ক্যাপ্টেন ব্লাইসহ মোট কতজন উঠেছিল লঞ্চে?
উনিশ জন।
লঞ্চের কিনারা পানির কতখানি উপরে ছিল।
খুব বেশি হলে আট ইঞ্চি।
লঞ্চে কি আরও লোক উঠতে পারত।
না। উঠলে, আমার মনে হয় যার আগেই উঠে পড়েছিল তাদের প্রাণ বিপন্ন হত।
বিদ্রোহের সময়টাতে একবারও আমার হাতে অস্ত্র দেখেছেন?
না।
বিদ্রোহের সময় ক্যাপ্টেন ব্লাই একবারও আমার সাথে কথা বলেছিলেন?
আমার জানা মতে না।
বিদ্রোহের সময় মিস্টার হেওয়ার্ডকে একবারও ডেকের ওপর দেখেছিলেন?
হ্যাঁ, বেশ কবার।
কি অবস্থায় ছিল ও স্বাভাবিক, আতঙ্কিত নাকি দ্বিধাগ্রস্ত?
দ্বিধাগ্রস্ত তো বটেই, খানিকটা আতঙ্কিতও ছিল ও। জোর করে যখন লঞ্চে নামিয়ে দেয়া হয় তখন তো কেঁদেই ফেলেছিল।
সেই সকালে মিস্টার হ্যালেটকে দেখেছিলেন একবারও
হ্যাঁ, বেশ কয়েক বার।
কি অবস্থায় ছিল ও?
হেওয়ার্ডের মত ভয়ে তটস্থ হয়ে ছিল। ও-ও কেঁদে ফেলেছিল লঞ্চে নামিয়ে দেয়ার সময়।
সাধারণ ভাবে বাউন্টিতে থাকাকালীন আমার আচরণ কেমন ছিল?
চমৎকার! সবাই ওকে খুব পছন্দ করত।
এর পর আদালত প্রশ্ন করল, লঞ্চে টিমোরে যাওয়ার পথে বিদ্রোহের কথা কি প্রায়ই আলাপ করতে তোমরা?
না। সে সময় প্রাণ বাঁচাতেই এত বেশি ব্যস্ত থাকতে হত যে এসব কথা আলাপ করার সময়ই আমরা পেতাম না।
বিদ্রোহের আগের রাতে আসামী বিয়্যামের সাথে একটা বিশেষ ব্যাপারে আলাপ করেছিল ক্রিশ্চিয়ান। সেই আলাপের শেষটা শুনতে পেয়েছিল ব্লাই। এ সম্পর্কে ক্যাপ্টেন ব্লাই কখনও কিছু বলেনি তোমাদের?
বলেছে বলে মনে পড়ছে না।
আসামী বিয়্যাম সম্পর্কেকখনও কিছু বলতে শুনেছ ওকে।
হ্যাঁ, একাধিকবার।
কি বলেছিল মনে করতে পারো?
বিদ্রোহের দিনই, জাহাজ থেকে লঞ্চটা যখন দূরে সরে এসেছে, তখন তাঁকে মিস্টার বিয়্যাম সম্পর্কে এই কথাগুলো বলতে শুনেছিলাম: ও একটা অকৃতজ্ঞ বদমাশ। ক্রিশ্চিয়ানের চেয়ে কোন অংশে কম না। পরেও বেশ কয়েকবার একথা বলতে শুনেছি ওকে।
লঞ্চের কেউ বিয়্যামের সপক্ষে কিছু বলেনি?
স্যা, অন্যরা তো বলেছে, আমি নিজেও বলেছি। কিন্তু প্রতিবারই ক্যাপ্টেন ব্লাই ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছেন আমাদের।
ক্রিশ্চিয়ান আর বিয়্যামের ভেতর একটা বিশেষ আলাপ সম্পর্কে টিঙ্কলারকে কখনও কিছু বলতে শুনেছ?
না, তেমন কিছু আমার মনে পড়ছে না।
রবার্ট টিঙ্কলার কখনও বিয়্যামের সপক্ষে কিছু বলেছে ব্লাইকে?
হ্যাঁ। আমার মত ও-ও বিশ্বাস করত না, বিয়্যাম বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ছিল।
রবার্ট টিঙ্কলার তোমার শ্যালক।
হ্যাঁ।
ও সাগরে নিখোঁজ হয়েছে?
