- সূরার নাম: সূরা দুহা
- বিভাগসমূহ: ইসলামিক বই, কোরআন শরীফ
সূরা দুহা
আয়াতঃ 093.001
শপথ পূর্বাহ্নের,
By the forenoon (after sun-rise);
وَالضُّحَى
Waaldduha
YUSUFALI: By the Glorious Morning Light,
PICKTHAL: By the morning hours
SHAKIR: I swear by the early hours of the day,
KHALIFA: By the forenoon.
=============
সূরা দুহা বা প্রভাতের সুন্দর আলো – ৯৩
১১ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এই সূরাটির সময়কাল হচেছ ৮৯ নং ও ৯২ নং সূরার সমসাময়িক। এই তিনটি সূরাতে রাত্রি ও দিনের বৈষ্যমের মাঝে তুলনা করা হয়েছে। এই সূরাতে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের আশ্বাস দান করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আশা ও সান্তনার বাণী। মানুষকে আহ্বান করা হয়েছে সৎপথের প্রতি এবং আল্লাহ্র নেয়ামত সমূহকে সনাক্ত করতে বলা হয়েছে – তাহলেই মানুষ বুঝতে সক্ষম হবে আল্লাহ্র অনুগ্রহ সমূহ। এই -ই হচ্ছে এই সূরার সাধারণ বিষয় বস্তু যা সর্বকালে সর্ব মানুষের জন্য প্রযোজ্য। রাসুলের (সা) জীবনীর প্রেক্ষাপটে সূরাটি অবতীর্ণ হয়। সেই সময়টি ছিলো রাসুলের (সা) জন্য অত্যন্ত কষ্টকর সময় যা কোন মানুষকে হতোদ্দ্যম করার পক্ষে যথেষ্ট। আল্লাহ্ নবীকে বলেছেন যে বর্তমান নিয়ে হতোদ্দম না হতে, কারণ অচিরেই ভবিষ্যতে তাঁর উজ্জ্বল সম্ভাবনা বিদ্যমান। রাত্রির নিঝুম নিরবতার অন্ধকারের পরে যেরূপ আলোকজ্জ্বল প্রভাতের আবির্ভাব ঘটে ঠিক সেরূপই উজ্জ্বল ভবিষ্যত তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। এই ভবিষ্যত জীবন হবে ইহকাল এবং পরলোকেও। ইহলোকের পার্থিব জীবনে তা হবে ইসলামের বিজয় ও আল্লাহ্র সন্তুষ্টি, পরলোকে আল্লাহ্র সান্নিধ্য। রাসুলের (সা) জীবনীর মাধ্যমে এই ছিলো বিশ্বজনীন উপদেশ।
সূরা দুহা বা প্রভাতের সুন্দর আলো – ৯৩
১১ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। প্রভাতের সুন্দর আলোর শপথ, ৬১৭৫
৬১৭৫। আলোকজ্জ্বল প্রভাতের শপথ করা হয়েছে। রাত্রির অন্ধকারকে বিদূরিত করে যখন ধীরে ধীরে প্রভাতের সুর্য পূর্ব দিগন্তের নীল আকাশে উদিয় হতে থাকে; তখন রাত্রির অন্ধকারের পটভূমিতে আলোর তীব্রতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেখুন [ ৯১ : ১ ] আয়াত। সূর্যদয় থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত আলোর তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে যার পটভূমি হচ্ছে নিশিত রাত্রির অন্ধকারের নিরবতা। ঠিক সেরূপ হচ্ছে মানুষের আধ্যাত্মিক জীবন। নিশিত রাত্রির নিরবতার ন্যায় আধ্যাত্মিক জগতকেও জাগতিক কর্মজগত থেকে সাময়িক বিরতিদান প্রয়োজন তাহলেই আধ্যাত্মিক জগতে প্রভাতের সূর্যের ন্যায় আল্লাহ্র হেদায়েতের আলোর উন্মেষ ঘটবে এবং ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। পৃথিবীর কর্মজগতের সকল চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহ্র ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার প্রকৃষ্ট সময় নিশিত