তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ কাঁটাগুলি সা’দানে কাঁটার মতই হবে, তবে তা যে কত বড় হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সে কাটাগুলি মানুষকে তাদের আমল অনুসারে ছিনিয়ে নেবে। তাদের মাঝে কতিপয় লোক এমন হবে যে তারা তাদের আমলের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর কতিপয় লোক এমন হবে যে তাদের আমল হবে সরিষা তুল্য নগণ্য। তবুও তারা নাজাত পাবে। এমন কি আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের বিচার কার্য সম্পাদন করবেন এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাক্ষ্যদাতাদের থেকে যাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার ইচ্ছা করবেন আল্লাহ তাদেরকে বের করার জন্য ফেরেশতাদেরকে আদেশ করবেন। সিজদার চিহ্ন থেকে ফেরেশতারা তাদেরকে চিনতে পারবে।
আর আল্লাহ তায়ালা বনী আদমের ঐ সিজদার স্থানগুলিকে জাহান্নামের জন্য হারাম কলে দিয়েছেন। সুতরাং ফেরেশতারা তাদেরকে এমতাবস্হায় বের করবে যে, তখন তাদের দেহ থাকবে কয়লার মত। তারপর তাদের দেহে পানি ঢেলে দেয়া হবে। যাকে বলা হয় -মাউল হায়াত- সঞ্জীবনী পানি। সাগরের ঢেউয়ে ভেসে আসা আবর্জনায় যেরুপ উদ্ভিদ জন্মায়- পরে এগুলো যেরুপ সজীব হয় তারাও সেরুপ সজীব হয়ে যাবে। এ সময় জাহান্নামের দিকে মুখ করে এক ব্যাক্তি দাড়িয়ে থাকবে আর বলবে, হে প্রভু! জাহান্নামের হাওয়া আমাকে ঝলসে দিয়েছে, এর জ্বলন্ত অঙ্গার আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে সূতরাং তুমি আমার চেহারাটা জাহান্নামের দিক থেকে ঘুরিয়ে দাও। এভাবে সে আল্লাহকে ডাকতে থাকবে।
তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ আমি যদি তোমাকে এটা দিয়ে দেই তবে আর তুমি অন্যটির প্রার্থনা করবে? লোকটি বলবে, না। আল্লাহ, তোমার ইজ্জতের কসম! আর অন্যটি চাইব না। সুতরাং তার চেহারাটা জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এরপর সে বলবে, হে প্রভূ! তুমি আমাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করে দাও। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি কি বলনি যে, তুমি আমার কাছে আর অন্য কিছু চাইবে না? আফসোস তোমার জন্য আদম সন্তান! তুমি কতই না গাদ্দার? সে এরূপই প্রার্থনা করতে থাকবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ সম্ভবত আমি যদি তোমাকে এটা দিয়ে দেই তবে তুমি অন্য আরেকটি আমার কাছে প্রার্থনা করবে।
লোকটি বলবে, না, তোমার ইজ্জতের কসম! অন্যটি আর চাইব না। তখন সে আল্লাহ তা’আলার সঙ্গে এই মর্মে ওয়াদা করবে যে, সে আর কিছুই চাইবে না। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করবেন। সে যখন জান্নাতের মধ্যস্থিত নিয়ামতগুলি দেখতে পাবে, তখন আল্লাহ যতক্ষন চাইবেন ততক্ষন সে চুপ থাকবে। এরূপই সে বলতে থাকবে, হে প্রভু! তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি বল নাই যে তুমি আর কিছু চাইবে না? আফসোস তোমার জন্য হে আদম সন্তান! তুমি কতইনা গাদ্দার।
লোকটি বলবে, হে প্রভু! তুমি আমাকে তোমার সৃষ্ট জীবের মাঝে সবচে হতভাগ্য কর না। এভাবে সে প্রার্থনা করতে থাকবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা হেসে ফেলবেন। আর আল্লাহ তাআলা যখন হেসে ফেলবেন, তখন তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে দিবেন। এরপর সে যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন তাকে বলা হবে, তোমার যা ইচ্ছে হয় আমার কাছে চাও। সে (বিভিন্ন) আরয করবে, এমনকি তার আকাঙ্ক্ষা নিঃশেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ এগুলি তোমার এবং এর সমপরিমানও তোমার।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ ঐ লোকটি হচ্ছে সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশকারী। রাবী বলেন যে, এ সময় আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে বসা ছিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর বর্ণনার মাঝে আবূ সাঈদ খুদরীর নিকট কোনরূপ পরিবর্তন ধরা পড়েনি। এমন কি তিনি যখন هَذَا لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ পর্যন্ত বর্ণনা করলেন, তখন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ এটি তোমার এবং দশ গুন বলেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি مِثْلُهُ مَعَهُ স্মরণ রেখেছি।
হাদিস নম্বরঃ ৬১২৭ | 6127 | ٦۱۲۷
পরিচ্ছদঃ ২৭৩৪. আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি। আবদুল্লাহ ইবন যায়িদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা হাউযের কাছে আমার সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত সবর করতে থাকবে।
৬১২৭। ইয়াহইয়া ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের আগে হাউয এর কাছে পৌছব।
অন্য সনদে আমর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের আগে হাউয এর কাছে গিয়ে পৌছব। আর (ঐ সময়) তোমাদের কতিপয় লোককে নিঃসন্দেহে আমার সামনে উঠানো হবে। আবার আমার সামনে থেকে তাদেরকে পৃথক করে নেয়া হবে। তখন আমি আরয করব, প্রভু হে! এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, তোমার পরে এরা কি কীর্তি করেছে তাতো তুমি জানো না। আসিম আবূ ওয়াঈল থেকে তার অনুসরণ করেছে। এবং হুসায়ন হুযায়ফা সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।