হ্যাঁ, সেরকম খবরই আমি পেয়েছি।
তোমার সঙ্গে ক্যাপ্টেন ব্লাইয়ের সম্পর্ক কেমন ছিল?–ঘনিষ্ঠ?
না। বরং উল্টোটাই বলা যেতে পারে।
এর পর ডাকা হলো কোলকে। ফ্রায়ারকে আমি যে প্রশ্নগুলো করেছিলাম ওকেও সেগুলোই করলাম। ফ্রায়ারের মত একই জবাব দিল সে-ও। আদালতের প্রশ্নগুলোও প্রায় একই হলো, জবাবও এল এক।
এর পর কাঠগড়ায় উঠল পেকওভার। আমি প্রশ্ন করে নতুন কিছু বের করতে পারলাম না ওর কাছ থেকে। আদালত জেরা শুরু করল এর পর।
বিদ্রোহের আগের রাতে ডেকের ওপর দায়িত্ব পালন করছিলে তুমি?
হ্যাঁ।
সে সময় কোয়ার্টার মাস্টারদের একজন জন নর্টনের সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছিল একবারও?
প্রশ্নটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলাম আমি। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটার কথা একবারও মনে পড়েনি-না আমার না মিস্টার গ্রাহামের। নর্টনকে যদি কেউ সেরাতে ভেলা বানাতে দেখে থাকে আমার বক্তব্যের সপক্ষে, খুব জোরাল না হলেও, একটা প্রমাণ অন্তত পাওয়া যায়।
হ্যাঁ, হয়েছিল, জবাব দিল পেকওভার। রাত তখন প্রায় দুটো।
কেন দেখা হলো? ওর তো তখন ঘুমিয়ে থাকার কথা।
চরকিকলের কাছে হাতুড়ির শব্দ শুনে আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম ব্যাপার কি দেখতে। অন্ধকারে ভাল দেখতে পাইনি, কিন্তু বুঝতে পারি, কিছু একটা বানাচ্ছে নর্টন। কি, জিজ্ঞেস করায় ও জবাব দিয়েছিল, মুরগির খাঁচা মেরামত করছে।
সত্যিই মুরগির খাঁচা মেরামত করছিল কিনা তুমি জানো।
না। প্রথমত অন্ধকার ছিল, বিশেষ কিছু দেখতে পারিলাম না। তাছাড়া আমার মনে কোন সন্দেহ জাগেনি, সত্যিই ও মুরগির বাঁচা মেরামত করছে না অন্য কিছু করছে।
কেন সন্দেহ জাগল না? এ ধরনের কাজ ছুতোর মিস্ত্রী বা তার সহকারীদের করার কথা না?
হ্যাঁ, তবে আমাদের বাউন্টিতে সূতোর মিস্ত্রীদের কাজের চাপ বাড়লে নর্টন প্রায়ই তাদের সাহায্য করত। সে কারণে আমার মনে কোন সন্দেহ জাগেনি।
তোমার কি মনে হয় ছোটখাট কোন ভেলা তৈরি করছিল কোয়ার্টার মাষ্টার?
হতে পারে। আমি ঠিক জানি না।
এর পর হেওয়ার্ডকে ডাকা হলো সাক্ষীর কাঠগড়ায়। কিন্তু আমার কোন প্রশ্নের জবাবেই ও স্বীকার করল না, বিদ্রোহের আগের রাতে টিঙ্কলার আর আমি এক সাথে নিচে নেমে বার্থে ঢুকেছিলাম।
হ্যালেটও ওর বক্তব্যে অটল রইল: বিদ্রোহের সময় একবার নাকি ব্লাইয়ের কথার উত্তরে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম।
আমার মামলার সওয়াল জবাব শেষ হলো। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে এর পর ডাকা হলো মরিসনকে।
.
উনিশ
সেপ্টেম্বর আঠারো। মঙ্গলবার।
আজ রায় হবে বিচারের।
যথারীতি কাঁটায় কাঁটায় নটায় আদালত বসল। মাস্টার অ্যাট-আর্মস ডাকল, রজার বিয়্যাম!