রাত্রির নিরবতা। এটাই হচ্ছে আত্মিক বিকাশের প্রকৃষ্ট সময়। এ কথা ভাবার অবকাশ নাই যে রাত্রির নিরবতা বা শান্ত অবস্থা বৃথা অপচয় ঘটে, অথবা তা আধ্যাত্মিক জগতের জন্য প্রয়োজন নাই। এই নীরবতা জীবনকে পার্থিব কোলাহলমুক্ত করে আত্মাকে আল্লাহ্র অনুগ্রহের উপযুক্ত করে তোলে। মানুষ সে সময়ে একা নয়, আল্লাহ্ তাঁকে ত্যাগ করেন না। যদিও রাত্রির এই ধ্যানমগ্নতার প্রভাব বা ফলাফল তাৎক্ষণিক ভাবে লক্ষ্য করা যায় না, তাই বলে এ কথা ভাবার অবকাশ নাই যে, আল্লাহ্ তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। রাত্রির এই নীরব নিথর ধ্যান মগ্নতাই, আধ্যাত্মিক জীবনের ঊষালগ্নের সূচনা করে। যেমন নিরব নিথর রাত্রি শেষ পূর্ব দিগন্তে প্রভাতের সূর্যের উদয় ঘটে। অপূর্ব রূপক বর্ণনা ও রাসুলের জীবনের উদাহরণের মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষের কাছে এই সার্বজনীন সত্যের রূপকে তুলে ধরা হয়েছে।
আয়াতঃ 093.002
শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়,
And by the night when it is still (or darkens);
وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى
Waallayli itha saja
YUSUFALI: And by the Night when it is still,-
PICKTHAL: And by the night when it is stillest,
SHAKIR: And the night when it covers with darkness.
KHALIFA: By the night as it falls.
২। এবং শান্ত নিস্তব্ধ রাত্রির শপথ, ৬১৭৬ –
৬১৭৬। দেখুন সূরা [ ৯২ : ১ – ২ ] আয়াত। সেখানে রাত্রির উল্লেখ প্রথমে করে তারপরে উল্লেখ করা হয়েছে দিনের। এ ভাবেই বিপরীত বৈষম্যকে জোড়ালো ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সাধারণ ভাবে রাত্রির অন্ধকারের অনগুন্ঠন পৃথিবীকে সুপ্তির কোলে টেনে নেয়। সেই অবগুণ্ঠন সরিয়ে প্রভাতের সূর্যের আগমন ঘটে আলোর বন্যা নিয়ে। দিনের আরম্ভের পূর্বে থাকে রাত্রির অন্ধকারের অবগুন্ঠন। এই সূরাতে বিপরীত ভাবে যুক্তির উপস্থাপন করা হয়েছে।প্রভাতের সূর্যের ক্রমান্বয়ে উজ্জ্বলতা লাভ করাই হচ্ছে এখানের প্রধান বিষয়বস্তু। সুতারাং এটাকেই এই সূরাতে প্রথম শপথ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাত্রির শান্ত নীরবতা হচ্ছে প্রভাতের প্রস্তুতির পূর্বশর্ত ; সুতারাং তা পরে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াতঃ 093.003
আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেনি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি।
Your Lord (O Muhammad (Peace be upon him)) has neither forsaken you nor hated you.
مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَى
Ma waddaAAaka rabbuka wama qala
YUSUFALI: Thy Guardian-Lord hath not forsaken thee, nor is He displeased.
PICKTHAL: Thy Lord hath not forsaken thee nor doth He hate thee,
SHAKIR: Your Lord has not forsaken you, nor has He become displeased,
KHALIFA: Your Lord never abandoned you, nor did He forget.
