- সূরার নাম: সূরা ত্বীন
- বিভাগসমূহ: ইসলামিক বই, কোরআন শরীফ
সূরা ত্বীন
আয়াতঃ 095.001
শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের,
By the fig, and the olive,
وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ
Waaltteeni waalzzaytooni
YUSUFALI: By the Fig and the Olive,
PICKTHAL: By the fig and the olive,
SHAKIR: I swear by the fig and the olive,
KHALIFA: By the fig and the olive.
=============
সূরা ত্বীন বা ডুমুর – ৯৫
৮ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এটিও একটি প্রাথমিক সূরা। এই সূরায় পবিত্র প্রতীকের সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানুষকে সুন্দরতম গঠনে গঠন করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ যদি সৎ ও পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন না করে ও ঈমান না আনে তবে সে হীনতাগ্রস্থদের মধ্যেও হীনতমতে পরিণত হবে। বিষয়বস্তুর দিক থেকে এই সূরাটি ১০৩ নং সূরার ন্যায়।
সূরা তীন বা ডুমুর – ৯৫
৮ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। শপথ, ডুমুর ৬১৯৪, ও জলপাই এর ৬১৯৫,
৬১৯৪। আয়াতে [ ৪ – ৮ ] শপথের বিষয়বস্তুকে তুলে ধরা হয়েছে, আর শপথ করা হয়েছে পবিত্র চারটি বস্তুর উল্লেখের মাধ্যমে। এগুলি হলো, ‘তীন’ বা ডুমুর, যয়তুন বা জলপাই, সিনাই পর্বত ও মক্কা নগরীর। প্রথম দুটি বস্তু বিশেষ ভাবে প্রথমটি সম্বন্ধে মতভেদ আছে। প্রথমটি অর্থাৎ ‘তীন’ কে যদি ডুমুর ফল হিসেবে গ্রহণ করা হয় তবে এটা মানুষের কর্মফলের পরিণতির এক জ্বলন্ত প্রতীক হতে পারে। পাশ্চাত্যের বহু দেশে ডুমুরের চাষ করা হয়। সেখানে ডুমুর উৎপন্ন হয় অত্যন্ত সুস্বাদু, উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে। কিন্তু আমাদের দেশে বিনা চাষে বনে বাদারে যে সব ডুমুর জন্মে সে ডুমুর অখাদ্য। সে ডুমুরের ভিতরে বীজ ও কীটপতঙ্গে ভর্তি থাকে ও ডুমুরটি হয় স্বাদহীন, নীরস। ঠিক সেরূপ হচ্ছে আল্লাহ্র সৃষ্টি মানুষ। উন্নত চারিত্রিক মাধুর্যে মানুষ দেবত্বে উন্নত হতে পারে, আবার পাপে নিমগ্ন হয়ে একই মানুষ পশুরও অধম হতে পারে।
৬১৯৫। পবিত্র ‘যয়তুন’ বা জলপাই এর শপথের জন্য দেখুন [ ২৩ : ২০ ] আয়াতের টিকা ২৮৮০ এবং [ ২৪ : ৩৫ ] এর টিকা ৩০০০ ও ৩০০২। যেখানে আল্লাহ্র স্বর্গীয় আলোর উপস্থাপনার সময়ে জলপাই এর উল্লেখ করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে পাশ্চাত্য ও মধ্য প্রাচ্যে জলপাই একটি অত্যন্ত মূল্যবান কৃষিজাত দ্রব্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ সব দেশে জলপাই এর চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ‘ যায়তুন’ বা জলপাই দ্বারা জেরুজালেম নগরীর বাইরের দেয়ালকে বুঝানো হতে পারে। দেখুন [ ৫২ : ২ ] আয়াতের টিকা ৫০৩৮। যীশু খৃষ্টের বর্ণনা মতে [Matt x xiv . 3- 4] শেষ বিচারের ছবি এখানে অঙ্কিত আছে।
আয়াতঃ 095.002
এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের,
By Mount Sinai,
وَطُورِ سِينِينَ
Watoori seeneena
YUSUFALI: And the Mount of Sinai,
PICKTHAL: By Mount Sinai,
SHAKIR: And mount Sinai,
KHALIFA: Mount Sinai.
২। এবং সিনাই পর্বতের ৬১৯৬,
৬১৯৬। এই সেই পর্বত যে পর্বতে হযরত মুসাকে আল্লাহ্ বিধান দান করেন। দেখুন সূরা [ ১৯ : ৫২ ] আয়াত ও টিকা ২৫০৪। এখানেই আল্লাহ্ তাঁর বিধান সমূহ হযরত মুসাকে দান করেন ও আল্লাহ্র মহিমা দর্শন করান। কিন্তু ইহুদীরা কি সেই আইন বিশ্বস্ততার সাথে মেনে চলে ?
