হাদীস নং ৩৬৩৬
সুলাইমান ইবনে আবদুর রাহমান রহ………নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদেম আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনায়) আগমন করলেন। এই সময় তাঁর সাহাবীদের মধ্যে সাদা কাল চুল বিশিষ্ট আবু বকর রা. ব্যতীত অন্য কেউ ছিলেন না। তিনি তাঁর চুলে মেহদী ও কতম একত্র করে কলপ (এক প্রকার কালো ঘাস) লাগিয়েছিলেন। দোহায়েম অন্য সূত্রে আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবু বকর রা. ছিলেন সবচে বয়স্ক। তিনি মেহদী ও কতম একত্র করে কলপ লাগিয়েছিলেন। এতে তাঁর সাদা চুল (ও দাঁড়ি ) টকটকে লাল রং ধারণ করেছিল।
হাদীস নং ৩৬৩৭
আসবাগ রহ………..আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা. কালব গোত্রের উম্মে বাকরা নামে একজন মহিলাকে শাদী করলেন। যখন আবু বকর রা. হিজরত করেন, তখন তাকে তালাক দিয়ে যান। তারপর ঐ মহিলাকে তার চাচাত ভাই শাদী করে নিল। এই ব্যক্তিটিই হল সেই কবি যে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশ কাফেরদের শোকগাথা রচনা করেছিল। বদর প্রান্তে কালীব নামক কূপে নিক্ষিপ্ত ঐ সব কাফেরগণ আজ কোথায় যাদের শিযা নামক কাঠের তৈরী খাদ্য-পাত্রে উটের কুজের গোশতে সুসজ্জিত থাকত। বদরের কালীব কূপে নিক্ষিপ্ত ব্যক্তিগণ আজ কোথায় যারা গায়িকা ও সম্মানিত মদ্যপানকারী নিয়ে নিমগ্ন ছিল। উম্মে বাকরা শান্তির স্বাগত জানাচ্ছে। আর আমার কাওমের (ধ্বংস হয়ে যাওয়ার) পর আমার জন্য শান্তি কোথায়? রাসূল আমাদের বলেছেন যে, অচিরেই আমাদের জীবিত করা হবে। কিন্তু উড়ে যাওয়া আত্মা ও মাথার খুলীর জীবন আবার কেমন হবে?
হাদীস নং ৩৬৩৮
মূসা ইবনে ইসামাঈল রহ…………আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (সাওর পর্বতের) গুহায় ছিলাম। আমি আমার মাথা তুলে উপরের দিকে তাকালাম এবং লোকের পা দেখতে পেলাম। তখন আমি বললাম, ইয়া নবী আল্লাহ ! তাদের কেউ নীচের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই আমাদের দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবু বকর ! নীরব থাক। আমরা দু’জন আল্লাহ হলেন যাদের তৃতীয়।
হাদীস নং ৩৬৩৯
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল এবং তাকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, ওহে! হিজরত বড় কঠিন ব্যাপার। এরপর বললেন, তোমার কি উট আছে ? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি উটের সাদকা আদায় কর? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি উটনীর দুধ অন্যকে পান করতে দাও? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যেদিন পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে উটগুলো ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন কি তুমি দুধ দোহন করে (ফকীর মিসকীনদের) দান কর? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তবে তুমি সমুদ্রের ওপার থেকেই নেক আমল করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার আমলের কিছুই হ্রাস করবেন না।
হাদীস নং ৩৬৪০
আবুল ওয়ালিদ রহ……….বারা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদীনায়) আগমন করেন মুসআব ইবনে উমাইর ও ইবনে উম্মে মাকতুম রা.। তারপর আমাদের কাছে আসেন, আম্মার ইবনে ইয়াসির ও বিলাল রা.।
হাদীস নং ৩৬৪১
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ…………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদীনায়) আগমন করলেন মুসআব ইবনে উমাইর এবং ইবনে উম্মে মাকতুম। তারা লোকদের কুরআন পড়াতেন। তারপর আসলেন, বিলাল, সাদ ও আম্মার ইবনে ইয়াসির রা. এরপর উমর ইবনে খাত্তাব রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিশজন সাহাবীসহ মদীনায় আসলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। তাঁর আগমনে মদীনাবাসী যে পরিমাণ আনন্দিত হয়েছিল সে পরিমাণ আনন্দ হতে কখনো দেখিনি। এমনকি দাসীগণও বলছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুভাগমন করেছেন। বারা রা. বলেন, তাঁর আগমনের আগেই মুফাসসালের কয়েকটি সূরাসহ আমি سبح اسم ربك الأعلى সূরা পর্যন্ত পড়ে ফেলেছিলাম।
হাদীস নং ৩৬৪২
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন আবু বকর ও বিলাল রা. ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আমি তাদেরকে দেখতে গেলাম এবং বললাম, আব্বাজান, কেমন আছেন? হে বিলাল, আপনি কেমন আছেন? আবু বকর রা. জ্বরাক্রান্ত হলেই এ পংক্তিগুলো আবৃত্তি করতেন। “প্রতিটি ব্যক্তিকে জিন পরিবারে সুপ্রভাত বলা হয় অথচ মৃত্যু তার জুতার ফিতার চাইতেও অধিক নিকটবর্তী”। আর বিলাল রা. এর অবস্থা ছিল এই যখন তাঁর জ্বর ছেড়ে যেত তখন কণ্ঠস্বর উচু করে এ কবিতাটি আবৃত্তি করতেন : “হায় আমি যদি জানতাম আমি ঐ মক্কা উপত্যকায় পুনরায় রাত্রি যাপন করতে পারব কিনা যেখানে ইযখির ও জলীল ঘাস আমার চারপাশে বিরাজমান থাকত। হায়, আর কি আমার ভাগ্যে জুটবে যে, আমি মজান্না নামক কূপের পানি পান করতে পারব! এবং শামা ও তাফিল পাহাড় কি আর আমার দৃষ্টিগোচর হবে”। আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে এ সংবাদ জানালাম। তখন তিনি এ দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! মদীনাকে আমাদের প্রিয় করে দাও যেমন প্রিয় ছিল আমাদের মক্কা বরং তার চেয়েও অধিক প্রিয় করে দাও। আমাদের জন্য মদীনাকে স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও।মদীনার সা ও মুদ এর মধ্যে বরকত দান কর। আর এখানকার জ্বর রোগকে স্থানান্তর করে জুহফায় নিয়ে যাও।