৩। তোমার প্রতিপালক প্রভু তোমাকে পরিত্যাগ করেন নাই ৬১৭৭ এবং অসন্তুষ্টও হন নাই। ৬১৭৮
৬১৭৭। কোরাণ শরীফের প্রথা অনুসারে এর উপদেশের পটভূমি থাকে সমসাময়িক ঘটনা যা যুগ কাল উত্তীর্ণ এবং বিশ্বজনীন, পৃথিবীর সকল দেশের সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। এই আয়াতে আল্লাহ্ রাসুলকে (সা) নির্দ্দিষ্ট বিষয়ের প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করেছেন যা সার্বজনীন, যুগ কাল উত্তীর্ণ। দেখুন সূরাটির ভূমিকা। কোরাণ অবতরণের প্রথম ভাগে ‘ওহী’ অবতরণে বিলম্ব হয়। সময়ের এই ব্যবধানে হযরতের মনে নিঃসঙ্গতার সৃষ্টি হয়, তিনি চিন্তাযুক্ত হন। আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের জন্য তিনি ব্যকুল হয়ে পড়েন। তদুপরি মক্কার কোরাইশরা তাঁর প্রতি ঠাট্টা বিদ্রূপের ও ভয় ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে তখন তাকে সান্তনা দিয়ে এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়। শুধু রাসুলকেই (সা) নয় সেই সাথে তার অনুসারীদেরও কোরাইশরা অত্যাচার ও নির্যাতন করতে থাকে। কিন্তু কোরাইশাদের কোন বিদ্রূপ বা অত্যাচার রাসুলের (সা) হৃদয়কে সত্যের প্রতি বিশ্বাস থেকে এতটুকু বিচলিত করতে পারে নাই ; যেরূপ অস্থির হয়েছিলো ঈসা নবীর হৃদয়। কারণ তাঁর আবেদন ছিলো এরূপঃ “My God ! why hast thou forsaken me ?” [ Mark xvi 34 ] । কোরাইশরা যত ভাবেই বিদ্রূপাচ্ছলে বলুক না কেন যে, ” আল্লাহ্ রাসুলের (সা) উপরে রাগ করেছেন ” রাসুল (সা) ছিলেন বিশ্বাসে ও নির্ভরশীলতায় অবিচল যা বিশ্ব মানবের জন্য সর্ব কালের উদাহরণ।
উপদেশ : বিপদ ও দুর্যোগে আল্লাহ্র প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে ধৈর্য অবলম্বন করতে হবে।
৬১৭৮। দেখুন উপরের টিকা সাধারণ উপদেশ একই। প্রভাতের উদীয়মান সূর্যের ক্রমান্বয়ে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাওয়ার ন্যায় হচ্ছে আধ্যাত্মিক জগতের অভিযাত্রা। আত্মার এই যাত্রা অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে আলোর পথে যাত্রা। এরূপ যাত্রীকেই আল্লাহ্ উপদেশ দান করেছেন হতোদ্দম না হতে বা এই দুর্গম পথে একাকীত্ব অনুভব না করতে। এ পথের প্রারম্ভে সংগ্রাম ও পথের কষ্ট অনেক সময়েই আধ্যাত্মিক পথের যাত্রীদের হতাশ ও হতোদ্দম করে। কিন্তু আল্লাহ্ আশ্বাস দান করেছেন যে, এ সব পথের যাত্রীদের অবশ্যই আল্লাহ্ বিজয় মুকুট পরাবেন। আল্লাহ্র কল্যাণ স্পর্শ সর্বদা তাদের ঘিরে থাকে। যদি শত্রুরা তাদের প্রতি ব্যঙ্গ বিদ্রূপ ও অত্যাচার ও নির্যাতনের ঝড় বইয়ে দেয়, তাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তাই তাদের এই অসহনীয় অবস্থা থেকে উদ্ধার করবে। আল্লাহ্র প্রতি অবিচল বিশ্বাস এবং এই বিশ্বাসের দৃঢ়তা তাকে পার্থিব থেকে অপার্থিব জগতে উত্তরণ ঘটাবে। বাইরের পৃথিবী যাই-ই বলুক না কেন অন্তরের মাঝে হৃদয় কন্দরে সে জানে আল্লাহ্র কল্যাণ স্পর্শ তাকে ঘিরে আছে ইহজগতে যাই-ই ঘটুক না কেন পরলোকের জীবনে তারা হবেন পুরষ্কৃত।
আয়াতঃ 093.004
আপনার জন্যে পরকাল ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়।
And indeed the Hereafter is better for you than the present (life of this world).
وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْأُولَى
Walal-akhiratu khayrun laka mina al-oola
YUSUFALI: And verily the Hereafter will be better for thee than the present.
PICKTHAL: And verily the latter portion will be better for thee than the former,
SHAKIR: And surely what comes after is better for you than that which has gone before.
KHALIFA: The Hereafter is far better for you than this first (life).
৪। নিশ্চয় ইহকাল অপেক্ষা পরকাল তোমার জন্য অধিক মঙ্গলময় হবে। ৬১৭৯
৬১৭৯। আল্লাহ্র প্রতি যে আন্তরিকভাবে অনুগত, আধ্যাত্মিক জগতের দুর্গম পথে তার প্রতিদিনের যাত্রা হবে ক্রমান্বয়ে উর্দ্ধে উত্তরণ। উচ্চ পর্বতে আরোহণের ন্যায় প্রতিটি ধাপে সে পশ্চাতকে অতিক্রম করে উর্দ্ধলোকে আরোহণ করবে। সে কারণেই বলা হয়েছে ” পরকাল ইহকালের সময় অপেক্ষা শ্রেয়।” এই উত্তরণ হবে ইহলোকে এবং পরলোকের জীবনের জন্য। পৃথিবীর পার্থিব মানদন্ডে অনেক সময়ে এ সব পূণ্যাত্মাদের জীবনকে সুউচ্চ বা মাননীয় ও সম্মানীয় মনে হতে না পারে। কিন্তু আধ্যাত্মিক জীবনে হৃদয় ও অন্তর এদের হবে তীব্র প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ। এই প্রশান্তির পরিমাণ প্রতিদিন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে – প্রকৃত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোকে তার হৃদয় হবে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর।
আয়াতঃ 093.005
আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন।
And verily, your Lord will give you (all i.e. good) so that you shall be well-pleased.
وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى
Walasawfa yuAAteeka rabbuka fatarda
YUSUFALI: And soon will thy Guardian-Lord give thee (that wherewith) thou shalt be well-pleased.
PICKTHAL: And verily thy Lord will give unto thee so that thou wilt be content.
SHAKIR: And soon will your Lord give you so that you shall be well pleased.
KHALIFA: And your Lord will give you enough; you will be pleased.
৫। আর শীঘ্রই তোমার প্রতিপালক প্রভু তোমাকে এমন অনুগ্রহ দান করবেন, যাতে তুমি অবশ্যই খুশী হবে। ৬১৮০
৬১৮০। রাসুল (সা) কে সম্বোধন করে বিশ্ব মানবকে আল্লাহ্ বলছেন, যে আল্লাহ্র রাস্তায় কাজ করে অবশ্যই সে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করবে। যদি আমরা আমাদের ইচ্ছা ; চাওয়া-পাওয়া ও আবেগ, অনুভূতিকে সেই বিশ্বস্রষ্টার বিশ্বজনীন ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হই,তবে আল্লাহ্ আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, আমাদের সকল দ্বিধা -দ্বন্দ, ভয়, আশঙ্কা, ইত্যাদি সব কিছু হৃদয় থেকে দূর হয়ে যাবে এবং আমাদের হৃদয় আত্মপ্রসাদ, সন্তুষ্টি এবং আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। আল্লাহ্ আশ্বাস দিয়েছেন,” তুমি অবশ্যই খুশী হবে।”
আয়াতঃ 093.006
তিনি কি আপনাকে এতীমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।
Did He not find you (O Muhammad (Peace be upon him)) an orphan and gave you a refuge?
أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَى
Alam yajidka yateeman faawa
YUSUFALI: Did He not find thee an orphan and give thee shelter (and care)?
PICKTHAL: Did He not find thee an orphan and protect (thee)?
SHAKIR: Did He not find you an orphan and give you shelter?
KHALIFA: Did He not find you orphaned and He gave you a home?
৬। তিনি কি তোমাকে এতিম অবস্থায় পান নাই ৬১৮১ এবং তোমাকে আশ্রয় [ ও ভালোবাসা ] দেন নাই ? ৬১৮২
৬১৮১। এই আয়াতে আল্লাহ্ রাসুলকে (সা) অতীত থেকে বর্তমানকে বা ভবিষ্যতকে বিচার করতে আহ্বান করেছেন। অতীতে আল্লাহ্ রাসুলের প্রতি দয়া প্রর্দশন করেছেন, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আশ্বাস দান করেছেন যে অবশ্যই ভবিষ্যতও রাসুলের (সা) জন্য উজ্জ্বল। পুণরায় এই আয়াতটি রাসুলের (সা) পটভূমিতে বিশ্বজনীন উপদেশ। রাসুলের (সা) জীবনীকে রূপক হিসেবে উপস্থাপন করে আল্লাহ্ আমাদের সম্মুখে সার্বজনীন উদাহরণ স্থাপন করেছেন। রাসুলের জীবনের তিনটি ঘটনাকে এই সূরাতে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাহ্যিক এই ঘটনাগুলির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অপরিসীম।
৬১৮২। ১) রাসুলকে (সা) এখানে ‘এতিম ‘ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এই এতিম শব্দটি তাঁর জন্য প্রকৃত অর্থে ও রূপক অর্থে উভয় অর্থে প্রযোজ্য। যিনি হবেন বিশ্ব নবী, আল্লাহ্ তাঁকে ‘এতিম ‘ করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। পিতা আবদুল্লা তার জন্মের পূর্বেই পরলোক গমন করেন। তিনি তাঁর সন্তান ও বিধবা স্ত্রীর জন্য খুব সামান্য সম্পত্তি-ই রেখে যেতে পেরেছিলেন। রাসুলের মাতা আমিনা বেগম ছিলেন, ভগ্নস্বাস্থ্যের অধিকারী। প্রকৃত পক্ষে রাসুলকে লালন পালন করেন তাঁর দুধ মা ধাত্রী হালিমা। রাসুলের মা পরলোক গমন করেন তিনি যখন কেবলমাত্র ছয় বৎসর। এর পরে তার পিতব্য আবু তালেব তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন ও পিতৃস্নেহে লালন পালন করেন। এভাবেই তিনি ছিলেন একজন ‘এতিম ‘বালক,কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি যে আদর ও ভালোবাসা লাভ করেছিলেন তা সাধারণ পিতামাতার থেকেও অধিক ছিলো। এভাবেই আল্লাহ্ অসহায়ের সহায় হন। রাসুলের উদাহরণের মাধ্যমে আল্লাহ্ বলেছেন যে, মানুষ যখন এতিমের ন্যায় অসহায় হয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ্র ভালোবাসা তাকে আশ্রয় দান করে। আধ্যাত্মিক জগতে আমাদের কোনও পিতা-মাতা নাই। সে জগতের আশ্রয়দাতা, প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ্। আল্লাহ্র করুণাই একমাত্র ভরসা।
আয়াতঃ 093.007
তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন।
And He found you unaware (of the Qur’ân, its legal laws, and Prophethood, etc.) and guided you?
وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَى
Wawajadaka dallan fahada
YUSUFALI: And He found thee wandering, and He gave thee guidance.
PICKTHAL: Did He not find thee wandering and direct (thee)?
SHAKIR: And find you lost (that is, unrecognized by men) and guide (them to you)?
KHALIFA: He found you astray, and guided you.
