রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রথমবারের এই অপরাধ টি ভুলবশত হয়েছিল। তিনি বললেন, এরপরে একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার পাশে বসে ঠোঁট দিয়ে সমুদ্রে এক ঠোকর মারল। খিযির (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, এ সমুদ্র হতে পাখিটি যতটুকু পানি ঠোঁটে নিল, আমার ও তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় ততটুকু। তারপর তারা নৌকা থেকে অবতরন করে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। এমন সময় খিযির (আলাইহিস সালাম) একটি বালককে অন্য বালকদের সাথে খেলতে দেখলেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) হাত দিয়ে ছেলেটির মাথা ধরে তাকে হত্যা করলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) খিযির (আলাইহিস সালাম) কে বললেন, “আপনি কি জানের বদলা ছাড়াই এক নিষ্পাপ জীবনকে হত্যা করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবেনা? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ অভিযোগ করাটা ছিল প্রথমটির চাইতেও গুরুতর। (মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন) এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করি তাহলে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না। আপনার কাছে আমার ওজর আপত্তি চূড়ান্তে পৌঁছে গিয়েছে।
তারপর উভয়ে চলতে লাগলেন। অবশেষে তারা এক জনপদের কাছে পৌঁছে তার অধিবাসীদের কাছে খাদ্য চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর তথায় তারা এক পতনম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেটি ঝুঁকে পড়েছিল। খিযির (আলাইহিস সালাম) নিজ হাতে সেতি সোজা করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ লোকদের কাছে আমরা এলাম। তারা আমাদের খাবার দিলনা এবং আমাদের মেহমানদারীও করলনা। “আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহন করতে পারতেন”। তিনি বললেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে পার্থক্য ঘটল। যে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারন করতে পারনি, এ তার ব্যাখ্যা”।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মনোবাঞ্ছা হচ্ছে যে, যদি মূসা (আলাইহিস সালাম) আর একটু ধৈর্য ধারন করতেন, তাহলে আল্লাহ তাদের আরও ঘটনা আমাদের জানাতেন। সাইদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) এভাবে এ আয়াত পাঠ করতেন – নিচের আয়াতটি এভাবে পাঠ করলেন وَكَانَ أَمَامَهُمْ مَلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ صَالِحَةٍ غَصْبًا، وَكَانَ يَقْرَأُ وَأَمَّا الْغُلاَمُ فَكَانَ كَافِرًا وَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ
* নওফাল বাককালি একজন মুসলমান। ইবনু আব্বাস তাকে আল্লাহর দুশমন বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায়।
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬৭ | 4367 | ٤۳٦۷
পরিচ্ছদঃ আল্লাহর বাণীঃ “যখন তারা দুজন দুসমুদ্রের সঙ্গমস্থলে পৌঁছলেন , তারা তাদের মাছের কথা ভুলে গেলেন। আর মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল। سربا চলার পথ يسرب সে চলছে। এর থেকেই বলা হয়েছে سارب بالنهار দিনে পথ অতিক্রমকারী” ।
৪৩৬৭ ইব্রাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) … সাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে তার ঘরে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ইচ্ছা করলে আমার কাছে প্রশ্ন কর। আমি বললাম, হে আবূ আব্বাস! আল্লাহ আমাকে আপনার উপর উৎসর্গ করুন। কুফায় নওফ নামে একজন বক্তা আছে। সে বলছে যে, (খিযির (আলাইহিস সালাম) এর সাথে যে মূসার সাক্ষাত হয়েছিল তিনি বনী ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত মূসা (আলাইহিস সালাম) নন। তবে, আমর ইবনু দিনার আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। কিন্তু ইয়ালা (একজন বর্ণনাকারী) আমাকে বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) একথা শুনে বললেন, উবায় ইবনু কা’আব আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর রাসুল মূসা (আলাইহিস সালাম) একদিন লোকদের সামনে ওয়াজ করছিলেন। অবশেষে যখন তাদের চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল এবং তাদের অন্তর বিগলিত হল, তখন তিনি (ওয়াজ সমাপ্ত করে) ফিরলেন।
এক ব্যাক্তি তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! এ পৃথিবীতে আপনার চাইতে অধিক জ্ঞানী আর কেউ আছে? তিনি বললেন, না। এতে আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা তিনি এ কথাটি আল্লাহর উপর হাওয়ালা করেন নি। তখন তাকে বলা হল, নিশ্চই আছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে রব! তিনি কোথায়? আল্লাহ বললেন, তিনি দুসমুদ্রের সঙ্গমস্থলে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে রব! আপনি আমাকে এমন চিহ্ন বলুন, যার সাহায্যে আমি তার পরিচয় লাভ করতে পারি। বর্ণনাকারী ইবনু জুরাইহ বলেন, আমর আমাকে এভাবে বলেছেন যে, তাকে (সেখানে পাবে), যেখানে মাছটি তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর ইয়ালা আমাকে এভাবে বলেছেন, একটি মৃত মাছ নাও। যেখানে মাছটির মধ্যে প্রান দেওয়া হবে (সেখানেই তাকে পাবে)।
তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) একটি মাছ নিলেন এবং তা থলের মধ্যে রাখলেন। তিনি তার খাদেম কে বললেন, আমি তোমাকে শুধু এ দায়িত্ব দিচ্ছি যে, মাছটি যে স্থানে তোমার থেকে চলে যাবে সে স্থানটির কথা আমাকে বলবে। খাদেম বলল, এ তো বড় দায়িত্ব নয়। এরই বিবরন রয়েছে আল্লাহ তা’আলার এ বাণীতেঃ “আর যখন মূসা বললেন, তার খাদেমকে অর্থাৎ ইউশা ইবনু নুনকে”। সাইদ (বর্ণনাকারী) এর বর্ণনায় নামের উল্লেখ নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তিনি একটি বড় পাথরের ছায়ায় ভিজা মাটির কাছে অবস্থান করছিলেন তখন মাছটি লাফিয়ে উঠল। মূসা (আলাইহিস সালাম) তখন নিদ্রায় ছিলেন। তার খাদেম (মনে মনে) বললেন, তাকে এখন জাগাব না। অবশেষে যখন তিনি জাগালেন, তখন তাকে মাছের খবর বলতে ভুলে গেল। আর মাছটি লাফিয়ে সমুদ্রে ঢুকে পড়ল। আল্লাহ তা’আলা মাছটির চলার পথে পানি বন্ধ করে দিলেন। পরিনামে যেন পাথরের মধ্যে চিহ্ন পড়েছে।