সে তো দুদিন ধরেই অপেক্ষা করছিলে, ভয় কেন?
না, ভয়ের কি আছে?
কুৎসিত লোকটি একটু হাসলো। বললো, কোরবান আলী শুধু ভয় কর ওস্তাদকে। ব্যস, আর কাউকে না।
যা বলেছিলাম তা করেছো?
জরুরী।
তাহলে সবাইকে ওয়ার্নিং দিয়ে সরে যেতে বলো।
বেশক।
শোনো কোরবান।
ওস্তাদ নামধারী হাসলো, হারামজাদাকে একটু শিক্ষা দিয়ে যেতে চাই। ওরা সবাই যাক। তুমি যেয়ো না আমার সঙ্গে থাকো…
কিন্তু।
বলে বোধহয় ইতস্ততঃ করছিল কোরবান। আর সাহস পেলো না। নিঃশব্দে সেলাম জানিয়ে আদেশ পালন করবার জন্যে সে কক্ষান্তরে চলে গেল।
ততক্ষণে হত্নাকারী দলটা বাড়ির সর্বত্র ঢুকে পড়েছে। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ভাবে ওরা নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে বাড়িটা ঘেরাও করে রইলো। প্রত্যেকের হাতে রিভলভার। এর ভেতর কখন যেন পূর্ব বর্ণিত দুজন বৃদ্ধ ইহুদী ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছেন। তারা কাল ব্যয় না করে দ্রুত পায়ে উপরে উঠলেন। প্রতি মুহূর্তে নেসার আহমেদের দলের লোকদের আক্রমণের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। কিন্তু আশ্চর্য এক নারবতা বিরাজ করছে।বাড়িটিতে। তবে কি এতদিনকার অনুসন্ধান ভুল পথে চলেছিল? তাই বা কি করে হয়?
হঠাৎ জানালা পথে এক যুবকের মুখ দেখা গেল। যুবকটি অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে বললো, একজন ভদ্রলোকের বাড়িতে এভাবে চড়াও হওয়ার কি অর্থ জানতে পারি জনাব?
অতি শীঘ্র তা জানতে পারবেন। প্রথমোক্ত বৃদ্ধ ইহুদী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দিলেন। তাঁর বুকের রক্ত উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছিল। আর কোনো সন্দেহ। নেই, এটি সঠিক আচ্ছা। স্বয়ং নেসার আহমেদ ভদ্র যুবকের ছদ্মবেশে কথা বলছে।
অ্যাভাস। প্রথমোক্ত ইহুদী নিচের দলকে আদেশ দিলেন। হাতে উদ্যত রিভলভার। যুবকটির দিকে তাকিয়ে বললেন, একটুও নড়াচড়ার চেষ্টা করো না নেসার। মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো।
বলেন কি সায়েব। নেসার যেন মাথার খুলি উড়ে যাবার ভাবনায় চম্কে উঠলো। তারপর হাসতে হাসতে বললো, মি সিম্পসন, আপনি একটা তৃতীয় শ্রেণীর গাধা?
দাঁতে দাঁত ঘষতে ঘষতে ইহুদীবেশী মি. সিম্পসন বললেন, আমি কি সেটা এক্ষুণি জানতে পারবে বাছাধন।
মি. সিম্পসন ও তাঁর সঙ্গীর রিভলভারের রেঞ্জের ভেতর অনায়াস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো নেসার। তার মুখে মৃদু মৃদু হাসি। বললো, আহা, টিকটিকি সাহেব, রাগ করছো কেন? আমাকে ধরেছে, না হয় আমি তোমার বন্দী। কিন্তু দুটো রসালাপও করতে দেবে না, তুমি লোকটা কি হে?
