বর্ণনাকারী বলেন, আমর আমাকে বলেছেন যে, যেন পাথরের মধ্যে চিহ্ন এরূপ হয়ে রইল, বলে তিনি তার দুটি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তার পাশের আঙ্গুলগুলো একসাথে মিলিয়ে বৃত্তাকার বানিয়ে দেখালেন। (মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন) ‘আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’। ইউশা বললেন, আল্লাহ আপনার থেকে ক্লান্তি দূর করে দিয়েছেন। সাইদের বর্ণনায় এ কথার উল্লেখ নেই। খাদেম তাকে মাছের পালিয়ে যাবার সংবাদ দিলেন। তারপর তারা উভয়ে ফিরে এলেন এবং খিযির (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। বর্ণনাকারী ইবনু যুরাইজ বলেন, উসমান ইবনু আবূ সুলাইমান আমাকে বলেছেন যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) খিজির (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন সমুদ্রের বুকে সবুজ বিছানার উপর। সাইদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বলেন, তিনি চাঁদর মুড়ি দিয়েছিলেন। চাঁদরের এক পাশ ছিল তার দুপায়ের নিচে এবং অন্য পাশ ছিল তার মাথার উপর।
মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে সালাম দিলেন। তিনি তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে বললেন, আমার এ অঞ্চলেও কি সালাম আছে? তুমি কে? তিনি বললেন, আমি মূসা। খিজির (আলাইহিস সালাম) বললেন, বনী ইসরাইলের মূসা? উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার ব্যপার কি? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি এসেছি, “সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন” তিনি বললেন, তোমার কাছে যে তাওরাত রয়েছে তা কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? তোমার কাছে তো ওহী আসে। হে মূসা! আমার কাছে যে জ্ঞান আছে তা তোমার জানা সমীচীন নয়। আর তোমার কাছে যে জ্ঞান আছে তা আমার জানা উচিত নয়। এ সময় একটি পাখি এসে তার ঠোঁট দিয়ে সমুদ্র থেকে পানি নিল। (এ দৃশ্য দেখে) খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহর জ্ঞানের কাছে আমার ও তোমার জ্ঞান এতটুকু। যতটুকু এ পাখীটি সমুদ্র হতে তার ঠোঁটে করে নিয়েছে।
অবশেষে তারা উভয়ে নৌকায় আরোহণ করলেন। তারা ছোট খেয়া নৌকা পেলেন, যা এ পাড়ের লোকদের ও পাড়ে এবং ও পাড়ের লোকদের এ পাড়ে বহন করত। নৌকার লোকেরা খিযির কে চিনতে পারল। তারা বলল, আল্লাহর নেক বান্দা। ইয়ালা বলেন, আমরা সাইদকে জিজ্ঞেস করলাম, তারা কি খিযির সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (তারা বলল) আমরা তাকে পারিশ্রমিক নিয়ে বহন করব না। এরপর খিযির (আলাইহিস সালাম) তাদের নৌকা (এর একস্থান) বিদীর্ণ করে দিলেন এবং একটি গোঁজ দিয়ে তা বন্ধ করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কি আরোহীদের নিমজ্জিত করার জন্য নৌকাটি বিদীর্ণ করলেন? আপনি তো গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।
মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, اِمْرًا অর্থাৎ নিষিদ্ধ কাজ। তিনি (খিযির) বললেন, আমি কি বলিনি যে তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারন করতে পারবেনা?’ প্রথমটি ছিল মূসা (আলাইহিস সালাম) এর পক্ষ থেকে ভুল। দ্বিতীয়টি শর্তস্বরূপ এবং তৃতীয় ইচ্ছাকৃত বলে গণ্য। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। (এরপর) তারা এক বালকের সাক্ষাত পেলেন, খিযির তাকে হত্যা করে ফেললেন। ইয়ালা বলেন, সাইদ বলেছেন, খিযির (আলাইহিস সালাম) বালকদের খেলাধুলা করতে দেখতে পেলেন। তিনি একটি চটপটে কাফের বালককে ধরলেন এবং তাকে পাশে শুইয়ে যবেহ করে ফেললেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, ’আপনি কি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন অপরাধ ছাড়াই?’ সে তো কন গুনাহের কাজ করেনি।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) এখানে زَاكِيَّةً পড়তেন। زَاكِيَّةً ভাল মুসলমান। যেমন তুনি পড় غُلَامً زَكِيَّا। তারপর তারা দুজন চলতে লাগল এবং একটি পতনোম্মুখ প্রাচীর পেল। খিযির (আলাইহিস সালাম) সেটাকে সোজা করে দিলেন। সাইদ তার হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন এরুপ, এবং তিনি তার হাত উঠিয়ে সোজা করলেন। ইয়ালা বলেন, আমার মনে হয় সাইদ বলেছিলেন, খিযির (আলাইহিস সালাম) প্রাচীরের উপর দুহাতে স্পর্শ করলেন এবং প্রাচীর দাঁড়িয়ে গেল। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا আপনি ইচ্ছা করলে এ জন্য পারিশ্রমিক গ্রহন করতে পারতেন। সাইদ বলেন, أَجْرًا দ্বারা এখানে খাদ্য দ্রব্য বোঝান হয়েছে। وَكَانَ وَرَآءَهُمْ এর অর্থ তাদের সামনে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতে أَمَامَهُمْ (তাদের সামনে ছিল এক রাজা) পড়েন। সাইদ ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারীরা সে রাজার নাম বলেছেন “হুদাদ ইবনু বুদাদ” আর হত্যা কৃত বালকটির নাম ছিল জাইসুর।
সে রাজা প্রত্যেকটি ভাল নৌকা বল প্রয়োগে ছিনিয়ে নিত। খিযির (আলাইহিস সালাম) এর নৌকা বিদীর্ণ করার উদ্দেশ্য ছিল , (সে অত্যাচারী রাজা) ত্রুটি যুক্ত নৌকা দেখলে তা ছিনিয়ে নিবে না। তারপর যখন অতিক্রম করে গেল, তখন তাদের নৌকা মেরামত করে নিল এবং তা ব্যবহার যোগ্য করে তুলল। কেউ বলে নৌকার ছিদ্রটা মেরামত করেছিল সীসা গলিয়ে। আবার কেউ বলে, আলকাতরা মিলিয়ে নৌকা মেরামত করেছিল। “তার পিতা মাতা ছিল মুমিন”। আর সে বালকটি ছিল কাফের। আমি আশংকা করলাম যে সে বিদ্রোহচরন ও কুফরির দ্বারা তাদের বিব্রত করবে। অর্থাৎ তার স্নেহ ভালবাসায় তাদের তার ধর্মের অনুসারী করে ফেলবে। এরপর আমি চাইলাম যে তাদের প্রতিপালক যেন তাদের ওর পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি ভালবাসায় ঘনিষ্টতর।