আবদুল্লাহ হারুণ বললো, আরো কিছু মূল্য তোমাকে দিতে হবে নেসার। ঠিক জেনো, তোমাকে এবং তোমার দলবলকে আমাদের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
নেসার আহমেদ হাসলো। কোমরের খাপ থেকে তীক্ষ্ণ একফলা একটা ছোরা বের করে আবদুল্লাহ হারুণের মুখোমুখি হলো। প্রথমে ছোরার খোঁচায় আবদুল্লাহর ডান চোখটা উপড়ে ফেললো নেসার। তীব্র গগন ভেদী আর্তনাদে ঘরটা ভরে উঠলো। নেসার হাসলো শুধু। কাছে গিয়ে বাম হাতটা কেটে নামিয়ে দিলো। ছুরির রক্তটুকু আবদুল্লাহর পরনের জামায় মুছতে মুছতে নেসার বললো, আশা করি, এতে তোমার রাগ কিছু কমবে। চিন্তা করো না। তোমাকে অতো সহজে মারা হবে না। কোরবান।
জ্বি
ওর কাটা চোখ আর হাতে লবণ মাখিয়ে দিতে বলো। রাত্রিবেলা এসে অন্য ব্যবস্থা করবো।
আবুদল্লাহ হারুণ তীব্র ব্যথায় গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে লাগলো। নেসার শুধু হাসলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো পিরামিডের দিকে।
রাত নিঝুম হয়ে এসেছে। কয়েকজন নিশাচর নিঃশব্দে পিরামিডের গুপ্ত গুহার পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। দলের সম্মুখ ভাগে আছে নেসার আহমেদ ও কোরবান আলী। নেসার আহমেদ স্থির ও গম্ভীর। কোরবান আলীর একটা মাত্র চোখ হিংস্র নেকড়ের চোখের মতো জ্বলছে। দলের সম্মুখ ভাগে দুজন মশালধারী প্রহরী পথ দেখিয়ে চলেছে। চারদিকে থম থম করছে ভৌতিক নির্জনতা। বহুদুরে এসে একটা প্রাচীরের সামনে নেসার আহমেদ হঠাৎ দাঁড়ালো। কোরবান আলীর ইঙ্গিতে অন্যান্যরাও দাঁড়িয়ে পড়লো।
তোমাদের কাছে এই পথ অচেনা নয়…
নেসার আহমেদ গম্ভীর গলায় বলতে লাগলো, বহুবার তোমরা আমার সঙ্গে এই পথে আসা যাওয়া করেছে। কিন্তু সবচেয়ে দুর্গম যে পথটি আছে, সে পথে তোমরা কেউ কখনো যাওনি। সে পথে কি ভাবে যেতে হবে তার সব নির্দেশ কোরবান আলীর কাছ থেকে তোমরা পাবে। আমি এখানে তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কিন্তু মনে রেখো আমি সর্বদাই ছায়ার মতো তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবো।
নেসার আহমেদ হেসে উঠলো, সাবধান, কেউ আমাকে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করো।। ঈমান নিয়ে কাজ করো। কাজ শেষ হলে তোমাদের সকলকে বহুত ইনাম দেয়া হবে।
দলের লোকজন সসম্ভ্রমে সর্দারের সম্মুখে মাথা নোয়ালো। নেসার আহমেদ ইঙ্গিতে কোরবান আলীকে কাছে আসতে বললো।
কোরবান আলী কাছে এলে চাপা গলায় বললো, আমি যা যা বলেছি, সব মনে আছে?
আছে হুজুর।
শোনো, আর একবার কথাগুলো বলছি। পিরামিড থেকে মাল বোঝাই গাড়িগুলো সোজা পাঠিয়ে দেবে পাঁচ নম্বর আড্ডায়। মাল পাঠাতে যতক্ষণ লাগে ততক্ষণে তোমার কাজ হবে গর্দভগুলোর সাথে মোটামুটি তাল মিলিয়ে চলা। কাজ হয়ে গেলে… বুঝেছো?