ইতিমধ্যে নিচের দলটি মি. সিম্পসনের আদেশে উপরে উঠে এসেছে। নেসারকে সর্বক্ষণ রিভলভারের মুখে দাঁড় করিয়ে রেখে মি. সিম্পসন নিজে ঘরের ভেতর ঢুকলেন। না, কেউ নেই। দেয়াল ও থামের ওধারে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখলেন। কোথাও কেউ নেই। দুহাত ওপরে তুলে সহাস্যে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর দ নেসার আহমেদ।
পেছন থেকে দুজন ও সামনে থেকে মি. সিম্পসন এগিয়ে যাচ্ছিলেন নেসার আহমেদের দিকে। নেসার আহমেদ গলা কাশি দিয়ে বললো, যা করার করে ফেলুন। টিকটিকি সাহেব। উর্ধ বাহু হয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না।
মুহূর্তে আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়লেন মি. সিম্পসন ও তার দুজন সঙ্গী। নেসার আহমেদের চোখ মুখ কঠোর হয়ে উঠলো। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হিংস্র গলায় বললো, নিচের সব কটাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দে। এই হারামজাদা থাক। এর ব্যবস্থা পরে হবে।
নেসার আহমেদের সঙ্কেতে দেয়াল দুফীক হয়ে গৰ্তমুখ দেখা গেল। বেরিয়ে এলো কোরবান। হাসিমুখে বললো, যা হুকুম দিয়েছিলেন ওস্তাদ তাই করেছি। মাত্র তিনটে গ্যাস বোম ছুঁড়েছিলাম ওস্তাদ। তাতেই দেখছি শালারা সব হাঁটু ভেঙে পড়ে গেছে।
আর দেরি করো না।
নেসার আহমেদ চিন্তাকীর্ণ গলায় বললো, এক্ষুণি এই আড্ডা পুড়িয়ে দিতে হবে। আমি মিনিট দুয়েকের মধ্যে এক নম্বর আড্ডায় ফিরে যাচ্ছি। তুমি সুড়ঙ্গ পথটা ঠিক রেখে বাকি সব মিসমার করে দিয়ে এসো। সিম্পসনকে পাথর ঘরে পাঠিয়ে দাও। অলরাইট?
ঠিক হ্যায় ওস্তাদ কোরবান সালাম দিয়ে বললো।
দেয়ালের গর্ভমুখ দিয়ে সুড়ঙ্গ পথে সোজা মাটির নিচে নেমে গেল নেসার আহমেদ। সুড়ঙ্গটি গিয়ে পৌঁছেছে গিজেহ এলাকার মরুভূমিতে। এখানে ওখানে অনুচ্চ পাহাড়, টিলা, খেজুর গাছ ও ঝোঁপঝাড়।
কয়েক মিনিট নীরবতা বিরাজ করলো পূর্বোক্ত হানাবাড়িতে। তারপর বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরণে অগ্নৎপাত ঘটতে লাগলো। মুহূর্তে ধোঁয়া ও আর্তনাদের শব্দে আকাশ বাতাস ভরে উঠলো।
সেই আর্তনাদের সঙ্গে তাল রেখেই যেন একটি পিশাচ কণ্ঠ গিজেহ এলাকার মরুভূমির নিচে এক সুরক্ষিত গুপ্তকক্ষে দাঁড়িয়ে প্রবল ভাবে অট্টহাস্য করে উঠলো। সামনে দাঁড়িয়েছিল কোরবান ও মোতিয়া। যুবতী মোতিয়া নেসারের পানপাত্র ভরে দিচ্ছিলো নতমুখে।
নেসার আহমেদ হাসতে হাসতে বললো, তাহলে সব ঠিক আছে কোরবান?
সব ঠিক আছে ওস্তাদ। সিম্পসন কুত্তাটাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাথর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর তিন নম্বর আড়াটা এতক্ষণে বোধহয় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
অল ক্লিয়ার। শোনো কোরবান, আমরা দিন তিনেকের ভেতর এই দেশ ত্যাগ করবো। তুমি যাবার ব্যবস্থা ঠিক করে রাখো। মোতিয়া
মোতিয়া ভীত চোখে নিঃশব্দে পানপাত্র ভরে দিলো। গ্লাসে চুমুক দিয়ে নেসার আহমেদ বললো, আজ সারাদিন আমি বিশ্রাম করবো। রাত্রি বেলা শুরু করবো কাজ। আমার সঙ্গে তুমি ছাড়া থাকবে কালু আর মদন।