এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কূপের কাছে রাখলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার সাথীদের থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করেন। সেগুলোকে পরিছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয় এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ণ করলেন।
তারপর সেগুলো যখাস্থানে স্থাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরীল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না।
দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেন, তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পুত্র। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরীল! জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল।
এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসাদ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরীল! এটি কি? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন।
তারপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, মারহাবান ওয়া আহলান।
তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেন তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নাবীগণ রয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করেছেন।
তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহিস সালাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নাবী যায় নাম আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আলাইহিস সালাম) আছেন সপ্তম আসমানে।
সে সময় মূসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারনা করিনি আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এত ঊর্ধ্বে আরোহণ করান হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতিনিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো।
তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেন। আর মূসার কাছে পৌছলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মাত তা আদায়ে সক্ষম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যাঁ। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন।