জানি, স্যার। ডা. হ্যামিলটনের কাছে শুনেছি।
এখন এক জনের সাক্ষ্যের ওপরই তোমার ভাগ্য নির্ভর করছে, সে হলো রবার্ট টিঙ্কলার। কিন্তু কোথায় সে?
যতদূর শুনেছি ও নিরাপদে ইংল্যান্ডে পৌঁছেছে।
হ্যাঁ। কিন্তু কোথায় আছে? এক্ষুণি তাকে খুঁজে বের করা দরকার। বলছিলে, বাউন্টির মাস্টার ফ্রায়ারের শ্যালক ও
হ্যাঁ, স্যার।
তাহলে বোধহয় ওর খবর আমি বের করতে পারব। অ্যাডমিরালটিতে খোঁজ নিলেই জানা যাবে ফ্রায়ার এখন কোন জাহাজে কাজ করছে। ঠিক আছে, তুমি চিন্তা কোরো না, আমি দেখছি কদ্দূর কি করা যায়।
কদিন লাগবে, স্যার, বিচার শুরু হতে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ঠিক নেই। ব্যাপারটা অ্যাডমিরালটির ওপর নির্ভর করছে। তবে আমার মনে হয় প্যানডোরার বাকি নাবিকরা পৌঁছে গেলেই শুরু করবে অ্যাডমিরালটি।
চলে গেলেন স্যার জোসেফ। রাতের গাড়িতে লন্ডন ফিরে যাবেন তিনি।
পরদিনই, স্যার জোসেফের সুপারিশে কিনা জানি না, নতুন পোশাক দেয়া হলো আমাদের, যেন দ্র বেশে আদালতের সামনে উপস্থিত হতে পারি। হঠাৎ করে এই অপ্রত্যাশিত সদয় ব্যবহারটুকু পেয়ে আমাদের মনোবল অনেকখানি বেড়ে গেল।
.
দশ দিন পর একটা চিঠি এল স্যার জোসেফের কাছ থেকে। উনি লিখেছেন,
প্রিয় বিয়্যাম,
শুভেচ্ছা নিও। লন্ডনে ফিরে আমি অ্যাডমিরালটি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ফ্রায়ার এখন ওর লন্ডনের বাড়িতে আছে। সামরিক আদালতের সমনের অপেক্ষা করছে। ওর সঙ্গে দেখা করে জানতে পারলাম, টিঙ্কলার ইংল্যান্ডে ফেরার কিছুদিনের ভেতরই ক্যারিব মেইড নামক একটা পশ্চিম ভারতীয় জাহাজে মাস্টারের মেট হিসেবে কাজ পায়।
বছর খানেক আগে প্রথম যাত্রা শেষে দেশে ফিরেছিল টিঙ্কলার। কদিন পরেই রওনা হয়ে গিয়েছিল আবার। মাস তিনেক আগে ফ্রায়ার খবর পেয়েছে, কিউবা দ্বীপের কাছে এক হারিকেনের কবলে পড়ে সবনাবিক সমেত ডুবে গেছে ক্যারিব মেইড।
অস্বীকার করে লাভ নেই, ঘটনাটা তোমার জন্যে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবু, তোমার অবস্থা আমার মনে হয় একেবারে হতাশাব্যঞ্জক নয়। ফ্রায়ারের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়েছে আমার। তোমার সম্পর্কে কোন রকম বিদ্বেষ দেখলাম না ওর মনে। ওর বিশ্বাস বিদ্রোহের ব্যাপারটায় তোমার কোন হাত ছিল না। আদালতের সামনে ও এই সাক্ষ্য দেবে; তাতে তোমার যথেষ্ট উপকার হবে বলে আমার ধারণা।
কোল, পার্সেল এবং পেকওভারের সাথেও আমি দেখা করেছি। ওদের সবারই দেখলাম খুব উঁচু ধারণা তোমার সম্পর্কে। পার্সেল বলল, তুমি নিজে নাকি ওকে বলেছিলে ব্লাইয়ের সঙ্গে তুমি লঞ্চে যেতে চাও। বাকি দুজনও বলল, তুমি যে নির্দোষ এ ব্যাপারে তাদের মনে কোন সংশয় নেই।
আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিস্টার গ্রাহামের সঙ্গে আমি দেখা করেছি। ভদ্রলোক নিউফাউন্ডল্যান্ড স্টেশনে বিভিন্ন অ্যাডমিরালের সচিব হিসেবে কাজ করেছেন গত বারো বছর। সেই সঙ্গে ওই সময়ের ভেতর যতগুলো সামরিক আদালত বসেছে প্রতিটিতে জাজ অ্যাডভোকেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আইনজীবী হিসেবে অত্যন্ত ভাল। উনি সানন্দে তোমার পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে রাজি হয়েছেন।
সুতরাং আমার মনে হয় না ঘাবড়ানোর তেমন কিছু আছে তোমার। শেষ করার আগে একটা কথাই বলব, ভেঙে পোড় না। মনোবল অটুট রাখো। শিগগিরই আবার দেখা করব তোমার সাথে।
ইতি
জোসেফ ব্যাঙ্কস।
.
