খিযির (আলাইহিস সালাম) যে বালকটিকে হত্যা করেছিলেন, সে বালকটির চেয়ে পরবর্তী বালকটির প্রতি তার পিতামাতা অধিক স্নেহশীল ও দয়াশীল হবেন। ইবনু জুরাইয বলেন) সাইদ ব্যতীত অন্য সকল বর্ণনাকারী বলেছেন যে, এর অর্থ হল, সে বালকটির পরিবর্তে আল্লাহ তাদের একটি কন্যা সন্তান দান করেন। দাউদ ইবনু আবূ আনিস বলেন, এখানে কন্যা সন্তান বোঝানো হয়েছে।
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৮ | 4368 | ٤۳٦۸
পরিচ্ছদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ‘যখন তারা আরও অগ্রসর হল, মুসা তার সাথীকে বললেন, আমাদের নাস্তা আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। (বলল আপনি কি লক্ষ করেছেন, আমরা যখন শিলা খণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তান এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল।) মাছটি আশ্চর্যজনক ভাবে নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল। صنعا কাজ, حولا ঘুরে যাওয়া, পরিবর্তন হওয়া । قال ذلك ما كنا نبغ فارتدا على آثارهما قصصا মুসা বললেন, আমরা তো সে স্থানটি অনুসন্ধান করছিলাম। এরপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। إمرا و نكرا উভয়ের একি অর্থ, অন্যায় কাজ ينقض শব্দের অর্থ নিপতিত হবে। لتخذت واتخذت উভয়ের একই অর্থ। رحما শব্দটি رحم থেকে গঠিত। অত্যধিক দয়া ও করুনা। কারও মতে এটা رحيم থেকে গঠিত। মক্কাকে বলা হয় أم رحم যেহেতু সেখানে রহমত নাযিল হয়।
৪৩৬৮। কুতায়বা ইবনু সাইদ (রহঃ) … সাইদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বললাম, নওফুল বাক্কালির ধারনা, বনী ইসরাইলের মূসা, (আলাইহিস সালাম) ওয়া সাল্লাম এর সাথী মূসা একই ব্যাক্তি নয়। এ কথা শুনে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শত্রু মিথ্যা বলেছে। উবায় ইবনু কা’আব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একদা মূসা (আলাইহিস সালাম) বনী ইসরাইলের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যাক্তি কে? তিনি বললেন, আমি। আল্লাহ তার একথায় অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা, তিনি এ কথাটি আল্লাহর দিকে নিসবত করেন নি। আল্লাহ তার উপর ওহী নাযিল করে বললেন, (হে মূসা!) দু’সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে। সে তোমার চাইতে অধিক জ্ঞানী। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে রব! আমি তার কাছে কিভাবে যেতে পারি? আল্লাহ বললেন, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে রওয়ানা হও। যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই তার অনুসরন করবে।
মূসা (আলাইহিস সালাম) রওয়ানা হলেন এবং তার সাথে ছিল তার খাদেম ইয়ুশা ইবনু নুন। তারা মাছ সাথে নিলেন। তারা চলতে চলতে সমুদ্রের তীরে একটি বিশাল শিলা খণ্ডের কাছে পৌঁছে গেলেন। সেখানে তারা বিশ্রামের জন্য থামলেন। বর্ণনাকারী বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) শিলা খণ্ডের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলেন। সুফিয়ান বলেন, আমর ইবনু দ্বীনার ছাড়া সকল বর্ণনাকারী বলেছেন, শিলা খণ্ডের তলদেশে একটি ঝরনা ছিল। তাকে হায়াত বলা হত। কেননা যে মৃতের উপর তার পানি পড়ে, সে অমনি জীবিত হয়ে উঠে। সে মাছটির উপরও ওই ঝরনার পানি পড়ল এবং সাথে সাথে সে লাফিয়ে উঠল। তারপর মাছটি বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেল। এরপরে মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন জেগে উঠলেন। “মূসা তার খাদেমকে বললেন, আমাদের নাস্তা আন। আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে স্থান সম্পর্কে তাকে বলা হয়েছিল সে স্থান অতিক্রম করার পর থেকেই তিনি ক্লান্তি অনুভব করছিলেন।
তার খাদেম ইউশা ইবনু নুন তাকে বললেন, ‘আপনি কি লক্ষ করেছেন আমরা যখন শিলা খণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে সে স্থানে প্রত্যাবর্তন করলেন। তারা সমুদ্রে মাছটির চলে যাওয়ার জায়গায় সুড়ঙ্গের মত দেখতে পেলেন। যা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাথী যুবক কে আশ্চর্যান্বিত করে দিল। যখন তারা শিলা খণ্ডের কাছে পৌঁছলেন, সেখানে এক ব্যাক্তিকে কাপড় আবৃত অবস্থায় দেখতে পেলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে সালাম দিলেন। তিনি বললেন, তোমাদের এলাকায় সালামের প্রথা কিভাবে এল? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি মূসা। তিনি (খিযির) বললেন, বনী ইসরাইলের মূসা? মূসা (আলাইহিস সালাম) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তারপর বললেন, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন – এ শর্তে আমি আপনার অনুসরন করব কি?
খিযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে মূসা! তুমি আল্লাহ কর্তৃক যে জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছ তা আমি (সম্পূর্ণভাবে) জানিনা। আর আমি আল্লাহর থেকে যে ‘ইল্ম’ লাভ করেছি তাও (সম্পূর্ণভাবে) তুমি জাননা। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি আপনার অনুসরন করব। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আচ্ছা তুমি যদি আমার অনুসরন করই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেনা, যতক্ষণ না আমি সে বিষয়ে তোমাকে কিছু বলি।
তারপর তারা সমুদ্রের তীর দিয়ে চলতে লাগলেন। একটি নৌকা তাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। নৌকার লোকেরা খিযির কে দেখে চিনতে পারল। তারা বিনা পারিশ্রমিকে তাদের নৌকায় উঠিয়ে নিল। তারা নৌকায় আরোহণ করলেন। এ সময় একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার অগ্রভাগে বসলো। পাখীটি সমুদ্রে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। খিযির (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, তোমার, আমার এবং সৃষ্টি জগতের জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় অতখানি, যতখানি এ চড়ুই পাখি তার ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি উঠাল।