ঠিক হ্যায় ওস্তাদ!
পথ পেয়ে গেছি। রাস্তা বিলকুল সাফ। এখন শুধু মণিমুক্তা বোঝাই করে পাচার করা! হাঃ হাঃ হাঃ
নেসার আহমেদ হাসলো। জেবাকে মেরেছিল। বড় কায়দা করে। বিছানায় শুয়ে, গায়ে আদর করতে করতে..কোরবান…
জি ওস্তাদ…
সিম্পসন কুত্তাটা কিন্তু তাদোড়। সাবধান…
ওস্তাদ যা বলেছেন তাই হবে, আমরা সাবধানে থাকবো।
হু, সাবধানে থেকো।
নেসার আহমেদ খলিত পায়ে মোতিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। মোতিয়া ভীত চোখে তাকিয়ে আছে। সে বুঝলো, পানপাত্র ভরে দেবার কাজ ফুরিয়েছে। এখন নিজেকেই পানপাত্র করে তুলে ধরতে হবে নেসার আহমেদের কাছে। কোরবান হাসলো। কানা চোখটা আরও কুৎসিত দেখালো। প্রভু ও মোতিয়ার দিকে তাকিয়ে চকিতে সে কক্ষান্তরে সরে এলো।
.
০৭.
পেছনে দাঁড়িয়ে গোগী ক্রুদ্ধ হুঙ্কার দিয়ে উঠলো। আঘাতটা সামলাতে বেশ কিছুক্ষণ লাগলো কুয়াশার। গোগীর দিকে তাকিয়ে আস্তে গলায় বললো, কোয়ায়েট গোগী।
গোগীর গর্জন থেমে গেল। সে বোবা দৃষ্টি মেলে প্রভুর দিকে তাকিয়ে রইলো। কুয়াশা বুঝলো, আর কিছু নয়, গোগী বিচলিত হয়েছে তার আর্তনাদ শুনে। সপ্তম প্রাচীরে পা দিতে গিয়ে ডান দিকে ঘুরেছিল কুয়াশা। অমনি প্রবল এক বিষনিঃশ্বাসের ঝাঁপটা এসে লাগলো তার চোখে মুখে। মুহূর্তে মনে হয়েছিল তার মৃত্যু হচ্ছে। দম টানতে পারছে না। আমি মরছি এই ভাবনার ভেতর প্রবল এক প্রতিরোধকারী শক্তির প্রতিক্রিয়া থাকে। সেই শক্তির বলেই হয়তো সে ছিটকে পেছনে সরে আসতে পেরেছিল। নতুবা তার প্রাণহীন দেহ পিরামিডের পাথরে এতক্ষণ নিশ্চল পড়ে থাকতো। এক সময় প্রাণায়ামের অভ্যাস ছিলো কুয়াশার। সেই অভ্যাসের বলে সে অচিরে বিষ কষ্ট থেকে নিঃশ্বাস মুক্ত করলো। ডিটেক্টর যন্ত্রটি বন্ধ করে সে একটি পাথরে আসন নিয়ে বিশ্রাম করতে লাগলো।
মনে পড়লো দীবার কথা। সে যখন বেরিয়ে আসে তখন দীবা দাঁড়িয়েছিল কেবিনের বারান্দায়। ঢিলে কোর্তা ও পাজামা পরনে, পিঙ্গল কেশরাশি পিঠে ছড়ানো। বিষণ্ণ ও নিশ্চল দীবাকে অন্ধকারে মোমবাতির শিখার মতো সুন্দর ও আরক্তিম দেখাচ্ছিল। সে দীবাকে শুভ প্রভাত জানিয়েছিল। দীবা বলেছিল, তুমি আমাকে সঙ্গে নেবে?
বলো কি?
কুয়াশা একটু হেসেছিল, আমি যাবো মাটির নিচে কবর খুঁড়তে। সেখানে গিয়ে তুমি কি করবে?
না, আমি যাবে। আমি নানাভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারবো।
না, তুমি এখানেই থাকো।
কুয়াশা হেসে বলেছিল, তুমি চিন্তা করো না। তোমার মামলা প্রায় খতম করে এনেছি। মুজাদ্দিদ করীমের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথাবার্তাও হয়েছে।
দীবা সাগ্রহে কথাগুলো শুনলো। হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল, এইবার সোজা হলো। বললো, সত্যি?
