পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০০৮। আবূ নুয়াইম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেনঃ আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া অরে কোন মাবুদ নেই, আমি ক্ষুধার জ্বালায় আমার পেটকে মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কোন সময় ক্ষুধার জালায় আমার পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদিন আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের বের হওয়ার পথে বসে থাকলাম। আবূ বকর (রাঃ) যেতে লাগলে আমি কুরআনের একটা আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি তাহলে আমাকে পরিতৃপ্ত করে কিছু খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছু করলেন না। কিছুক্ষণ পর উমর (রাঃ) যাচ্ছিলেন। আমি তাকে কুরআনের একটি আয়াত সমন্ধে প্রশ্ন করলাম। এ সময়ও আমি প্রশ্ন করলাম এ উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। আমার কোন ব্যবস্থা করলেন না।
তার পরক্ষনে আবূল কাসিম যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন এখং আমার প্রাণে কি অস্থিরতা বিরাজমান এবং আমার চেহারার অবস্থা থেকে তিনি তা আচ করতে পারলেন। তারপর বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি হাযির আছি। তিনি বললেনঃ তুমি আমার সঙ্গে চল। এ বলে তিনি চললেন, আমিও তার অনুসরণ করলাম। তিনি ঘরে ঢূকবার অনুমতি চাইলেন এবং আমার্যে ঢুকবার অনুমতি দিলেন। তারপর তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালার মধ্যে কিছু পরিমান দুধ পেলেন। তিনি বললেনঃ এ দুধ কোথা থেকে এসেছে? তাঁরা বললেনঃ এটা আপনাকে অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা হাদিয়া দিয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ! তুমি সুফফাবাসীদের কাছে গিয়ে তাদেরকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো।
রাবী বলেনঃ সুফফাবাসীরা ইসলামের মেহমান ছিলেন। তাদের কোন পরিবার ছিল না এবং তাদের কোন সম্পদ ছিল না এবং তাদের কারো উপর নির্ভরশীল হওয়ারও সুযোগ ছিল না। যখন কোন সাদাকা আসত তখন তিনি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি এর থেকে কিছুই গ্রহন করতেন না। আর যখন কোন হাদিয়া আসত, তখন তার কিছু অংশ তাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং এর থেকে নিজেও কিছু রাখতেন। এর মধ্যে তাদেরকে শরীক করতেন। এ আদেশ শুনে আমার মনে কিছুটা হতাশা এলো। মনে মনে ভাবলাম যে, এ সামান্য দুধ দ্বারা সুফফাবাসীদের কি হবে? এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতো। এটা পান করে আমি শরীরে কিছুটা শক্তি পেতাম।
এরপর যখন তাঁরা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমিই যেন তা তাঁদেরকে দেই, আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ না মেনে কোন উপায় নেই। তাই তাঁদের কাছে গিয়ে তাদেরকে ডেকে আনলাম। তারা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তাঁরা এসে ঘরে আসন গ্রহন করলেন। তিনি বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, আমি হাযির ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ তুমি পেয়ালাটি নাও আর তাদেরকে দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি তা পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও পরিতৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন কি আমি এরুপে দিতে দিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছলাম। তাঁরা সবাই তৃপ্ত হয়েছিলেন।
তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়ালাটি নিজ হাতে নিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। আর বললেনঃ হে আবূ হির! আমি বললাম, আমি হাযির, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ এখন তো আমি আর তুমি আছি। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি ঠিক বলছেন। তিনি বললেনঃ এখন তুমি বসে পান কর। তখন আমি বসে কিছু পান করলাম। তিনি বললেনঃ তুমি আরও পান কর। আমি আরও পান করলাম। তিনি বারবার আমাকে পান করার নির্দেশ দিতে লাগলেন। এমন কি আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, আর না। যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, তার কসম। (আমার পেটে) আর পান করার মত জায়গা আমি পাচ্ছি না। তিনি বললেনঃ তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিয়ে দিলাম। তিনি আলহামদুলিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলে বাকীটা পান করলেন।
হাদিস নম্বরঃ ৬০০৯ | 6009 | ٦۰۰۹
পরিচ্ছদঃ ২৬৯৯. নাবী (সাঃ) ও তাঁর সহাবীগণের জীবন যাপন কিরূপ ছিল এবং তাঁরা দুনিয়া থেকে কী অবস্থায় বিদায় নিলেন
৬০০৯। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … কায়স (রহঃ) বর্ণনা করেন, আমি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমিই আরবের সর্বপ্রথম ব্যাক্তি, আল্লাহর পথে যে তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা যুদ্ধকালীন নিজেদেরকে যে দুবলাহ গাছের পাতা ও বাবলা ছাড়া খাবারের কিছুই ছিল না, অবস্থায় দেখেছি। কেউ কেউ বকরীর পায়খানার ন্যায় পায়খানা করতেন। যা ছিল সম্পূর্ন শুকনো। অথচ এখন আবার বনূ আসাদ (গোত্র) এসে ইসলামের উপর চলার জন্য আমাকে তিরস্কার করছে। এখন আমি যেন শংকিত আমার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ।
হাদিস নম্বরঃ ৬০১০ | 6010 | ٦۰۱۰