বর্ণনাকারী বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) স্থান পরিবর্তন করেন নি। খিযির (আলাইহিস সালাম) অগ্রসর হওয়ার ইচ্ছা করলেন। এমতাবস্থায় খিযির (আলাইহিস সালাম) নৌকা বিদীর্ণ করে দিলেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে বললেন, এরা আমাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে তাদের নৌকায় নিয়ে এল আর আপনি আরোহীদের নিমজ্জিত করার জন্য নৌকাটি বিদীর্ণ করে দিলেন। আপনি তো এক গর্হিত কাজ করলেন।
তারপর তারা আবার চলতে লাগলেন। (পথে) এবং দেখতে পেলেন যে, একটি বালক কতগুলো বালকের সাথে খেলা করছে। খিযির (আলাইহিস সালাম) সে বালকটির শিরশ্ছেদ করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন অপরাধ ছাড়াই? আপনি তো এক গর্হিত কাজ করে ফেলেছেন। তিনি বললেন, আমি কি বলিনি যে তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেনা? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি, তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না। আমার ওজরের চূড়ান্ত হয়েছে।
তারপর তারা চলতে লাগলেন। তারা এক জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছলেন এবং তাদের কাছে খাদ্য চাইলেন। তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর সেখানে তারা এক পতনম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেল। বর্ণনাকারী হাতের ইশারায় দেখালেন যে, এভাবে খিযির (আলাইহিস সালাম) পতনম্মুখ প্রাচীর সোজা করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) খিযির (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, আমরা যখন এ জনপদে প্রবেশ করছিলাম, তখন জনপদের অধিবাসীরা আমাদের মেহমানদারী করেনি এবং আমাদের খেতে দেয়নি। এ জন্য আপনি ইচ্ছা করলে পারিশ্রমিক গ্রহন করতে পারতেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল।
যে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধরতে পারনি আমি তার তারপর্য ব্যাখ্যা করছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) যদি আরেকটু ধৈর্যধারণ করতেন তবে আমরা তাদের দুজনের ঘটনাবলী সম্পর্কে আরও জানতে পারতাম। সাইদ বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) وراهم ملك এর স্থানে أَمَامَهُمْ مَلِكٌ পড়তেন। অর্থ তাদের সম্মুখে ছিল এক রাজা। , যে বল প্রয়োগে ভাল নৌকা ছিনিয়ে নিত। আর বালকটি ছিল কাফের”।
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৯ | 4369 | ٤۳٦۹
পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ বল, আমি কি তোমাদের সংবাদ দিব কর্মে ক্ষতিগ্রস্তদের?
৪৩৬৯। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … মূসায়াব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে[১] জিজ্ঞেস করলাম, قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالأَخْسَرِينَ أَعْمَالاً এ আয়াতে যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা ‘হারুরি’ [২] গ্রামের অধিবাসী। তিনি বললেন, না। তারা হল ইহুদি ও খ্রিষ্টান। কেননা ইহুদিরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং খ্রিষ্টানরা জান্নাতকে অস্বীকার করত এবং বলত, সেখানে কোন খাদ্য পানীয় নেই। আর হারুরিরা হচ্ছে, যারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা করার পরও তা ভঙ্গ করে। সা’দ তাদের বলতেন ফাসিক।
১। সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস।
২। কুফার নিকটবর্তী একটি গ্রামের নাম। আলি (রাঃ) এর বিরুদ্ধে ‘খারিজী সম্প্রদায়ের’ আন্দোলন এ গ্রাম থেকেই শুরু হয়।
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭০ | 4370 | ٤۳۷۰
পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তারা এমন যারা অস্বীকার করে নিজেদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী এবং তার সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়।
৪৩৭০। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন একজন খুব মোটা ব্যাক্তি আসবে। কিন্তু সে আল্লাহর নিকট মশার ডানার চেয়েও ক্ষুদ্র হবে। তারপর তিনি বলেন, পাঠ করো, ‘কিয়ামতের দিন তাদের কাজের কোন গুরুত্ব রাখব না। ইয়াহিয়াহ ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আবূ যিনাদ থেকে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত আছে।
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭১ | 4371 | ٤۳۷۱
পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিন সম্বন্ধে”…………
সুরা মরিয়ম
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তারা আজ (দুনিয়ায়) কোন নাসীহাত শুনছে না এবং কোন নিদর্শন দেখছে না এবং তারা প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। অথচ ক্বিয়ামাতের দিন কাফিরেরা কত স্পষ্ট শুনবে ও দেখবে। لَأَرْجُمَنَّكَ আমি অবশ্যই তোমাকে প্রস্তরাঘাতে বিচূর্ণ করে দিব। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ لَأَشْتِمَنَّكَ অবশ্যই আমি তোমাকে গালি দিব। رِئِيْنًا দৃশ্য। ইবনু উয়াইনা (রহঃ) বলেন, تَوُزُّهُمْ শায়ত্বন তাদের পাপের দিকে চরমভাবে প্ররোচিত করছে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, إِدًّا বক্রতা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, وِرْدًا তৃষ্ণার্ত। أَثَاثًا মাল। إِدًّا কঠোর বাক্য। رِكْزًا ফিসফিস আওয়াজ। عِتِيَّا অবাধ্য। بُكِيًّا ক্রন্দনকারী একটি দল। صِلِيًّا (প্রবেশ করা)। صَلِيَ يَصْلَى এর মাসদার। نَدِيًّا এবং النَّادِيْ বৈঠকখানা।
৪৩৭১। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আবূ সাইদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন মৃত্যুকে একটি ধুসর রঙের মেষের আকৃতিতে আনা হবে। তখন একজন সম্বোধনকারী ডাক দিয়ে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! তখন তারা ঘাড় মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। সম্বোধনকারী বলবেন, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এতো মৃত্যু। কেননা প্রত্যেকেই তাকে দেখেছে। তারপর সম্বোধনকারী আবার ডেকে বলবেন, হে জাহান্নামবাসী! জাহান্নামীরা মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। তখন সম্বোধনকারী বলবে, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এতো মৃত্যু। কেননা প্রত্যেকেই তাকে দেখেছে। তারপর (সেটি) যবেহ করা হবে। আর ঘোষক বলবেন, হে জান্নাতবাসী! স্থায়ী ভাবে এখানে থাক। তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই। আর হে জাহান্নামবাসী! চিরদিন এখানে থাক। তোমাদের আর মৃত্যু নেই। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন, أَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ “তাদের সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে অথচ এখন তারা গাফিল, তারা অসতর্ক দুনিয়াবাসি, অবিশ্বাসী”।