো কোরবান। তারপর নিঃসঙ্কোচে বিছানার ওপর বসে পড়ে বললো, যখনই তোমাকে দেখেছি তখনই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি সুন্দরী। সারারাত কাল ছটফট করেছি, কলিজাটা শুকিয়ে একেবারে মরুভূমি হয়ে গেছে। তাই এলাম। যদি কিছু অধর সুধা পাই তবে এই অধমের প্রাণটা রক্ষা হয়। এদিকে এসো সুন্দরী, কাছে এসো, দূরে দাঁড়িয়ে রইলে কেন?
পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে রইলো রীণা। ভয়ে কণ্ঠতালু পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে ওর। ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কোরবান আলী নিজেই উঠে এলো ওর কাছে। ওর হাত ধরে মৃদু টান দিয়ে বললো, অবাধ্য হয়ো না সুন্দরী! তাতে কোনও লাভ আছে? স্বেচ্ছায় না আসো তোমাকে কাছে আনবার শক্তি আমার দেহে আছে। এসো।
এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সরে দাঁড়ালো রীণা। বললো, খবরদার। আমার গায়ে হাত দেবে না বলছি।
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ! হাসলে মাইরী। আমার ঘরে আমাকে ভয় দেখাচ্ছো? হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। গায়ে হাত দেবো না?
আবার এগিয়ে আসে কোরবান আলী। টেবিলের ওপর থেকে অলক্ষ্যে একটা কাঁচের ফুলদানি তুলে নিলো রীণা। কোরবান কয়েক পা এগোতেই সেটা ছুঁড়ে মারলো ওর মাথায়। কপালে লেগে মাটিতে পড়ে সশব্দে ভেঙে গেল কাঁচের ফুলদানি। ফিকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে পড়লো কপাল থেকে। প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেল কোরবান আলী। তারপর বাঘের মতো লাফিয়ে পড়লো রীণার ওপর। ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে শূন্যে উঠিয়ে ফেললো, তারপর বিছানার পাশে যেতে যেতে এক হাতের কয়েকটা ক্ষিপ্ত টানে শাড়িটা খুলে ফেললো রীণার দেহ থেকে। তারপর ঝপাৎ করে ফেললো ওকে বিছানার ওপর। ব্লাউজের বোতাম খোলার চেষ্টা করছে কোরবান আলী। ছটফট করতে থাকলো রীণা ওর হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্যে। কিন্তু অসুরের মতো শক্তিশালী কোরবানের সাথে পারবে কেন সে?