যতদূর শুনেছি ও নিরাপদে ইংল্যান্ডে পৌঁছেছে।
হ্যাঁ। কিন্তু কোথায় আছে? এক্ষুণি তাকে খুঁজে বের করা দরকার। বলছিলে, বাউন্টির মাস্টার ফ্রায়ারের শ্যালক ও?
হ্যাঁ, স্যার।
তাহলে বোধহয় ওর খবর আমি বের করতে পারব। অ্যাডমিরালটিতে খোঁজ নিলেই জানা যাবে ফ্রায়ার এখন কোন জাহাজে কাজ করছে। ঠিক আছে,
তুমি চিন্তা কোরো না, আমি দেখছি কদ্দূর কি করা যায়।
কদিন লাগবে, স্যার, বিচার শুরু হতে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ঠিক নেই। ব্যাপারটা অ্যাডমিরালটির ওপর নির্ভর করছে। তবে আমার মনে হয় প্যানডোরার বাকি নাবিকরা পৌঁছে গেলেই শুরু করবে অ্যাডমিরালটি।
চলে গেলেন স্যার জোসেফ। রাতের গাড়িতে লন্ডন ফিরে যাবেন তিনি।
পরদিনই, স্যার জোসেফের সুপারিশে কিনা জানি না, নতুন পোশাক দেয়া হলো আমাদের, যেন দ্র বেশে আদালতের সামনে উপস্থিত হতে পারি। হঠাৎ করে এই অপ্রত্যাশিত সদয় ব্যবহারটুকু পেয়ে আমাদের মনোবল অনেকখানি বেড়ে গেল।
.
দশ দিন পর একটা চিঠি এল স্যার জোসেফের কাছ থেকে। উনি লিখেছেন,
প্রিয় বিয়্যাম,
শুভেচ্ছা নিও। লন্ডনে ফিরে আমি অ্যাডমিরালটি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ফ্রায়ার এখন ওর লন্ডনের বাড়িতে আছে। সামরিক আদালতের সমনের অপেক্ষা করছে। ওর সঙ্গে দেখা করে জানতে পারলাম, টিঙ্কলার ইংল্যান্ডে ফেরার কিছুদিনের ভেতরই ক্যারিব মেইড নামক একটা পশ্চিম ভারতীয় জাহাজে মাস্টারের মেট হিসেবে কাজ পায়।
বছর খানেক আগে প্রথম যাত্রা শেষে দেশে ফিরেছিল টিঙ্কলার। কদিন পরেই রওনা হয়ে গিয়েছিল আবার। মাস তিনেক আগে ফ্রায়ার খবর পেয়েছে, কিউবা দ্বীপের কাছে এক হারিকেনের কবলে পড়ে সবনাবিক সমেত ডুবে গেছে ক্যারিব মেইড।
অস্বীকার করে লাভ নেই, ঘটনাটা তোমার জন্যে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবু, তোমার অবস্থা আমার মনে হয় একেবারে হতাশাব্যঞ্জক নয়। ফ্রায়ারের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়েছে আমার। তোমার সম্পর্কে কোন রকম বিদ্বেষ দেখলাম না ওর মনে। ওর বিশ্বাস বিদ্রোহের ব্যাপারটায় তোমার কোন হাত ছিল না। আদালতের সামনে ও এই সাক্ষ্য দেবে; তাতে তোমার যথেষ্ট
উপকার হবে বুলে আমার ধারণা।
কোল, পার্সেল এবং পেকওভারের সাথেও আমি দেখা করেছি। ওদের সবারই দেখলাম খুব উঁচু ধারণা তোমার সম্পর্কে। পার্সেল বলল, তুমি নিজে নাকি ওকে বলেছিলে ব্লাইয়ের সঙ্গে তুমি লঞ্চে যেতে চাও। বাকি দুজনও বলল, তুমি যে নির্দোষ এ ব্যাপারে তাদের মনে কোন সংশয় নেই।
আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিস্টার গ্রাহামের সঙ্গে আমি দেখা করেছি। ভদ্রলোক নিউফাউন্ডল্যান্ড স্টেশনে বিভিন্ন অ্যাডমিরালের সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। গত বারো বছর। সেই সঙ্গে ওই সময়ের ভেতর যতগুলো সামরিক আদালত বসেছে প্রতিটিতে জাজ অ্যাডভোকেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আইনজীবী হিসেবে অত্যন্ত ভাল উনি সানন্দে তোমার পক্ষে মামলা পরিচালনা, করতে রাজি হয়েছেন।
সুতরাং আমার মনে হয় না ঘাবড়ানোর তেমন কিছু আছে তোমার। শেষ করার আগে একটা কথাই বলব, ভেঙে পোড়ে না। মনোবল অটুট রাখো। শিগগিরই আবার দেখা করব তোমার সাথে।
ইতি
জোসেফ ব্যাঙ্কস।
এই চিঠি পেয়ে আমার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে সহজেই অনুমেয়। স্যার জোসেফ যতই বলুন ঘাবড়ানোর তেমন কিছু নেই, আমি কিন্তু না ঘাবড়ে পারলাম না। ফ্রায়ার, কোল বা পার্সেলের ধারণা বা বিশ্বামে যে রিচারকদের মন গলবে না তা আমি জানি। যাহোক, তবু, মিস্টার গ্রাহামের মত মানুষ আমার উকিল হতে চেয়েছেন জেনে একটু স্বস্তি পেলাম মনে। মরিসন ঠিক করেছে নিজেই লড়বে নিজের হয়ে। কোলম্যান, নরম্যান, ম্যাকইন্টশ আর বায়ার্ন আশা করে ওরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে, তাই নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক অফিসার ক্যাপ্টেন ম্যানলিকে যৌথভাবে উকিল নিয়োগ করেছে ওদের আত্মীয় স্বজনরা। বাকিদের স্বার্থ দেখার জন্যে সরকারের তরফ থেকেই নিযুক্ত করা হয়েছে অ্যাডমিরালটির এক অফিসার ক্যাপ্টেন বেনথামকে।
পরের সপ্তায় এঁদের প্রত্যেকেই একবার করে এলেন আমাদের কাছে। প্রথমে এলেন মিস্টার গ্রাহাম। দীর্ঘ ঋজু শরীর ভদ্রলোকের। বছর পঞ্চাশেক বয়েস। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ। শান্ত, ভরাট কণ্ঠস্বর। গলা শুনেই লোকটার অলর পর্যন্ত যেন টের পাওয়া যায়। প্রথম দর্শনেই আমার মনে হলো যোগ্য লোকের হাতে পড়েছে আমার ভাগ্য। আমরা যারা বিচারাধীন তাদের কেউই সামরিক আদালতের কার্যবিধি সম্পর্কে কিছু জানি না। আমার অনুরোধে সবাইকে ইচ্ছে মত প্রশ্ন করার সুযোগ দিলেন তিনি।
আমি, স্যার, নিজেই আমার মামলা পরিচালনা করব ঠিক করেছি, মরিসন বলল। আইনের যে ধারায় আমাদের বিচার হবে সে ধারায় ঠিক কি বলা হয়েছে আমি জানতে চাই।
তোমাদের বিচার হবে নৌযুদ্ধ আচরণ বিধির ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বললেন মিস্টার গ্রাহাম। এই ধারায় বলা হয়েছে; নৌবহরের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি-সে অফিসার বা নাবিক যা-ই হোক না কেন, যদি কোন কারণে বিদ্রোহ বা বিদ্রোহাত্মক আচরণ করে, সামরিক আদালতে তার বিচার হবে। এবং আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।
অন্য কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেই। আমি প্রশ্ন করলাম।