বেশক…
কোরবান আলী হাসলো, কাজ হয়ে গেলেই সব শেষ করে দেবো।
হ্যাঁ। মনে রেখো মনি-মাণিকের লোভ প্রচণ্ড লোভ। বুদ্ধিমান কখনো পেছনে শত্রু রেখে যায় না।
বুঝেছি হুজুর
নেসার আহমেদ বললো, তুমি গুহা মুখের কাছে থাকবে। আমি ভেতরে ঢুকবো। আমি নিজের হাতে মাল খালাস করতে চাই। অল-রাইট?
জি হুজুর।
কোরবান আলী মাথা নোয়ালো। নেসার আহমেদ এক মুহূর্ত স্থির তীক্ষ্ণ চোখে দশজন লোকের দলটাকে পরখ করলো। তার চোখে মুখে ফুটে উঠলো ভয়ানক এক ধূর্ত হাসি। কোরবান আলীর দিকে এবারে ফিরে তাকিয়ে বললো, আমি চললাম কোরবান। সঙ্কেতমত কাজ করো।
মশালের রক্তিম আলোয় গুহার ভেতরটা লাল লাল ছায়ায় ভরে উঠেছে। নেসার আহমেদ সেই ছায়া পার হয়ে অন্ধকারে ডুব দিলো। তার পদধ্বনি মিলিয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই।
.
জানো, আমার হাসি পাচ্ছে, দীবা বলছিল।
কুয়াশাও হাসলো। বললো, অভিনয় অভিনয়ই। এতে হাসির কিছু নেই দীবা। দীবা বললো, হাসি পাচ্ছে অন্য কারণে। আজ আমার বাসররাত ছিলো।
কুয়াশা বললো, বাসর ঘর তো সঙ্গেই আছে। বলো তো শ্রীমান গোগীকে নৃত্য করতে আদেশ দিই। বাসর শয্যার আগে একটু আমোদ উৎসব হোক।
সবতাতেই তোমার ঠাট্টা…
দীবাও হাসলো। বললো, গোগীকে বললে মন্দ হয় না। কাপড় চোপড় পরাই আছে। এখন শুধু আদেশের অপেক্ষা।
গোগী কিভাবে যেন টের পেয়েছে তার সম্পর্কে কথাবার্তা হচ্ছে। সে খুব গম্ভীর চালে সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখ জোড়া পিট পিট করতে লাগলো।
কুয়াশা সেদিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। আলোচনার প্রসঙ্গ তার মনঃপুত হচ্ছিলো না। সে নিঃশব্দে অন্ধকার গুহা ছেড়ে দেয়ালের সন্নিকটে এসে দাঁড়ালো। চারদিকে পিরামিডের সঞ্চিত হাজার হাজার বছরের নির্জন স্তব্ধতা। এই অন্ধকার গুহায় আজ সংঘটিত হতে যাচ্ছে তার জীবনের সবচাইতে ভয়ঙ্কর নাটক। সে ভাবলো যদি হেরে যায়? তার চোখ মুখ উত্তেজনায় রক্তিম হয়ে উঠলো। হাতের মুঠো শক্ত হয়ে উঠলো। নির্নিমেষ চোখে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে কুয়াশা অপেক্ষা করতে লাগলো।
কুয়াশা ঠিকই বলেছিল। পিরামিডের নিচে আজ জেন ভয়ঙ্কর এক নাটক অভিনীত হতে চলেছে। শয়ন-মন্দিরের মমিগুলো যখন নিশ্চল প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করছে অন্ধকারচারী প্রেতাত্মাদের জন্য, তখন পিরামিডের তৃতীয় গুহাপথে ঢুকলো নতুন আর একদল নিশাচর। তারা সকলেই সশস্ত্র। দলের নেতা সহকারীকে বললো, ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাইর ব্যবস্থা ঠিক মতোই আছে তো মি. শরীফ?
আছে। আপনি আদেশ দেয়া মাত্র পিরামিডের অন্ধকার, গুহা আলোময় হয়ে উঠবে।