রুকু – ৩
৩২। সে বলেছিলো, ” হে পরিষদবর্গ ! আমার এই ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দাও। কোন ব্যাপারে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না, তোমাদের উপস্থিতি ছাড়া।”
৩৩। তারা বলেছিলো, ” আমরা তো শক্তিতে সমৃদ্ধ প্রচন্ড যুদ্ধে পারদর্শী। কিন্তু আপনি হুকুম দেয়ার মালিক। সুতারাং ভেবে বলুন আপনি কি হুকুম দেবেন। ”
৩৪। সে বলেছিলো, ” রাজা-বাদশারা যখন কোন দেশে [ বিজয়ী রূপে ] প্রবেশ করে, তখন সে দেশ লুণ্ঠন করে ৩২৭১। সেখানের মর্যদাবান ব্যক্তিদের লাঞ্ছিত করে। এরাও এরূপই করবে।
৩২৭১। এই আয়াতের মাধ্যমে রাণী বিলকিসের চরিত্রের বিশেষ দিক প্রকাশিত করা হয়েছে। রাণী শাসক হিসেবে ক্ষমতা, ঐশ্বর্য্য ,সম্মান , প্রজাদের আনুগত্য সব কিছুই পূর্ণমাত্রায় ভোগ করছিলেন। কিন্তু তিনি পরিষদদের সাথে আলোচনা ব্যতীত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন না। তাঁর পরিষদবর্গ ছিলো তাঁর একান্ত অনুগত এবং তাঁর আদেশ মানার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। তাঁর প্রজাবর্গ ছিলো সাহসী, অনুগত ও তৃপ্ত। যদিও তাঁরা দেশকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত ছিলো। কিন্তু রাণী বিলকিস সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে ছিলেন দূরদর্শী ও বিচক্ষণ। তিনি তাঁর দেশকে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত করতে চান নাই। তিনি তাঁর বিচক্ষণতার দ্বারা অনুধাবন করেছিলেন যে, সুলাইমান ঠিক অন্য আর সকল নৃপতির মত অস্ত্রের মাধ্যমে দেশ জয়ের পক্ষপাতি নন। সম্ভবতঃ বিলকিসের হৃদয় ছিলো পবিত্র, তাই আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো পূর্ব থেকেই সে হৃদয়ে প্রবেশ করেছিলো , যার দরুণ সত্য ও মিথ্যাকে প্রভেদ করার ক্ষমতা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাঁর হৃদয়ে তিনি লাভ করেছিলেন ; যদিও তাঁর রাজত্বে তাঁর সকল প্রজা ছিলো মোশরেক। রাণী ছিলেন একজন সুদক্ষ শাসক এবং প্রজাবৎসল। প্রজাদের জন্য তাঁর ছিলো অপরিমেয় স্নেহ ভালোবাসা। সুতারাং প্রজারাও তাদের রাণীকে যৎপরনাস্তি ভালোবাসতো। যে কোন অবস্থাতেই তারা রাণীর পাশে অবস্থান নেবে। সুতারাং যুদ্ধের রাস্তায় না যেয়ে রাণী সিদ্ধান্ত নিলেন যে, উপঢৌকন প্রেরণ করা হোক। সম্ভবতঃ রাণীর হৃদয়ে আধ্যাত্মিক আলোর অনুপ্রবেশ ঘটেছিলো – কারণ তাঁর সিদ্ধান্ত ছিলো মানবিক ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন। রাণী বিলকিসের চরিত্রে দূরদর্শিতা ও নারীর মমত্বের রূপ লক্ষ্য করা যায় কারণ প্রজাদের যুদ্ধংদেহী মনোভাব সত্বেও তিনি শান্তির পথে তাদের টেনে নিতে সক্ষম ছিলেন।
আয়াতঃ 027.035
আমি তাঁর কাছে কিছু উপঢৌকন পাঠাচ্ছি; দেখি প্রেরিত লোকেরা কি জওয়াব আনে।
”But verily! I am going to send him a present, and see with what (answer) the messengers return.”
وَإِنِّي مُرْسِلَةٌ إِلَيْهِم بِهَدِيَّةٍ فَنَاظِرَةٌ بِمَ يَرْجِعُ الْمُرْسَلُونَ
Wa-innee mursilatun ilayhim bihadiyyatin fanathiratun bima yarjiAAu almursaloona
YUSUFALI: “But I am going to send him a present, and (wait) to see with what (answer) return (my) ambassadors.”
PICKTHAL: But lo! I am going to send a present unto them, and to see with what (answer) the messengers return.
SHAKIR: And surely I am going to send a present to them, and shall wait to see what (answer) do the messengers bring back.
KHALIFA: “I am sending a gift to them; let us see what the messengers come back with.”
৩৫।” আমি তার জন্য উপঢৌকন পাঠাচ্ছি , দেখি [ আমার ] দূতেরা কি [ উত্তর ] আনে। ”
৩৬। দূতেরা যখন সুলেমানের নিকট পৌঁছুলো, সে বলেছিলো, ” তোমরা কি আমাকে প্রচুর সম্পদ দিতে চাও ? কিন্তু আল্লাহ্ আমাকে যা দিয়েছেন তা , তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন তা থেকে উত্তম। অথচ তোমরাই তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ করছো ৩২৭২।
৩২৭২। বেচারী বিলকিস্ – তাঁর ধারণা ছিলো যে মেয়েলী কৌশল দ্বারা সুলাইমানকে তিনি শান্ত করতে পারবেন, এবং তাঁর যুদ্ধংদেহী মনোভাব সম্পন্ন প্রজাকূলকে নিবৃত করতে পারবেন। কিন্তু রাণীর এই কৌশল সুলাইমানের উপরে উল্টো ভাবে কাজ করেছিলো। তিনি একে অপমান বলে গ্রহণ করলেন। কারণ সুলাইমানের আহ্বান কোনও রাজ্য বিস্তারের আকাঙ্খা ছিলো না। তা ছিলো সত্য ধর্মের প্রতি, এক আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্যের আহ্বান। মহত্তর, সত্যের আহ্বানের পরিবর্তে উপঢৌকন , হাস্যকর ব্যাপার বৈকি। তিনি উপঢৌকন প্রত্যাখান করেন এবং বলেন যে, ” এ সব ঝকমকে তুচ্ছ বস্তু তোমাদের হৃদয়ে আনন্দ সঞ্চার করুক। আমার ওসবে প্রয়োজন নাই, কারণ আল্লাহ্ আমাকে জাগতিক প্রচুর ধনসম্পদ দান করেছেন। তা ব্যতীত এমন কিছু দিয়েছেন যা পার্থিব সম্পদের থেকে শ্রেষ্ঠ।” এখানে তিনি আল্লাহ্র হেদায়েতের আলোর কথা বলেছেন।
আয়াতঃ 027.036
অতঃপর যখন দূত সুলায়মানের কাছে আগমন করল, তখন সুলায়মান বললেন, তোমরা কি ধনসম্পদ দ্বারা আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে প্রদত্ত বস্তু থেকে উত্তম। বরং তোমরাই তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে সুখে থাক।
So when (the messengers with the present) came to Sulaimân (Solomon), he said: ”Will you help me in wealth? What Allâh has given me is better than that which He has given you! Nay, you rejoice in your gift!”