৩৯০৩। ‘সালাত’ বা প্রার্থনা হচ্ছে জীবনের মলিনতা থেকে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার একটি উপায়। কারণ সালাতের মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মার মাঝে আল্লাহ্র সান্নিধ্য ও উপস্থিতি কামনা করে থাকি। আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির এও এক ভাষা বৈকি। আমরা পাপের মোচন দ্বারা যে আত্মিক পরিশুদ্ধির আকাঙ্খা করে থাকি তা আমাদের কল্যাণের জন্য আমাদের শান্তির জন্য। এতে আল্লাহ্র কোনও লাভ নাই। মনে রাখতে হবে সালাতের দ্বারা আমরা আল্লাহকে কোনও অনুগ্রহ করি না। যেমন অনেকে মানত করে থাকে নির্দ্দিষ্ট সংখ্যক সালাত কায়েম করবে কোনও বিপদ মুক্তির জন্য। আল্লাহ্ অভাব মুক্ত। আমাদের প্রার্থনায় তাঁর কোনও লাভ নাই। তবে বিপদে বিপর্যয়ে সালাতের মাধ্যমে তাঁর কাছে বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনা করা প্রয়োজন। কিন্তু বিপদ মুক্তির পরিবর্তে সালাত কাম্য নয়। প্রথমটির জন্য প্রয়োজন হয় সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পনের মানসিকতা। দ্বিতীয়টির জন্য ব্যবসায়িক মানসিকতা অবশ্য উভয় পক্ষেরই শেষ আশ্রয়স্থল সর্বশক্তিমান আল্লাহ্।
আয়াতঃ 035.019
দৃষ্টিমান ও দৃষ্টিহীন সমান নয়।
Not alike are the blind (disbelievers in Islâmic Monotheism) and the seeing (believers in Islâmic Monotheism).
وَمَا يَسْتَوِي الْأَعْمَى وَالْبَصِيرُ
Wama yastawee al-aAAma waalbaseeru
YUSUFALI: The blind and the seeing are not alike;
PICKTHAL: The blind man is not equal with the seer;
SHAKIR: And the blind and the seeing are not alike
KHALIFA: The blind and the seer are not equal.
১৯। অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয় ; ৩৯০৪
৩৯০৪। এই ছোট্ট আয়াতটিতে রূপকের মাধ্যমে তুলনা করা হয়েছে মোমেন ব্যক্তি ও খোদাদ্রোহীদের মধ্যে। যারা আল্লাহ্র আইনসমূহ মেনে চলে , তারা আল্লাহ্র রাজত্বের সুনাগরিক আর যারা মানে না তারা হচ্ছে অপরাধী। সুতারাং সুনাগরিক ও অপরাধী কখনও এক সমান হতে পারে না। এখানে পূণ্যাত্মা ব্যক্তিদের চক্ষুষ্মান ও খোদাদ্রোহীদের অন্ধ হিসেবে তুলনা করা হয়েছে। কারণ মোমেন ব্যক্তিরা আল্লাহ্র প্রদর্শিত পথে জীবনকে পরিচালনা করেন, সুতারাং তাদের আত্মা আল্লাহ্র নূরে উদ্ভাসিত হয়। ফলে তারা ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে ; সত্য -মিথ্যার মধ্যে ; ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম। তাদের মধ্যে জন্ম নেয় বিবেক ও অন্তর্দৃষ্টি [ Spiritual insight ]। ফলে তাদের কাজ ও কাজের নিয়ত হয় স্বচ্ছ পরিষ্কার, আলোর ন্যায় উজ্জ্বল যা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এদেরকে বলা হয়েছে চক্ষুষ্মান। অপর পক্ষে যারা খোদাদ্রোহী , অপরাধের ফলে , তারা তাদের আত্মার স্বচ্ছতা হারায়। তাদের মনোজগত ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঢেকে যায়। সেখানে ন্যায় -অন্যায়,সত্য-মিথ্যা, ভালো -মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়। এদের কাজ ও কাজের নিয়ত হয় অন্যায় আচরণে পরিপূর্ণ – যা শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থ, লোভ, হিংসা , দ্বেষে পরিপূর্ণ থাকে। এদেরকে বলা হয়েছে অন্ধ। প্রথমদল যারা চক্ষুষ্মান এ চক্ষু শারীরিক নয়, এ চক্ষু আত্মিক। দ্বিতীয় দল যারা অন্ধ তাদের অন্ধত্ব শারীরিক না এ অন্ধত্ব আত্মিক। আত্মিক চক্ষু আত্মিক অন্ধত্ব বোঝানোর জন্য পরবর্তী আয়াতগুলিতে আরও দুটি উপমার ব্যবহার করা হয়েছে। আত্মিক চক্ষু হচ্ছে আলোর ন্যায় এবং আত্মিক অন্ধত্ব হচ্ছে অতল অন্ধকারের ন্যায়। আর একটি উপমা হচ্ছে রৌদ্র ও ছায়া। চক্ষুষ্মান ব্যক্তি হচ্ছে রৌদ্র কিরণের মত। সূর্যের কিরণ পৃথিবীকে উষ্ণতা দান করে এবং বৃক্ষ ,তরুলতা জন্মাতে সাহায্য করে। সারা পৃথিবী সূর্য কিরণের শক্তির সাহায্যে উপকৃত হয়। ঠিক সেভাবেই চক্ষুষ্মান ব্যক্তির সঙ্গ হবে আনন্দদায়ক , যারাই তাঁর সংস্পর্শে আসবে তারাই উপকৃত হবে। অপরপক্ষে অন্ধত্বকে তুলনা করা হয়েছে ছায়ার সাথে। ছায়া যেরূপ সূর্যকিরণকে প্রতিহত করে ; ফলে সেই স্থান উষ্ণতা হারায় ও ঠান্ডা হয়ে যায় ; এমনকি সেই স্থানে তরুলতা , বৃক্ষ কিছুই জন্মায় না।
আয়াতঃ 035.020
সমান নয় অন্ধকার ও আলো।
Nor are (alike) the darkness (disbelief) and the light (Belief in Islâmic Monotheism).
وَلَا الظُّلُمَاتُ وَلَا النُّورُ
Wala alththulumatu wala alnnooru
YUSUFALI: Nor are the depths of Darkness and the Light;
PICKTHAL: Nor is darkness (tantamount to) light;
SHAKIR: Nor the darkness and the light,
KHALIFA: Nor are the darkness and the light.
২০। আর নয় অতল অন্ধকার ও আলো ;
২১। [ কাপুনি ধরা ঠান্ডা ] ছায়া এবং সূর্যের [ আরামদায়ক ] উষ্ণতা ;
২২। এবং জীবিত ও মৃতও সমান নয়। আল্লাহ্ যাকে খুশী শোনাতে পারেন। কিন্তু যারা কবরে [ সমাহিত ] রয়েছে ,তুমি তাদের শোনাতে পারবে না ৩৯০৫।
৩৯০৫। পূণ্যাত্মা ও পাপীর মধ্যে আর একটি শেষ তুলনা করা হয়েছে এই আয়াতের মাধ্যমে। পূণ্যাত্মাদের জীবিত এবং পাপীদের মৃতরূপে তুলনা করা হয়েছে। পূণ্যাত্মাদের আত্মিক জীবন আল্লাহ্র নূরে উদ্ভাসিত। তার সত্যকে সনাক্ত করতে ও ধারণ করতে সর্বদা সক্ষম। সুতারাং প্রতিনিয়ত তাদের আত্মিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে থাকে এবং তাদের জীবন পরিপূর্ণতা লাভ করে থাকে। কিন্তু যারা খোদাদ্রোহী পাপী, তারা মৃত ব্যক্তির তুল্য। মৃত ব্যক্তি যেমন ডাকলে উত্তর দেয় না তেমনি কাফেররাও সত্যের আহ্বান শুনতে পায় না ও জবাব দেয় না। কারণ এদের আত্মা আধ্যাত্মিক ভাবে মৃত [ Spiritually dead ]। একমাত্র অসীম ক্ষমতাধর আল্লাহ্ এসব মৃত আত্মাকে জীবন দান করার ক্ষমতা রাখেন। আল্লাহ্র পক্ষে সবই সম্ভব। রসুল, যাকে বিশ্বমানবের শিক্ষকরূপে প্রেরণ করা হয়েছে তিনি আশা করতে পারেন না যে, এ সব মৃত আত্মা [ Spiritually dead ] তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সত্যকে গ্রহণ করবে