৩৭৫৫। এই আয়াতটির মাধ্যমে সুশীল, ও সুরুচীশীল সামাজিক সংস্কৃতি শিক্ষা দান করা হয়েছে। রসুলের [সা ] যুগে দুর্বিনীত ও অভদ্র আরবদের যে সামাজিক আদব কায়দা শিক্ষা দান করা হয়েছে অদ্যাবধি যে কোনও সুশীল ও সংস্কৃতিবান সমাজের জন্য তা প্রযোজ্য। এই আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয়গুলি সংক্ষেপে নীচে তুলে ধরা হলো।
১) বন্ধুর গৃহে অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করো না।
২) যদি কোথাও নিমন্ত্রিত হও, তবে সময়ের বেশী পূর্বে গমন করবে না, যেনো খাদ্য প্রস্তুত করার জন্য অপেক্ষা করতে না হয়।
৩) যে সময়ে দাওয়াত সেই সময়কে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে যেনো তোমার উপস্থিতি হয় প্রত্যাশিত সময়ে।
৪) খাবার পরে নিমন্ত্রণ কর্তার সাথে বেশী আন্তরিক হতে চেষ্টা করো না , বিশেষ করে তার সাথে তোমার যদি সামাজিক দূরত্ব বেশী থাকে।
৫) খাবার পরে তার সাথে আজে বাজে গল্পে সময় নষ্ট করো না , কারণ তা অনেক সময়েই গৃহকর্তার বিরক্তি উৎপাদন করে থাকে।
৬) তোমার প্রকৃত আচরণ কি হওয়া উচিত উপলব্ধি করতে চেষ্টা করো। কারণ তোমার গৃহকর্তা হয়তো ভদ্রতার খাতিরে তোমাকে তোমার আচরণের উল্লেখ নাও করতে পারে। এসব সামাজিক রীতি নীতি সামাজিক মূল্যবোধ ও গুণের বিকাশ করে।
৩৭৫৬। মহিলাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বিভিন্ন সমাজে সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন হতে পারে। কিন্তু একটি সভ্য সমাজের সকল মহিলাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রাপ্য। সুশীল সমাজের এ এক সুনীতি। রসুল পত্নী, যারা মুসলিম ‘উম্মার মাতা’ তারা সাধারণ নারীদের অপেক্ষা অধিক সম্মানের যোগ্য। এই আয়াতে নবী পত্নীদের সম্মান প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ্ তাদের জন্য “Hijab” বা পর্দ্দার নির্দ্দেশ দান করেন। এ ভাবেই তাদের সাধারণ থেকে অসাধারণ ব্যক্তিত্বে রূপান্তর করা হয়। যাতে তাঁরা সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকেন। এই হিজাব শুধুমাত্র রসুল পত্নীদের জন্য প্রযোজ্য, পরপুরুষের সাথে পর্দার আড়াল থেকে কথা বলা শুধু তাঁদের জন্যই প্রযোজ্য। সাধারণ মুসলিম মহিলাদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। মুসলিম মহিলাদের জন্য নির্দ্দেশ আছে [ ৩৩ : ৫৯ ] আয়াতে।
৩৭৫৭। রসুল [ সা ] হচ্ছেন সারা বিশ্ব জাহানের রহমত স্বরূপ। পৃথিবীতে তাঁর যে অবস্থান, সে হিসেবে তিনি বিশ্ব মুসলিমের সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। এমন কিছু করা উচিত নয় যা তাঁর জন্য বিরক্তিকর। তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন শুধুমাত্র যে তাঁর জীবদ্দশাতেই প্রাপ্য তা নয় – তা পৃথিবীতে সর্ব যুগে সকল মুসলমানের করণীয় কর্তব্য। সে যুগেও তা যেমন প্রযোজ্য ছিলো আজও তা সমভাবে প্রযোজ্য এবং ভবিষ্যতেও তা সমভাবে থাকবে। কারণ তাঁর শিক্ষা ও ব্যক্তিত্ব আমাদের মাঝে আজও জীবন্ত। আজও তা সমভাবে প্রেরণা যোগায়। সুতারাং রসুলের [ সা ] মৃত্যুর পরে তাঁর বিধবা পত্নীদের বিবাহ করা অন্যদের জন্য হারাম করা হয়েছে। কারণ সমাজে তাদের রসুলের পত্নী হিসেবে বিশেষ সম্মানজনক অবস্থানের জন্য এবং রসুলের [ সা ] সম্মানের জন্য। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় রসুলের [ সা ] প্রতি এই সম্মান যোগ্য ভাবেই নিবেদন করা হয়েছিলো।
৩৭৫৮। “Aza” বা পীড়া দেওয়া , বিরক্ত করা , আঘাত দেয়া , অপমান করা, খারাপ ব্যবহার করা , কলঙ্ক লেপন করা ,খারাপ আচরণ করা , অনুভূতিতে আঘাত দান করা ইত্যাদি। পৃথিবীতে হযরত মুহম্মদ মুস্তফার [সা] আগমন ঐশি দায়িত্ব পালনের জন্য। পৃথিবীকে পাপের পথ থেকে বিরত করে আত্মিক মুক্তির পথ দেখানো ছিলো তাঁর ঐশি দায়িত্ব। এই গুরু দায়িত্ব যিনি সফলভাবে পালন করেছেন; অবশ্যই পৃথিবীর সকল লোকের নিকট তাঁর যোগ্য সম্মান প্রাপ্য। তিনি আজ আমাদের মাঝে নাই, কিন্তু তাঁর শিক্ষা প্রতিনিয়ত আমাদের আত্মিক শক্তি যোগায়, আত্মিক মুক্তির পথ দেখায়। সে হিসেবে তাঁর পত্নীরা যারা মুসলিম উম্মার মাতা হিসেবে পরিগণিত তারাও সম্মানের যোগ্য তবে অবশ্যই তা রসুলের [সা ] সমকক্ষ হবে না।
আয়াতঃ 033.054
তোমরা খোলাখুলি কিছু বল অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
Whether you reveal anything or conceal it, verily, Allâh is Ever AllKnower of everything.
إِن تُبْدُوا شَيْئًا أَوْ تُخْفُوهُ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
In tubdoo shay-an aw tukhfoohu fa-inna Allaha kana bikulli shay-in AAaleeman
YUSUFALI: Whether ye reveal anything or conceal it, verily Allah has full knowledge of all things.
PICKTHAL: Whether ye divulge a thing or keep it hidden, lo! Allah is ever Knower of all things.
SHAKIR: If you do a thing openly or do it in secret, then surely Allah is Cognizant of all things.
KHALIFA: Whether you declare anything, or hide it, GOD is fully aware of all things.
৫৪। তোমরা যা কিছু প্রকাশ কর অথবা গোপন কর, অবশ্যই আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন ৩৭৫৯।
৩৭৫৯। সংসার জীবনে মানুষ নিজ মনের অনুভূতিকে অনেক সময়েই প্রকাশ করে না। ব্যক্তি জীবনে অনেকেই বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য, চাটুকারিতার আশ্রয় নেয়। আবার অনেকেই প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভালোকে প্রতিহত করে। বাইরের থেকে আমরা এ সব প্রতারকদের বুঝতে না পারলেও মহান আল্লাহ্র নিকট কারও মনের ভাব গোপন থাকে না। ব্যক্ত , অব্যক্ত সকল চিন্তাধারাই আল্লাহ্র নিকট সুস্পষ্ট। তিনি তো সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।