করুণ একটু হাসি ফুটল তুয়ার মুখে। বুঝেছি, সে বলল।
ঠিক সেই সময় নারী কণ্ঠের কথাবার্তা ভেসে এল কানে। তুয়াহু আমার হাত স্পর্শ করে বলল, ওই যে, ও আসছে, বিয়্যাম।
দীর্ঘাঙ্গিনী এক তরুণীকে দেখলাম। পেছনে ভূত্যস্থানীয় এক মহিলা। ছোট্ট একটা বাচ্চার হাত ধরে এগিয়ে আসছে তরুণী। কাঁধ থেকে নেমে এসেছে তুষার শুভ্র কুঁচি দেয়া ইন্ডিয়ান ধাচের ঝুল পোশাক। গলায় সোনার হার-তেহানিকে আমি যেটা দিয়েছিলাম।
তেহানি, আমার পাশ থেকে ডাকল তুয়াহু। মেয়েটা মুখ তুলল। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এল আমার। সাগরের মত গাঢ় নীল চোখ! মৃত মায়ের রূপ পুরোটাই সে পেয়েছে। সেই সাথে পেয়েছে আমার মায়ের সৌন্দর্যের খানিকটা। মাতাভাই-এর সেই ইংরেজ ক্যাপ্টেন, বলল তুয়াহু।
করমর্দনের জন্যে হাত বাড়িয়ে দিল মেয়েটা। আমার নাতনী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখ ঝাপসা হয়ে এল আমার। তাড়াতাড়ি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম অন্য দিকে। আমার চোখের জল ওদের দেখতে দিতে চাই না।
এবার যাই আমরা, মামাকে বলল তেহানি। মেয়েকে কথা দিয়েছিলাম, নানার দেশের নৌকা দেখাব।
আচ্ছা, যা, জবাব দিল তুয়াহু।
জাহাজে ফেরার জন্যে যখন পানসিতে উঠলাম তখন রাত হয়ে গেছে। উজ্জ্বল চাঁদ উঠে এসেছে মাথার ওপর। উপত্যকার গভীর থেকে ঠাণ্ডা বাতাস আসছে অনেক মানুষের ফিসফিসানির মত শব্দ তুলে। হঠাৎ আমার মনে হলো, প্রেতাত্মার দল ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে-জীবিত এবং মৃত মানুষের ছায়ার মত-আমার নিজের ছায়াও আছে তাদের ভেতর।
***