৭। এবং তিনি তোমাকে পথহারা অবস্থায় দেখেন ও পথ -নির্দ্দেশ দান করেন ৬১৮৩।
৬১৮৩। মহানবী যখন পৃথিবীতে আগমন করেন, তখন সমগ্র আরব পৌত্তলিকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলো এবং তাঁর পরিবারই ছিলো কাবা ঘরে পৌত্তলিক মূর্তি গুলির তত্ত্বাবধায়ক। তাঁর পবিত্র হৃদয় এসব গ্রহণে অস্বীকার করে, কিন্তু সঠিক পথের ঠিকানা তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আল্লাহ্ তাঁকে সঠিক পথের নির্দ্দেশ দান করেন। নবুয়ত লাভের পূর্ব থেকেই রাসুলুল্লাহ্ (সা) মানুষের নৈতিক অধঃপতন দেখে বিচলিত হতেন, মানুষকে রক্ষার উপায় খুঁজতেন, তাঁর সেই সময়কার মানসিক অবস্থা এই আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাঁকে সঠিক পথের নির্দ্দেশ দান করেন। রাসুলের (সা) জীবনে কোনও পাপ ছিলো না তা ছিলো পূত ও পবিত্র। কিন্তু আমাদের মত সাধারণ যারা তারা পাপের গোলক ধাঁধাতে বিভ্রান্ত ও দিশাহারা হয়ে ঘুরে বেড়াই। আমাদের কর্মের উদ্দেশ্য চিন্তাধারা, উপলব্ধি সবই হয়ে পড়ে বিভ্রান্ত। সে ক্ষেত্রে আল্লাহ্ আমাদেরও সঠিক পথের সন্ধান দেবেন যদি আমরা একান্ত নিবেদিত হৃদয়ে তাঁর কাছে সাহায্যের আবেদন করি।
আয়াতঃ 093.008
তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।
And He found you poor, and made you rich (selfsufficient with selfcontentment, etc.)?
وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغْنَى
Wawajadaka AAa-ilan faaghna
YUSUFALI: And He found thee in need, and made thee independent.
PICKTHAL: Did He not find thee destitute and enrich (thee)?
SHAKIR: And find you in want and make you to be free from want?
KHALIFA: He found you poor, and made you rich.
৮। তিনি তোমাকে দরিদ্র অবস্থায় দেখেন এবং তোমাকে [ দারিদ্র ] মুক্ত করেন। ৬১৮৪
৬১৮৪। ৩) মহানবী পৈতৃক সুত্রে খুব বেশী কিছু সম্পদ লাভ করেন নাই। তিনি ছিলেন গরীব। বিবি খাদিজার পবিত্র ভালোবাসা ও প্রকৃত প্রেম তাঁকে যে শুধুমাত্র মহিমান্বিত করেছিলো তাই-ই নয়, পরবর্তী জীবনে তাঁকে পার্থিব সকল অভাব মুক্ত করেছিলো। তার ফলে তিনি তার সময় ও জীবনকে আল্লাহ্র কাজে ব্যপৃত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই মহান উদাহরণের মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, পৃথিবীর জীবনে আমরা অনেক সময়েই ভালো কাজে বাঁধা প্রাপ্ত হই বা অর্থের বা লোকবলের অভাব অনুভব করি। কিন্তু যদি আমাদের কাজের উদ্দেশ্য মহৎ হয় এবং আমরা আমাদের কাজের প্রতি আন্তরিক ও বিশ্বস্ত থাকি তবে আল্লাহ্র সাহায্য অবশ্যাম্ভবী। বিশেষ ভাবে যদি সে পথ হয় আধ্যাত্মিক জগতের পথ ; তবে সেই খাড়া বন্ধুর পথে আরোহণ অত্যন্ত দুঃসাধ্য ব্যাপার। যদি কেউ সে পথ খুঁজে পায় এবং দুরূহ পথকে অতিক্রম করতে চায় ধৈর্য্য, অধ্যাবসায় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে,তবে তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ভালোবাসাতে তাঁর অন্তর পূর্ণ করে দেবেন। আল্লাহ্ তাকে আধ্যাত্মিক ভাবে অভাব মুক্ত করবেন।
আয়াতঃ 093.009
সুতরাং আপনি এতীমের প্রতি কঠোর হবেন না;
Therefore, treat not the orphan with oppression,
فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْ
Faamma alyateema fala taqhar
YUSUFALI: Therefore, treat not the orphan with harshness,
PICKTHAL: Therefor the orphan oppress not,
SHAKIR: Therefore, as for the orphan, do not oppress (him).