কুয়াশা একটু হেসেছিল। বলেছিল, আমি চলি
দীবা পুনর্বার অধীর হয়ে উঠেছিল। বলেছিল, তুমি যেখানে যাচ্ছো, সে জায়গা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই কুয়াশা। আমার কথা রাখো, আমাকে সঙ্গে নাও।
কুয়াশা বিরক্ত হয়েছিল। বলেছিল, তুমি এখানেই থাকবে। চলি, অনেক দেরি হয়ে গেল! ..
দীবা আসতে চেয়েছিল, দীবাকে সে আনেনি।
আনা সঙ্গত হতো না তাই আনেনি। কিন্তু দীবা ঠিক কথাই বলেছিল। এই পিরামিডের সপ্তম প্রাচীর সম্পর্কে তার প্রায় কোনো ধারণাই নেই।
হঠাৎ গোগী হুঙ্কার দিয়ে উঠলো। সবিস্ময়ে তার দিকে তাকালে কুয়াশা। দেখলো, গোগী পেছনের দিকে তাকিয়ে আছে আর অনবরত ক্রুদ্ধ নিঃশ্বাস ছাড়ছে।
কুয়াশা জানে ইতর জন্তুর ঘ্রাণ ও শ্রবণ শক্তি মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষতঃ গোগীর এই ব্যাপারে কখনো ভুল হয় না। ব্যাপার কি দেখার জন্যে সে উঠে দাঁড়ালো। মনে পড়লো পদশব্দ শোনার কথা। দেয়ালের সাথে মিশে যাওয়া ছায়ামূর্তির কথা। সে এগিয়ে গেল। সতর্ক পায়ে এদিক ওদিক খুঁজলো। অপেক্ষা করলো। না, কোথাও কেউ নেই।
সে দৃষ্টি দিয়ে আদর করলো গোগীকে। তার একমাত্র বন্ধু। আফ্রিকার লিম্পোপো নদীর সহস্র কুমীর তাকে আক্রমণ করেছিল। আত্মরক্ষা সে করতে পেরেছিল ঠিকই। কিন্তু গহিন অরণ্যে বিপদ আপদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছিল তাকে একাকী। সেইসব অসহায় দিনে গোগী তাকে বাঁচিয়েছিল। এখন পর্যন্ত তীব্র ইচ্ছাশক্তির প্রভাবে গোগীকে বশে রাখতে হয় বটে, কিন্তু এতদিনে গোগী তার জীবনের সঙ্গে মিশে একাত্ম হয়ে গেছে। তার দুঃখে গোগী দুঃখ পায়। তার আনন্দে গোগীর জান্তব চোখে অবোধ বন্য খুশি ফুটে ওঠে।
সে গোগীকে আদর জানালো। গোগীর গলায় খুশির ঘড়র-ঘড় শব্দ বেরোতে লাগলো। খুব সমঝদারের মতো সে ডাইনে বাঁয়ে মাথা দোলাতে লাগলো। কুয়াশা বুঝলো গোগী তার আদরটুকু গ্রহণ করেছে।
বিশ্রামের মুহূর্ত শেষ। এইবার এগিয়ে যাওয়ার পালা। কুয়াশা উঠে দাঁড়ালো। সম্ভবতঃ ভুল তারই। নক্সায় চিহ্নিত পথটির অবস্থান বাঁদিকে। ডানদিকে এগিয়েছিল বলেই হয়তো এই বিভ্রাট। দেখা যাক। বাঁদিকে পা বাড়ালো সে। তীব্র টর্চের আলো ফেলে দেখলো। না, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অন্যান্য প্রাচীর পথের মতোই স্বাভাবিক পথ। তবে অন্যগুলোর তুলনায় সঙ্কীর্ণ। সতর্ক পায়ে সে এগিয়ে চললো। এক জায়গায় টর্চের আলো পড়তেই সে চমকে উঠলো। একটা নরকঙ্কাল দেয়ালের সঙ্গে মিশে আছে। সে স্থির হয়ে দীড়িয়ে রইলো একমিনিট। তারপর দেয়ালের গা ধরে যেই এগোতে গেল সামনে অমনি পেছনে তীক্ষ্ণ সতর্কবাণী শোনা গেল ওয়াচ আউট! কুয়াশা লাফিয়ে পেছনে হটে এলো। মুহূর্তে দেয়াল থেকে দুটি পাথরের হাত বেরিয়ে এসে, আবার আলিঙ্গনের ভঙ্গিতে দেয়ালে মিশে গেল।