আয়াতঃ 095.003
এবং এই নিরাপদ নগরীর।
And by this city of security (Makkah) ,
وَهَذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ
Wahatha albaladi al-ameeni
YUSUFALI: And this City of security,-
PICKTHAL: And by this land made safe;
SHAKIR: And this city made secure,
KHALIFA: And this honored town (Mecca).
৩। নিরাপত্তার শহরের ৬১৯৭, ৬১৯৮
৬১৯৭। ‘নিরাপদ নগরী’ দ্বারা অবশ্যই মক্কা নগরীকে বুঝানো হয়েছে। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে পৌত্তলিক আরবদের সময়েও মক্কা নগরী ছিল নিরাপদ নগরী। এখানে যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু সেই নগরীই, তার সকল পূর্ব ঐতিহ্য সত্বেও মহানবীকে অত্যাচার ও নির্যাতনের মাধ্যমে নগর ত্যাগে বাধ্য করে এবং পৌত্তলিকতার পাপে নগরীর পবিত্রতা নষ্ট করে। এ ভাবেই ‘নিরাপদ নগরী ‘ শপথ করা হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্যকে অনুধাবন করার জন্য।
৬১৯৮। এই চারটি পবিত্র শপথকে সামগ্রিক ভাবে বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে এগুলির মাধ্যমে আল্লাহ্ প্রত্যাদেশের আলোর প্রতি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ মানুষকে সর্বোচ্চ সম্মানীয় পরিণামের প্রতি পরিচালিত করে। মক্কা নগরী ইসলামের প্রতীক, ‘সিনাই ‘ পর্বত ইসরাঈলীদের প্রতীক ; এবং [Mount of Olive] হচ্ছে যীশু খৃষ্টের পবিত্র ও মূল বাণীর প্রতীক।
আয়াতঃ 095.004
আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
Verily, We created man of the best stature (mould),
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
Laqad khalaqna al-insana fee ahsani taqweemin
YUSUFALI: We have indeed created man in the best of moulds,
PICKTHAL: Surely We created man of the best stature
SHAKIR: Certainly We created man in the best make.
KHALIFA: We created man in the best design.
৪। আমি মানুষকে অতি সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি করেছি, ৬১৯৯
৬১৯৯। “Taqwim” – গঠন, আকার, প্রকৃতি, বিন্যাস ইত্যাদি। আল্লাহ্র সৃষ্টির মাঝে কোন ত্রুটি নাই, তা সর্বাঙ্গ সুন্দর। সৃষ্টির মাঝে মানুষকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন সর্বাপেক্ষা সুন্দরতম গঠনে, শুধু শারীরিক নয় মানসিক গঠনেও। জন্মলগ্নে মানুষ পূত পবিত্র আত্মা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে থাকে। মানুষের কর্তব্য হচ্ছে আত্মার সেই পবিত্রতা রক্ষা করা ; দেখুন [ ৩০:৩০ ] আয়াত। আল্লাহ্ মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি রূপে প্রেরণ করেছেন এবং মানুষকে ফেরেশতাদের উপরে স্থান দিয়েছেন। আল্লাহ্র এই আদেশ কার্যকর হয়েছিলো ফেরেশতাদের আদমকে সেজদা করার মাধ্যমে [ ২ : ৩০ -৩৪ ] আয়াত ও টিকা ৪৮। আল্লাহ্ মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে সম্মান দান করার দরুণই তাঁকে সীমিত হলেও ‘স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ‘ দান করেছেন এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দান করেছেন। যদি মানুষ তাঁর প্রাপ্ত স্বাধীনতাকে সঠিক ভাবে আল্লাহ্ নির্দ্দেশিত রাস্তায় ব্যবহার করে,তবে সে হবে মহিমান্বিত, উন্নত চরিত্রের অধিকারী। আর যদি সে এই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে তবে সে পশুর থেকেও অধম হয়ে যাবে।
আয়াতঃ 095.005
অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে নীচে।
Then We reduced him to the lowest of the low,
ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ
Thumma radadnahu asfala safileena
YUSUFALI: Then do We abase him (to be) the lowest of the low,-
PICKTHAL: Then we reduced him to the lowest of the low,
SHAKIR: Then We render him the lowest of the low.
KHALIFA: Then turned him into the lowliest of the lowly.