KHALIFA: Therefore, you shall not forsake the orphan.
৯। সুতারাং এতিমদের সাথে কখনও দুর্ব্যবহার করো না ৬১৮৫
৬১৮৫। আয়াত [ ৬ – ৮ ] পর্যন্ত রূপক বর্ণনার মাধ্যমে যে উপদেশাবলী প্রেরণ করা হয়েছে, তাকেই আরও সম্প্রসারিত করা হয়েছে [ ৯ – ১১ ] আয়াতে। এতিমদের প্রতি মহানবীর ব্যবহার তাঁর সমসাময়িক লোকদের জন্য, তথা সাড়া বিশ্বের জন্য উদাহরণ স্বরূপ। তাঁর সময়ে সাধারণ লোকেরা এতিমদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতো, তাদের অসহায় অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করতো, অবশ্য মানুষের এই মানসিকতা সে সময়ে যেমন বিদ্যমান ছিলো, অদ্যাবধিও তা সমভাবে বিদ্যমান আছে। মানুষ অপরের অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর। এতিম শব্দটিকে রূপক অর্থে ব্যবহার করলে এর দ্বারা তাদেরই বুঝানো হয় যাদের সহায় সম্বল নাই। সেক্ষেত্রে আল্লাহ্র হুকুম হবে অসহায়, যারা অন্যের উপরে নির্ভরশীল, তারা হচ্ছে সম্পদশালী ও প্রভাব প্রতিপত্তিশালীদের জন্য পবিত্র আমানত স্বরূপ। এই অসহায়ত্ব হতে পারে এতিম হওয়ার কারণে বা অন্যের উপরে নির্ভরশীলতার কারণে। নির্ভরশীলতার কারণ বহুবিধ হতে পারে যেমন : বয়েসের দরুণ [ অতিবৃদ্ধ হলে ], লিঙ্গের প্রভেদের দরুণ। [ যেমন মেয়েদের উপর নির্যাতন ], সামাজিক অবস্থানের জন্য; সম্পদের তারতম্যের জন্য এরূপ বহুবিধ কৃত্রিম সামাজিক বাঁধা বিদ্যমান যার দরুণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। আল্লাহ্র হুকুম হচ্ছে এই অসহায়দের প্রতি অনুভূতিশীল দয়ার্দ্র হওয়া।
আয়াতঃ 093.010
সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না।
And repulse not the beggar;
وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْ
Waamma alssa-ila fala tanhar
YUSUFALI: Nor repulse the petitioner (unheard);
PICKTHAL: Therefor the beggar drive not away,
SHAKIR: And as for him who asks, do not chide (him),
KHALIFA: Nor shall you reprimand the beggar.
