দীবা আস্তে আস্তে বললো, ঐ লোকটি কে? রাজা অ্যামন হোটাপের প্রেতাত্মা?
সশব্দে হেসে উঠলো কুয়াশা। বললো, না, জেবা ফারাহ্র হত্যাকারী নেসার আহমেদ। বর্তমানে কুয়াশার এক নম্বরের শত্রু। দীবা উত্তেজিত হয়ে উঠলো। জেবার হত্যাকারীর প্রতি তার যে প্রচণ্ড ঘৃণা ও বিদ্বেষ এতকাল মনে চাপা ছিলো সেই ঘৃণা ও বিদ্বেষ তার চোখে মুখে হিংস্র হয়ে উঠলো। সে উঠে দাঁড়াতে চাইলো। কুয়াশা বুঝলো সবই। সে শুধু সন্দেহে দীবাকে ধরে রাখলো। হাঁপাতে হাঁপাতে দীবা বললো, ঐ খুনে শয়তানকে আমিও এতকাল খুঁজেছি কুয়াশা। আমার হাতে ওর নিস্তার নেই।
কুয়াশা বললো, তুমি বিশ্রাম করা দীবা। তুমি অসুস্থ। জেবার হত্যাকারী নেসার আহমেদের সঙ্গে বোঝাপড়া করার জন্য কুয়াশাই যথেষ্ট। তুমি
বলতে বলতে কুয়াশার চোখ-মুখ স্নিগ্ধ হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। সে বললো, তুমি এ কাজের উপযুক্ত নও। তোমাকে আমি মুজাদ্দিদ করীমের জীবনে ফিরিয়ে দিয়ে আসবো।
দীবা তাকিয়ে রইলো কুয়াশার দিকে। কুয়াশা আর কথা বললো না। সস্নেহে দীবার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। ক্লান্ত কণ্ঠে দীবা বললো, আমরা ফিরে যেতে পারবো?
কুয়াশা হাসলো, বললো, পারবো। কিন্তু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। তুমি এখানে বিশ্রাম করো। আমি গোগীর খোঁজ করছি।
কিন্তু…
কুয়াশা বললো, ভয় নেই দীবা। পিরামিডের রহস্য এখন আমার হাতের মুঠোয়।
সে হাসলো, বললো, আমি পিরামিডের অতল রহস্যের সঙ্গে আরো কিছু রহস্য যোগ করবো। নেসার আহমেদ অন্ততঃ জানবে রাজা আমন হোটাপ য হলেও প্রতিশোধ নিতে জানেন। তুমি আমাকে সাহায্য করবে না দীবা?
দীবা চুপ করে রইলো। কুয়াশা এক মুহূর্তে তার দিকে তাকিয়ে আস্তে পা বাড়ালো। গোগীকে এই শিলা গুহার অন্ধকার থেকে উদ্ধার করতে হবে। আপাততঃ এই তার প্রধান কর্তব্য।
.
তখন অনেক রাত। দেয়ালে হেলান দিয়ে মি. সিম্পসন কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছেন। হঠাৎ একটা কোমল স্পর্শে তিনি জেগে উঠলেন। তাঁর বিয়ের অন্ত রইলো না। দেখলেন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নেসার আহমেদের বিলাস সঙ্গিনী চম্পা। মি. সিম্পসন চোখ খুলতেই সে ঠোঁটের উপর তর্জনী রেখে কথা বলতে নিষেধ করলো। সতর্ক দৃষ্টিতে চারদিকে তাকিয়ে সে মি. সিম্পসনের হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলো। একখণ্ড কাগজ তাঁর চোখের সামনে তুলে ধরলো। সবিস্ময়ে দেখলেন কাগজটি মিশর সরকারের রাজকীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয় পত্র। লেখা আছে মিস নাফিসা আইভরি, গামাল হোসেনের প্রয়োদশ সহকারী। মি. সিম্পসন সম্মান সূচক মাথা নোয়ালেন। নাফিসা আইভরি চাপা গলায় পরিষ্কার ইংরেজিতে বললো, এই চোরা কুঠুরীর একটি মাত্র লোক বাদে সবাই মাতাল হয়ে আছে। আমি আপনাকে পথ দেখিয়ে দিচ্ছি। আপনি পালান।
মি. সিম্পসন বললেন, লোকটি কে, কোরবান আলী?
না। নাফিসা আইভরি কানের কাছে মুখ আনলো। বললো, আপনার ঘরের দরজায় যাকে রাখা হয়েছে সেই প্রহরী। আমি চোরা পথে লুকিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু এই গুহা থেকে বেরোতে হলে সমুখের পথ দিয়ে যেতে হবে। আর ঐ পথের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আপনার প্রহরী।
নাফিসা আইভরি একটা ছোট্ট এ্যাসট্টা পয়েন্ট টু ফাইভ পিস্তল গুঁজে দিলো মি. সিম্পসনের হাতে। বললো, পুরো ছটা বুলেট ভরে রেখেছি। আর দেরি করবেন না। পালান।
তুমি?
আমি?
নাফিসা আইভরি একটু হাসলো, নেসার আহমেদের কাজ শেষ হয়নি। আমার কর্তব্যও বাকি আছে যদি বেঁচে থাকি যথাসময় আমাদের দেখা হবে।
মি. সিম্পসন কৃতজ্ঞতাভরা চোখে তাকান আইভরির দিকে। আইভরি তার হাত বাড়িয়ে দিলো। মি. সিম্পসন করমর্দন করলেন। চাপা গলায় আইভরি বললো, আমাকে অনুসরণ করুন।
মি. সিম্পসন অন্ধকার ঘর থেকে আইভরির পিছু পিছু বাইরে এলেন। দেখলেন বারান্দায় টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে প্রহরী আদিল শেখ। মোড় ফেরার উপক্রম করতেই আইভরির ইঙ্গিতে মি. সিম্পসন দেয়ালের পাশে আত্মগোপন করলেন। কিন্তু ততক্ষণে প্রহরী আদিল শেখ আইভরিকে দেখতে পেয়েছে।
আদিল শেখ রাইফেল উঁচিয়ে এগিয়ে এলো। কাছে এসে মুখোমুখি দাঁড়ালো। অবাক হয়ে বললো, তুমি এখানে কেন?
নাফিসা বললো, মাঝ রাতে সবাই মাতাল। তাই আমি বেরিয়ে এসেছি।
বেরিয়ে এসেছো কেন?
তোমার কাছে। আমি জানি মদ তোমাকে মাতাল করতে পারে না। আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমার কাছে আমি ধরা দেবার জন্য এসেছি আদিল শেখ।
আদিল সন্দেহপূর্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো। বললো, তোমাকে আমি এই মুহূর্তে হত্যা করতে পারি নাফিসা। তোমার আসল মতলব কি খুলে বলো।
তুমি বিশ্বাস করো আমি তোমার কাছে এসেছি। কাতর গলায় নাফিসা বলে।
হেসে ওঠে আদিল। বলে, কিন্তু তুমি যাই বলো, তোমাকে আমি এতটুকু বিশ্বাস করি না। আমার প্রভু নেসার আহমেদ যখন উপভোগের জন্য তোমাকে কায়রোর হাটেল থেকে সংগ্রহ করেন তখনই আমার মন বলছিল প্রভু একটা ভুল করেছেন। আমার সন্দেহ যে সত্যি তাতে আর ভুল নেই। নড়াচড়া করবার চেষ্টা করো নানাফিসা। আমি তোমাকে বন্দী করলাম।
আদিল এগিয়ে গেল নাফিসার দিকে। হঠাৎ বিদ্যুৎ বেগে বেরিয়ে এসে আদিলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন সিম্পসন। আদিলের কণ্ঠনালী সজোরে চেপে ধরলেন। দারুণ বিস্ময়ের ঝোঁক কাটাবার আগেই অন্ধকার হয়ে এলো আদিলের পৃথিবী। তার প্রাণহীন দেহ মেঝেয় পড়ে গেল।