এর পর ডাকা হলো ছুতোর মিস্ত্রী পার্সেলকে। জবানবন্দী শেষে আদালত তাকে প্রশ্ন করল:
জবানবন্দীর এক পর্যায়ে তুমি বলেছ, মিস্টার রিয়্যামকে তুমি বলেছিলে যেন কাটারের বদলে লঞ্চটা দেয়ার অনুরোধ করে ক্রিশ্চিয়ানকে। কেন? কেন বিয়্যামকে বলেছিলে? ওকে বিদ্রোহীদের একজন ভেবেছিলে তাই
না। আমি ওকে ক্রিশ্চিয়ানের বন্ধু বলে জানতাম, তাছাড়া ক্রিশ্চিয়ান আমাকে অপছন্দ করত, তাই আমার কথা শুনবে না মনে করে আমি বিয়্যামকে বলেছিলাম অনুরোধ করতে।
তোমার কি মনে হয় বিয়্যামের অনুরোধেই ক্রিশ্চিয়ান কাটারের বদলে লঞ্চ নামানোর নির্দেশ দিয়েছিল?
হ্যাঁ। সেদিন যদি লঞ্চটা না দেয়া হত; আমরা কেউই বোধহয় আর ইংল্যান্ডের মুখ দেখতে পেতাম না।
বিয়্যাম ছাড়া আর কারও নাম বলতে পারো, যার সাথে ক্রিশ্চিয়ানের বন্ধুত্ব ছিল?
হ্যাঁ। মিস্টার স্টুয়ার্ট। আর কারও নাম এ মুহূর্তে আমার মনে আসছে না।
তোমার কি মনে হয়, ঘনিষ্ঠতম বন্ধু বিয়ামের কাছেও বিদ্রোহের পরিকল্পনার কথা গোপন রেখেছিল ক্রিশ্চিয়ান, এটা সম্ভব?
একটু যেন ফাঁপরে পড়ল পার্সেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ধীরে ধীরে বলল, সম্ভব। ক্রিশ্চিয়ানকে যতদূর জানি বন্ধুকে বিপদে ফেলার লোক ও নয়। ও নিশ্চয়ই জানত, যে কোন পরিস্থিতিতেই মিস্টার বিয়াম ক্যাপ্টেনের অনুগত থাকবে।
আদালত এর পর প্রশ্ন করল, লঞ্চটাকে যখন জাহাজের পেছন দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় তখন বিয়্যাম কোথায় ছিল?
আমি জানি না। এর মাত্র কয়েক মিনিট আগে আমি ওকে ডেকে, দেখেছিলাম, তখন ও আমাকে বলেছিল, ও ক্যাপ্টেন ব্লাইয়ের সাথে যাবে। আমার মনে হয় ও সে সময় কাপড় চোপড় আনার জন্যে নিচে মিডশিপম্যানদের বার্ধে গিয়েছিল।
ওই সময় তুমি মরিসনকে দেখেছিলে?
না।
তোমার কি মনে হয়, ওরা লঞ্চে যেতে হবে এই ভয়ে নিচে পালিয়েছিল?
্না, আমার তা মনে হয় না। নিশ্চয়ই ওদের বাধা দেয়া হয়েছিল ওপরে আসতে, আর সে জন্যে সময় মত এসে লঞ্চে উঠতে পারেনি দুজনের একজনও।
এরপর আসামীদের প্রশ্নের পালা।
শেষ জন যখন লঞ্চে ওঠে, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তখন লঞ্চটা কতখানি পানির ওপরে ছিল?।
খুব বেশি হলে সাড়ে সাত ইঞ্চি।
আপনার কি মনে হয় সবার জীবন বিপন্ন না করে আর কারও পক্ষে ওতে ওঠা সম্ভব ছিল?