১০। প্রার্থীর আবেদন [ না শুনে ] তাড়িয়ে দিও না ; ৬১৮৬
৬১৮৬। মানুষ সামাজিক জীব যে দুর্বল সে সবলের সাহায্য প্রার্থী হয়। প্রার্থী হতে পারে ভিক্ষুক, যে ধনীর নিকট আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করে, অজ্ঞ যে জ্ঞানীর কাছে জ্ঞান লাভের প্রার্থনা করে। অশিক্ষিত শিক্ষার আলোর প্রার্থনা করে, দুর্বল সবলের শক্তি যাঞা করে এরূপ ভাবে সামাজিক অবস্থানে যারা উচ্চে অবস্থান করেন নিম্নে অবস্থানকারীরা তাদের সাহায্য প্রার্থী। এরূপ ক্ষেত্রে মহানবীর উদাহরণের মাধ্যমে বিশ্বস্রষ্টার আদেশ হচ্ছে প্রার্থীর প্রতি দুর্ব্যবহার করা চলবে না। সাধারণ মানুষের ধর্ম হচ্ছে অনুগ্রহ প্রার্থীর সাথে সম্মানের সাথে ব্যবহার করে না; বরং কৃপার সাথে ব্যবহার করে। আবার অনেকে সাহায্য করে সত্য, তবে দুর্ব্যবহারের সাথে। এই মানসিকতাকে এখানে নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। যে দান অন্তরের স্বতঃস্ফূর্ত সহানুভূতি ও ভালোবাসা থেকে উৎসরিত হয় না, সে দান আল্লাহ্র নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। যদি কেউ প্রার্থীর হাত থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য বা দাতা হিসেবে সুনাম কুড়ানোর জন্য সাহায্য করে তবে সে দানও আল্লাহ্র নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। পেশাগত ভিক্ষুককে অনেকেই লোক দেখানোর জন্য বা এদের থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য ভিক্ষা দিয়ে থাকে। এর দ্বারা সমাজের কোনও উপকার হয় না, বরং সমাজের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কারণ এরা সমাজের পরগাছা। সুতারাং সাহায্য প্রার্থীর প্রতিটি দরখাস্ত তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহানুভূতি ও দয়ার সাথে বিবেচনা করতে হবে। দেখুন সূরা [ ২ : ৮৩ ] আয়াত ও টিকা ৮৭।
আয়াতঃ 093.011
এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।
And proclaim the Grace of your Lord (i.e. the Prophethood and all other Graces).
وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
Waamma biniAAmati rabbika fahaddith
YUSUFALI: But the bounty of the Lord – rehearse and proclaim!
PICKTHAL: Therefor of the bounty of thy Lord be thy discourse.
SHAKIR: And as for the favor of your Lord, do announce (it).
KHALIFA: You shall proclaim the blessing your Lord has bestowed upon you.
১১। তুমি তোমার প্রভুর অনুগ্রহের কথা আবৃত্তি ও ঘোষণা কর। ৬১৮৭।
৬১৮৭। প্রার্থী, যারা সাহায্য যাঞা করে, তারা ব্যতীত এরকম বহু লোক আছেন যারা সাহায্য প্রার্থনা করে না। তারা যে গরীব নয় এবং সে কারণে সাহায্য প্রার্থনা করেন না ঠিক তা নয়। তারা সাহায্য প্রার্থনা করে না কারণ দারিদ্রতা সত্বেও তারা পার্থিব জীবনে সন্তুষ্ট বা তারা তা উপলব্ধি করে না। যেমন : জ্ঞানের অভাব অজ্ঞ ব্যক্তি বোধ করে না, আবার অনেকে মানসিক দক্ষতা সমূহের অভাব বোধ করে না, ইত্যাদি। যদি কেউ আল্লাহ্র যে কোন নেয়ামতে ধন্য হয় তবে তার দায়িত্বও তার উপরে অর্পিত হয়। আল্লাহ্র নেয়ামতের জন্য দেখুন [ ২ : ৩ ] আয়াতের টিকা নং ২৭। আল্লাহ্র নেয়ামত বা দানকে অন্যের সাথে অংশদারিত্ব ভোগ করতে হয়। রাসুলের জীবনীর মাধ্যমে এই শিক্ষাকে তুলে ধরা হয়েছে। রাসুল (সা) তাঁর প্রতি অর্পিত নবুয়তের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে কথায় ও কাজে পালন করেছেন। আমরা সকলেই আল্লাহ্র কোন না কোন অনুগ্রহে ধন্য। আমাদের সকলেরই উপরে ঐশ্বরিক হুকুম হচ্ছে, আমাদের সকল মানুষ ভাই এর জন্য আল্লাহ্র নেয়ামতকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভোগ করা। তাহলেই সে হবে আল্লাহ্র যোগ্য প্রতিনিধি।