৫। অতঃপর তাকে আমি অধমের থেকেও অধম করেছি ; – ৬২০০
৬। তারা ব্যতীত যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে। তাদের জন্য রয়েছে অশেষ পুরষ্কার।
৬২০০। এই আয়াতটিকে পরবর্তী আয়াতের সাথে একসাথে পাঠ করতে হবে। যদি মানুষ আল্লাহ্র হুকুম অমান্য করে আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং আল্লাহ্ প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করার পরিবর্তে মন্দ পথের অনুসরণ করে তবে তার অবস্থান সর্বাপেক্ষা হীনতাগ্রস্থদের মধ্যে হীনতম। অপরপক্ষে যারা আল্লাহ্ প্রদত্ত মানসিক দক্ষতা ও নেয়ামতসমূহের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহ্ প্রদর্শিত ন্যায় ও সত্যের পথ অনুসরণ করেন, তাদের জন্য আছে সৌভাগ্য। কারণ বিচার দিবস অবশ্যাম্ভবী, যেদিন সকলকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিরা সেদিন পুরষ্কৃত হবেন যে পুরষ্কার ক্ষণস্থায়ী নয় – বরং সে পুরষ্কার হবে চিরস্থায়ী। সে পুরষ্কার হবে নিরবচ্ছিন্ন।
আয়াতঃ 095.006
কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে অশেষ পুরস্কার।
Save those who believe (in Islâmic Monotheism) and do righteous deeds, then they shall have a reward without end (Paradise).
إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
Illa allatheena amanoo waAAamiloo alssalihati falahum ajrun ghayru mamnoonin
YUSUFALI: Except such as believe and do righteous deeds: For they shall have a reward unfailing.
PICKTHAL: Save those who believe and do good works, and theirs is a reward unfailing.
SHAKIR: Except those who believe and do good, so they shall have a reward never to be cut off.
KHALIFA: Except those who believe and lead a righteous life; they receive a reward that is well deserved.
৫। অতঃপর তাকে আমি অধমের থেকেও অধম করেছি ; – ৬২০০
৬। তারা ব্যতীত যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে। তাদের জন্য রয়েছে অশেষ পুরষ্কার।
৬২০০। এই আয়াতটিকে পরবর্তী আয়াতের সাথে একসাথে পাঠ করতে হবে। যদি মানুষ আল্লাহ্র হুকুম অমান্য করে আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং আল্লাহ্ প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করার পরিবর্তে মন্দ পথের অনুসরণ করে তবে তার অবস্থান সর্বাপেক্ষা হীনতাগ্রস্থদের মধ্যে হীনতম। অপরপক্ষে যারা আল্লাহ্ প্রদত্ত মানসিক দক্ষতা ও নেয়ামতসমূহের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহ্ প্রদর্শিত ন্যায় ও সত্যের পথ অনুসরণ করেন, তাদের জন্য আছে সৌভাগ্য। কারণ বিচার দিবস অবশ্যাম্ভবী, যেদিন সকলকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিরা সেদিন পুরষ্কৃত হবেন যে পুরষ্কার ক্ষণস্থায়ী নয় – বরং সে পুরষ্কার হবে চিরস্থায়ী। সে পুরষ্কার হবে নিরবচ্ছিন্ন।
আয়াতঃ 095.007
অতঃপর কেন তুমি অবিশ্বাস করছ কেয়ামতকে?
Then what (or who) causes you (O disbelievers) to deny the Recompense (i.e. Day of Resurrection)?
فَمَا يُكَذِّبُكَ بَعْدُ بِالدِّينِ
Fama yukaththibuka baAAdu bialddeeni
YUSUFALI: Then what can, after this, contradict thee, as to the judgment (to come)?
PICKTHAL: So who henceforth will give the lie to thee about the judgment?
SHAKIR: Then who can give you the lie after (this) about the judgment?
KHALIFA: Why do you still reject the faith?
৭। এরপরে, [ অনাগত] শেষ বিচার সম্বন্ধে কিসে তোমাকে অবিশ্বাসী করে ? ৬২০১
৬২০১। ‘তোমাকে’ শব্দটি দ্বারা অবিশ্বাসী সকল মানব সম্প্রদায়কে সামগ্রিকভাবে বুঝানো হয়েছে। ‘এর পরের’ বাক্যটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, এ কথা যখন পরিষ্কার ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ মানুষকে পূত পবিত্র রূপে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সঠিক পথের সন্ধান দান করেছেন এর পরেও যারা আল্লাহ্র আইনকে প্রত্যাখান করে, আল্লাহ্র আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, আল্লাহ্ তাঁদের পরকালে হীনতাগ্রস্থ করবেন। কে এমন নির্বোধ আছে যে এ সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে ? বা রাসুলের (সা) প্রচারিত সত্যকে অবিশ্বাস করতে পারে ?
আয়াতঃ 095.008
আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্টতম বিচারক নন?
Is not Allâh the Best of judges?
أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِينَ
Alaysa Allahu bi-ahkami alhakimeena
YUSUFALI: Is not Allah the wisest of judges?
PICKTHAL: Is not Allah the most conclusive of all judges?
SHAKIR: Is not Allah the best of the Judges?
KHALIFA: Is GOD not the Most Wise, of all the wise ones?
৮। আল্লাহ্ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন ? ৬২০২
৬২০২। আল্লাহ্ জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও ন্যায় বিচারে সর্বশ্রেষ্ঠ। সুতারাং যারা পূণ্যাত্মা তাদের ভয়ের কিছু নাই। কিন্তু পাপীরা শাস্তি এড়াতে পারবে না।