এই চিঠি পেয়ে আমার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে সহজেই অনুমেয়। স্যার জোসেফ যতই বলুন ঘাবড়ানোর তেমন কিছু নেই, আমি কিন্তু না ঘাবড়ে পারলাম না। ফ্রায়ার, কোল বা পার্সেলের ধারণা বা বিশ্বাসে যে বিচারকদের মন গলবে না তা আমি জানি। যাহোক, তবু, মিস্টার গ্রাহামের মত মানুষ আমার উকিল হতে চেয়েছেন জেনে একটু স্বস্তি পেলাম মনে। মরিসন ঠিক করেছে নিজেই লড়বে নিজের হয়ে। কোলম্যান, নরম্যান, ম্যাকইন্টশ আর বায়ার্ন আশা করে ওরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে, তাই নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক অফিসার ক্যাপ্টেন ম্যানলিকে যৌথভাবে উকিল নিয়োগ করেছে ওদের আত্মীয় স্বজনরা। বাকিদের স্বার্থ দেখার জন্যে সরকারের তরফ থেকেই নিযুক্ত করা হয়েছে অ্যাডমিরালটির এক অফিসার ক্যাপ্টেন বেনথামকে।
পরের সপ্তায় এদের প্রত্যেকেই একবার করে এলেন আমাদের কাছে।
উনি বললেন, দেখ, ও নিয়ে আর ভেবে লাভ নেই। যতই ভাবো না কেন, তোমার বিচার শুরু হওয়ার আগে দেশে ফিরছে না ব্লাই। তোমার কাহিনী শোনাও, বুঝে দেখি কি ভাবে তোমাকে সাহায্য করা যায়।
ডা. হ্যামিলটনকে যেমন শুনিয়েছিলাম স্যার জোসেফকেও শোনালাম। আমাদের রওনা হওয়ার পর থেকে ধরা পড়া পর্যন্ত সব। শুনে কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে রইলেন স্যার জোসেফ ব্যাঙ্কস।
বিয়্যাম, বাস্তব বাস্তবই, অবশেষে তিনি বললেন, যত কঠোরই হোক না কেন বুকে সাহস নিয়ে তার মুখোমুখি হওয়া ভাল। মহাবিপদে পড়ে গেছ তুমি। ব্লাইয়ের সাথে তুমি লঞ্চে যেতে চেয়েছিলে কথাটা যে জানত সেই মিস্টার লেনসন মারা গেছে; বিদ্রোহের আগের রাতে ক্রিশ্চিয়ান পালাতে চেয়েছিল, তুমি ছাড়া আর যে জানত সেই নটনও মারা গেছে।
জানি, স্যার। ডা. হ্যামিলটনের কাছে শুনেছি।
এখন এক জনের সাক্ষ্যের ওপরই তোমার ভাগ্য নির্ভর করছে, সে হলো রবার্ট টিঙ্কলার। কিন্তু কোথায় সে?