১১৪। আল্লাহ্ অতি মহান, প্রকৃত অধিপতি, শাশ্বত সত্য। তোমার প্রতি ওহী প্রেরণ সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে , কুর-আন পাঠে তুমি ত্বরা করো না ২৬৩৯। অধিকন্তু বল, ” হে আমার প্রভু! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর।”
২৬৩৯। পার্থিব সকল ঘটনা ও মানুষের সকল ইচ্ছা বা আশা-আকাঙ্খার উর্দ্ধে আল্লাহর অবস্থান। পার্থিব সকল কিছুকেই পরিবেষ্টন করে থাকে সর্বশক্তিমানের ইচ্ছা। বিশ্বব্রহ্মান্ডের সকল কিছুই তাঁর ইচ্ছার প্রকাশ মাত্র। সারা বিশ্ব ভূবন একই উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদিত, তিনি আদি ও অন্ত। আল্লাহ্ -ই হচ্ছেন একমাত্র সত্য , ধ্রুব সত্য, সম্পূর্ণ সত্য। বিশ্ব ভূবনে তাঁর আইন বা শাসন হচ্ছে সত্যের প্রকাশ মাত্র। তাঁর আইনের মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছার প্রকাশ ঘটে যা পৃথিবীর জন্য ধ্রুব সত্য। পৃথিবীতে এই সত্যের প্রকাশ ঘটে ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে। কোরাণকেও সেই ভাবে আল্লাহ্ রসুলের [সা] অন্তরে ধীরে ধীরে ওহীর মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন। ধীরে ধীরে , ধাপে ধাপে এই জন্য যে, প্রতিটি ধাপ পরিপূর্ণতা লাভের পরে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়ার জন্য। এই আয়াতে ” হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর, ” এই বাক্যটি দ্বারা এ বার্তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কোরানের সম্পূর্ণ জ্ঞানকে একবারে কেউ অনুধাবনে সক্ষম নয়। এর জ্ঞান ধীরে ধীরে প্রতিদিনের চেষ্টায় ধাপে ধাপে ব্যক্তির অন্তরে বিকাশ লাভ করে পরিষ্ফুট হয়। কোরাণের জ্ঞান হচ্ছে সত্যের আলো, বিবেকের বিকাশ – হতে পারে তা ব্যক্তির জীবনে বা জাতির জীবনে। বিবেকের বিকাশই হচ্ছে সত্যের জ্ঞানকে আত্মার মাঝে ধারণের নিদর্শন। বিবেকবান ব্যক্তি অবশ্যই সত্য জ্ঞানকে নিজের অন্তরে ধারণ করার ক্ষমতা লাভ করেছেন। এ ক্ষমতা ধীরে ধীরে অর্জিত হয়। একটি জাতিও সত্য জ্ঞানের দ্বারা বিবেকবান জাতিরূপে পৃথিবীতে স্বীকৃতি লাভ করে। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের বলছেন যে, রসুলের [ সা ] মাঝে সত্যকে যেরূপ ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হয়েছে, সকল মানুষই সেরূপ কোরানের জ্ঞানকে ধীরে ধীরে ধৈর্য্য , প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের আত্মার মাঝে ধারণ করতে সক্ষম হবে। এ ব্যাপারে অধৈর্য্য হওয়ার কোনও কারণ নাই। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে আমাদের একাগ্র চিত্তে আন্তরিক ভাবে মহান আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা করতে হবে আমাদের জ্ঞানকে বৃদ্ধি সাধন করার জন্য। যে জ্ঞানের সমুদ্রের কোন শেষ নাই সীমা নাই। যা অসীম।
আয়াতঃ 020.115
আমি ইতিপূর্বে আদমকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে দৃঢ়তা পাইনি।
And indeed We made a covenant with Adam before, but he forgot, and We found on his part no firm will-power.
وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَى آدَمَ مِن قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا
Walaqad AAahidna ila adama min qablu fanasiya walam najid lahu AAazman
YUSUFALI: We had already, beforehand, taken the covenant of Adam, but he forgot: and We found on his part no firm resolve.
PICKTHAL: And verily We made a covenant of old with Adam, but he forgot, and We found no constancy in him.
SHAKIR: And certainly We gave a commandment to Adam before, but he forgot; and We did not find in him any determination.
KHALIFA: We tested Adam in the past, but he forgot, and we found him indecisive.
১১৫। ইতিপূর্বে আমি তো আদমের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম ২৬৪০। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিলো। আমি তো তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাই নাই।
২৬৪০। আমাদের পূর্বেও আধ্যাত্মিক জগতে পতনের ইতিহাস বর্ণনার ক্ষেত্রে ফেরাউন ও সামিরীর উল্লেখ করা হয়েছে। ফেরাউনের আধ্যাত্মিক পতন ঘটেছিলো দাম্ভিকতা ও উদ্ধতপনার জন্য। সামিরীর পতন ঘটে তার দুষ্ট প্রকৃতির জন্য যে প্রকৃতি সকলের ক্ষতির চেষ্টা চালাতো। এই আয়াতে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে অশুভ শক্তির প্রতীক শয়তানের দিকে, যার দ্বারা হযরত আদম প্রলোভিত এবং প্রতারিত হন। এই আয়াতে হযরত আদমের উদাহরণের মাধ্যমে সমগ্র মানব জাতির বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরা হয়েছে। হযরত আদমকে শয়তান সম্বন্ধে সাবধান করা সত্বেও তিনি শয়তানের প্রলোভনের ফাঁদে পা রাখেন। ঠিক সেই একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় সমগ্র মানব জাতির মধ্যে। মানুষ জানে ” লোভে পাপ , পাপে মৃত্যু ” – শয়তান মানুষকে লোভের ফাঁদে ফেলে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। শয়তানের এই অশুভ শক্তি সম্বন্ধে মানবকূলকে সাবধান করা সত্ত্বেও মানুষ খুব কমই শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। প্রথম সুযোগেই তারা শয়তানের শক্তির কাছে আত্মসমর্পন করে – ঠিক যেভাবে আমাদের আদি পিতা হযরত আদম করেছিলেন। সাধারণ মানুষের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা ” সংকল্পে দৃঢ় নয়।”
আয়াতঃ 020.116
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ তোমরা আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদা করল। সে অমান্য করল।
And (remember) when We said to the angels: ”Prostrate yourselves to Adam.” They prostrated (all) except Iblîs (Satan), who refused.