হাদীস নং ২৯৭৩
মুসাদ্দাদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্র উভয়কে লেপটিয়ে দেওয়া হবে।
হাদীস নং ২৯৭৪
ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কারো মৃত্যু এবং জন্মের কারণে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না, এ দুটো আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। অতএব যখন তোমরা তা সংঘটিত হতে দেখবে তখন সালাত আদায় করবে।
হাদীস নং ২৯৭৫
ইসমাঈল ইবনে আবু উওয়াইস রহ………..আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু এবং জন্মের কারণে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। অতএব যখন তোমরা তা সংঘটিত হতে দেখবে তখন যিকির করবে।
হাদীস নং ২৯৭৬
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত যে, যেদিন সূর্যগ্রহণ হল, সেদিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। তারপর তাকবীর বললেন, এবং দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করলেন। তারপর দীর্ঘ রুকু করলেন এরপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদা’ এবং তিনি পূর্বের ন্যায় দাঁড়ালেন। আর দীর্ঘ কিরাআত পাঠ করলেন কিন্তু তা প্রথম কিরাআত থেকে কম ছিল। এরপর তিনি দীর্ঘক্ষণ রুকু করলেন কিন্তু তা প্রথম রাকআতের তুলনায় কম ছিল। তারপর তিনি দীর্ঘ সিজদা করলেন। তিনি শেষ রাকআতেও অনুরূপই করলেন, পরে সালাম ফিরালেন। এ সময় সূর্য উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে। তখন তিনি লোকজনকে লক্ষ্য করে খুতবা দিলেন। তিনি সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে বললেন, অবশ্য এ দুটো আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু এবং জন্মের কারণে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না, অতএব যখন তোমরা তা সংঘটিত হতে দেখবে তখনই সালাতে ভয়-ভীতি নিয়ে ধাবিত হবে।
হাদীস নং ২৯৭৭
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না রহ………আবু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কারো মৃত্যু এবং জন্মের কারণে হয় না বরং উভয়টি আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে দুটি নিদর্শন মাত্র। অতএব যখন তোমরা তা সংঘটিত হতে দেখবে তখন সালাত আদায় করবে।
হাদীস নং ২৯৭৮
আদম রহ………ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পূবালী বায়ু দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, আর পশ্চিমের বায়ু দ্বারা আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে।
হাদীস নং ২৯৭৯
মাক্কী ইবনে ইবরাহীম রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আকাশে মেঘ দেখতেন, তখন একবার সামনে অগ্রসর হতেন, আবার পেছনে সরে যেতেন। আবার কখনও ঘরে প্রবেশ করতেন, আবার বের হয়ে যেতেন আর তাঁর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে যেত। পরে যখন আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করত তখন তাঁর এ অবস্থা কেটে যেত। আয়িশা রা.-এর কারণ জানতে চাইলে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি জানিনা, এ মেঘ ঐ মেঘও হতে পারে যা দেখে আদ জাতি যেমন বলেছিল: এরপর যখন তারা তাদের উপত্যকার অভিমুখে উক্ত মেঘমালা অগ্রসর হতে দেখল।(৪৬:২৪)
হাদীস নং ২৯৮০
হুদবা ইবনে খালিদ ও খলীফা (ইবনে খাইয়াত) রহ………..মালিক ইবনে সাসাআ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ-এ দু’অবস্থায় মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এরপর তিনি দু’ব্যক্তির মাঝে অপর এক ব্যক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট স্বর্ণের একটি তশতরী নিয়ে আসা হল-যা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার বুক থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল। এরপর আমার পেট যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলা হল। তারপর তা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা চতুষ্পদ জন্তু আনা, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা থেকে বড় অর্থাৎ বুরাক। এরপর তাতে আরোহণ করে আমি জিবরাঈল আ.. সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেয়া হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ, তাঁর শুভাগমণ কতই না উত্তম। তারপর আমি আমি আদম আ.-এর কাছে গেলাম। তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নবী ! তোমার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে, গেলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমি ঈসা ও ইয়াহইয়া আ.-এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ। তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমি ইউসুফ আ.-এর কাছে গেলাম। তাকে আমি করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর ইদ্রীছ আ.-এর কাছে গেলাম। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী ! আপনাকে ধন্যবাদ। এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমরা হারুন আ.-এর কাছে গেলাম। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ। তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । প্রশ্ন করা হল, তাকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমরা মূসা আ.-এর কাছে গেলাম। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী ! আপনাকে ধন্যবাদ। তারপর যখন তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাকে বলা হল আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, হে রব! এ ব্যক্তি যে আমার পরে প্রেরিত, তাঁর উম্মাম আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহশতে যাবে। এরপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কে? বলা হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বলা হল, তাকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতইনা উত্তম। তারপর আমি ইবরাহীম আ.-এর কাছে গেলাম। তাকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ। এরপর বায়তুল মামূরকেআমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরাঈল আ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামূর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফেরেশতা সালাত আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবারে বের হলে দ্বিতীয়বার ফিরে আসেন না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা দেখানো দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন, হাজারা নামক স্থানের মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার মূলদেশে চারটি ঝরণা প্রবাহিত। দুটি অভ্যন্তরে আর দুটি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অভ্যন্তরের দুটি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দুটির একটি হল ফুরাত আর অপরটি হল নীল নদ। তারপর আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা আ.-এর কাছে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বনী ইসরাঈলের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আর আপনার উম্মাত এত (সালাত আদায়ে) সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর অনুরোধ করুন। আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সালাত চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। পুনরায় অনুরূপ ঘটল। আর সালাতও ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেয়া হল। পুনরায় অনুরূপ ঘটলে তিনি সালাত বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার অনুরূপ হল। তিনি সালাতকে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর আমি মূসা-এর কাছে আসলাম। তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, এবার আল্লাহ সালাতকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মূসার নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কি করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন। এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছি। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের থেকে হালকা করে দিয়েছি। আর আমি প্রতিটি পূণ্যের জন্য দশগুণ সওয়াব দিব। আর বায়তুল মামূর সম্পর্কে হাম্মাম রহ……..আবু হুরায়রা রা. সূত্রে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।