না, আর একজনকেও নেয়ার ক্ষমতা ছিল না লঞ্চটার। ক্যাপ্টেন ব্লাই নিজে মিনতি করে বলেছিলেন, আর কাউকে যেন না পাঠায় ক্রিশ্চিয়ান।
এরপর সেদিনকার মত মুলতবী হয়ে গেল আদালত।
পরদিন চোদ্দ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, আবার শুরু হলো শুনানি। প্রথমেই জবাবন্দী দিল টমাস হেওয়ার্ড। ওর কাছ থেকে আমার উপকারে আসতে পারে এমন কোন তথ্য বেরোল না। হেওয়ার্ড-এর পর ডাকা হলো হ্যালেটকে। ওর কাছ থেকে আমার সম্পর্কে একটা তথ্যই আদালত জানতে পারল, বিদ্রোহের সময় আমার হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। আমার লঞ্চে ওঠার ইচ্ছা, বা এ ব্যাপারে আমি কাউকে বা কেউ আমাকে কিছু বলেছিল কি না সে সম্পর্কে ও কিছু বলতে পারল না। তবে একটা মিথ্যে কথা বলে ও আমার প্রায় বারোটা বাজিয়ে দিল। বিদ্রোহের সময় আমার সঙ্গে নাকি কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন ক্যাপ্টেন ব্লই, আমি তার কথা না শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে গিয়েছিলাম। এই মিথ্যা কথাটা হ্যালেট কেন যে বলল তা আজও আমি ভেবে পাই না।
এরপর সেদিনকার মত মুলতবী হয়ে গেল আদালত। পরদিন থেকে শুরু হবে আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থন।
.
আঠারো
আসামীদের ভেতর আমি একমাত্র মিডশিপম্যান। তাই আমারই ডাক পড়ার কথা প্রথম। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ শনিবার সকালে মিন্টার গ্রাহামের পরামর্শে আমি আদালতের কাছে সময় চাইলাম সোমবার পর্যন্ত। আদালত আমার আবেদন মঞ্জুর করল।
প্রায় পুরো রোববার দিনটা আমি কাটালাম আমার কৌঁসুলি মিস্টার গ্রাহামের সাথে। অন্য আসামীদের পরামর্শদাতা ক্যাপ্টেন ম্যানলি আর ক্যাপ্টেন বেনথামও এলেন তার সাথে। তিনটে দলে ভাগ হয়ে আমরা ছড়িয়ে পড়লাম হেকটর-এর গানরুমের বিভিন্ন কোণে।
আমার বক্তব্যের একটা খসড়া ইতোমধ্যে আমি তৈরি করে ফেলেছি। মিস্টার গ্রাহামের সহায়তায় এবার সেটা সংশোধন করতে লাগলাম। কিছুকথা বাদ দিয়ে, কিছু কথা জুড়ে নতুন করে তৈরি করা হলো জবানবন্দীটা। এরপর মিস্টার গ্রাহাম বলে দিলেন সাক্ষীদের কাকে কাকে আমি ডাকব এবং কি কি প্রশ্ন করব। হেওয়ার্ড তার জবানীতে বলেছে, বিদ্রোহের আগের রাতে সে জেগে ছিল এবং রাত দেড়টার সময় আমার বার্থে ফেরার আওয়াজ পেয়েছিল।
এই কথাটা খুবই জরুরী তোমার জন্যে, বললেন মিস্টার গ্রাহাম। তুমি বলছ, ওই সময় টিঙ্কলারও তোমার সাথে নিচে গিয়েছিল। তোমরা বিদায় নিয়েছিলে একে অপরের কাছ থেকে
হ্যাঁ, স্যার।
তাহলে হেওয়ার্ড নিশ্চয়ই শুনেছিল তোমাদের কথা। ও যেন কথাটা স্বীকার করে, আমাদের দেখতে হবে। আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি টিঙ্কলার তোমার সাথে ছিল তাহলে স্বাভাবিকভাবে এটাও প্রমাণ হয়ে যাবে ও তোমার আর ক্রিশ্চিয়ানের আলাপ শুনেছিল। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে তুমি ব্লাইয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে-কথাটা কোথায় পেল হ্যালেট। আর কেউ তো এ কথা বলেনি।