হাদীস নং ৩০৫৫
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সালাতের উদ্দেশ্যে আযান দেওয়া হয় তখন শয়তান (আযানের স্থান) সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে। আযান শেষ হলে সামনে এগিয়ে আসে। আবার যখন (সালাতের জন্য) ইকামত দেওয়া হয় তখন আবার পালাতে থাকে। ইকামত শেষ হলে আবার সামনে আসে এবং মানুষের মনে খটকা সৃষ্টি করতে থাকে আর বলতে থাকে অমুক অমুক বিষয় মনে কর। এমনকি সে ব্যক্তি আর স্মরণ রাখতে পারে না যে, সে কি তিন রাকআত পড়ল না চার রাকআত পড়ল। এমন যদি কারো হয়ে যায়, সে মনে রাখতে পারে না কি তিন রাকআত পড়েছে না চার রাকআত ? তবে সে যেন দুটি সাহু সিজদা করে।
হাদীস নং ৩০৫৬
আবুল ইয়ামান রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্মের সময় তার পার্শ্বদেশে শয়তান তার উপর আঙ্গুল দ্বারা মারে। ঈসা ইবনে মারয়াম আ.-এর ব্যতিক্রম। সে তাকে টোকা মারতে গিয়েছিল। (কিন্তু ব্যর্থ হয়) তখন সে পর্দার উপর টোকা মারে।
হাদীস নং ৩০৫৭
মালিক ইবনে ইসমাঈল রহ………..আলকামা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গমন করলাম, লোকেরা বলেন, ইনি আবু দারদা রা.। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মাঝে কি সে লোক আছে, যাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৌখিক দু’আয় আল্লাহ শয়তান থেকে রক্ষা করেছেন?
হাদীস নং ৩০৫৮
সুলাইমান ইবনে হারব রহ………..মুগীরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তাঁর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৌখিক দু’আয় শয়তান থেকে রক্ষা করেছেন, তিনি হলেন, আম্মার রা.। লায়স রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতাগণ মেঘের মধ্যে এমন সব বিষয় আলোচনা করেন, যা পৃথিবীতে ঘটবে। তখন শয়তানেরা দু’একটি কথা শুনে ফেলে এবং তা গনকদের কানে এমনভাবে ঢেলে দেয় যেমন বোতলে পানি ঢালা হয়। তখন তারা এ সত্য কথার সাথে শত প্রকারের মিথ্যা কথা বাড়িয়ে বলে।
হাদীস নং ৩০৫৯
আসিম ইবনে আলী রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন যথাসম্ভব তা দমন করবে। কেননা তোমাদের কেউ হাই তোলার সময় যখন ‘হা’ বলে, তখন শয়তান হাসতে থাকে।
হাদীস নং ৩০৬০
যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের দিন যখন মুশরিকরা পরাজিত হলো, তখন ইবলিস চীৎকার করে বলল, হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা তোমাদের পেছনের লোকদের প্রতি সতর্ক হও। অতএব সামনের লোকেরা পেছনের লোকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ফলে উভয় দলের মধ্যে নতুনভাবে সংঘর্ষ শুরু হল। হুযায়ফা রা. হঠাৎ তাঁর পিতা ইয়ামানকে দেখতে পেলেন। (মুসলমানগণ তাঁর উপর আক্রমণ করছে) তখন তিনি (হুযায়ফা) বললেন, হে আল্লাহর বান্দারা ! আমার পিতা! আমার পিতা! (তিনি মুসলিম) কিন্তু আল্লাহর কসম, তারা বিরত হয়নি। শেষ পর্যন্ত তারা তাকে হত্যা করে ফেলল। তখন হুযায়ফা রা. বললেন, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। উরওয়া রা. বলেন, আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত হুযায়ফা রা. (তাঁর পিতার হত্যাকারীদের জন্য) দু’আ ও ইস্তিগফার করতে থাকেন।
হাদীস নং ৩০৬১
হাসান ইবনে রাবী রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতের মধ্যে মানুষের এদিক-ওদিক তাকানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তা হল শয়তানের এক ধরণের ছিনতাই, যা সে তোমাদের একজনের সালাত থেকে ছিনিয়ে নেয়।
হাদীস নং ৩০৬২
আবুল মুগীরা ও সুলাইমান ইবনে আবদুর রহমান রহ…………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সৎ ও ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন ভীতিকর মন্দ স্বপ্ন দেখে তখন সে যেন তার বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করে আর শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহলে এরূপ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
হাদীস নং ৩০৬৩
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ…………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একশ বার এ দু’আটি পড়বে : আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; বাদশাহী একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বস্তুর উপর সর্বশক্তিমান। তাহলে দশটি গোলাম আযাদ করার পরিমাণ সাওয়াব তার হবে। তার জন্য একশটি সাওয়াব লেখা হবে এবং একশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে মাহফুজ থাকবে। কোন লোক তার চেয়ে উত্তম সাওয়াবের কাজ করতে সক্ষম হবেনা। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে ঐ দু’আটির আমল অধিক পরিমাণ করবে।
হাদীস নং ৩০৬৪
আলী ইবনে আবদুল্লহ রহ………সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একদা উমর রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁর সঙ্গে কয়েকজন কুরাইশ মহিলা কথাবার্তা বলছিল। তারা খুব উচ্চস্বরে কথা বলছিল। এরপর যখন উমর রা. অনুমতি চাইলেন, তারা উঠে দ্রুত পর্দার আড়ালে চরে গেলেন। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি প্রদান করলেন। তখন তিনি মুচকি হাসছিলেন। তখন উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে সর্বদা স্মিতহাস্যে রাখুন। তিনি বললেন, আমার কাছে যে সব মহিলা ছিল তাদের ব্যাপারে আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। তারা যখনই তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল তখনই দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকেই তাদের অধিক ভয় করা উচিত ছিল। এরপর তিনি মহিলাদের লক্ষ্য করে বললেন, হে আত্ম শত্রু মহিলাগণ! তোমরা আমাকে ভয় করছ অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভয় করছ না? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ কারণ তুমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে অধিক কর্কশ ভাষী ও কঠোর হৃদয় ব্যক্তি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কসম ঐ সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, তুমি যে পথে গমন কর শয়তান কখনও সে পথে চলে না বরং সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে।