হাদীস নং ২৯২৩
আবুন নুমান রহ………..নাফি রহ. থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনে খাত্তাব রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জাহেলী যুগে আমার উপর একদিনের ইতিকাফ (মান্নত) ছিল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তা পূরণ করার আদেশ করেন। নাফি রহ. বলেন, উমর রা. হুনাইনের যুদ্ধের বন্দী থেকে দুটি দাসী লাভ করেন। তখন তিনি তাদেরকে মক্কায় একটি গ্রহে রেখে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের বন্দীদেরকে সৌজন্যমূলক ছেড়ে দেয়ার আদেশ দান করলেন। তারা মুক্ত হয়ে অলি-গলিতে ছুটাছুটি লাগল। উমর রা. আবদুল্লাহ রা.-কে বললেন, দেখ তো ব্যাপার কি? তিনি বললেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বন্দীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। উমর রা. বললেন, তবে তুমি গিয়ে সে দাসী দুজনকে ছেড়ে দাও। নাফি রহ. বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিয়েররানা থেকে উমরা করেন নি। যদি তিনি উমরা করতেন তবে তা আবদুল্লাহ রা. থেকে গোপন থাকত না। আর জারীর ইবনে হাযিম রহ. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করতেন যে, (উমর রা. দাসী দুটি) খুমুস থেকে পেয়েছিলেন। মাআমার রহ……..ইবনে উমর রা. থেকে নযরের (মান্নতের) ব্যাপারটির উল্লেখ করেন, কিন্তু একদিনের কথা বলেনি।
হাদীস নং ২৯২৪
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………..আমর ইবনে তাগলিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দলকে দিলেন আর অন্য দলকে দিলেন না। তারা যেন এতে মনক্ষুণ্ন হলেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন লোকদের দেই, যাদের সম্পর্কে বিগড়ে যাওয়া কিংবা ধৈর্যহারা হওয়ার আশংকা করি। আর অন্যদল যাদের অন্তরে আল্লাহ তা’আলা যে কল্যাণ ও অমুখাপেক্ষিতা দান করেছেন, তার উপর ছেড়ে দেই। আর আমর ইবনে ইবনে তাগলিব রা. তাদের অন্তর্ভূক্ত। আমর ইবনে তাগলিব রা. বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সম্পর্কে যা বলেছেন, তার পরিবর্তে যদি আমাকে লাল বর্ণের উট দেওয়া হত তাতে আমি এতখানি খুশী হতাম না। আর আবু আসিম রহ. জারীর রহ. থেকে হাদীসটি এতটুকু অতিরিক্তসহ বর্ণনা করেছেন যে, হাসান রহ. বলেন, আমাকে আমর ইবনে তাগলিব রা. বলেছেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু মাল অথবা বন্দী আনীত হয়, তখন তিনি তা বণ্টন করেন।
হাদীস নং ২৯২৫
আবুল ওয়ালীদ রহ……….আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কুরাইশদের দিয়ে থাকি তাদের মন রক্ষা করার জন্য। কেননা তারা জাহেলী যুগের কাছাকাছি।
হাদীস নং ২৯২৬
আবুল ইয়ামান রহ………আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, যখন আল্লাহ তা’আলা গোত্রের লোকদের একশ করে উট দিতে লাগলেন। তখন আনসারদের থেকে কিছু সংখ্যক লোক বলতে লাগল, আল্লাহ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ক্ষমা করুন। তিনি কুরাইশদেরকে দিচ্ছেন, আমাদেরকে দিচ্ছেন না। অথচ আমাদের তরবারী থেকে রক্ত এখনও ঝরছে। আনাস রা. বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তাদের উক্তি পৌঁছান হল। তখন তিনি আনসারদের ডেকে পাঠালেন এবং চর্ম নির্মিত একটি তাবুতে তাদের একত্রিত করলেন আর তাদের সঙ্গে তাদের ছাড়া আর কাউকে ডাকলেন না। যখন তারা সকলে একত্রিত হলেন, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, আমার নিকট তোমাদের সম্পর্কে যে কথা পৌঁছেছে তা কি? তাদের মধ্যে সমঝদার লোকেরা তাকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্য থেকে মুরুব্বীরা কিছুই বলেননি। আমাদের কতিপয় তরুণরা বলেছে। আল্লাহ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ক্ষমা করুন। তিনি আনসারদের না দিয়ে কুরাইশদের দিচ্ছেন; অথচ আমাদের তরবারী থেকে এখনও তাদের রক্ত ঝরছে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন লোকদের দিচ্ছি , যাদের কুফরীর যুগ সদ্য সমাপ্ত হয়েছে। তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরবে, আর তোমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিয়ে মানযিলে ফিরবে আর আল্লাহর কসম! তোমরা যা নিয়ে মানযিলে ফিরবে, তা তারা যা নিয়ে ফিরবে, তার চাইতে উত্তম। তখন আনসারগণ বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা এতে সন্তুষ্ট। তারপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার পরে তোমরা তোমাদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেখতে পাবে। তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করে থাকবে, যে পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হাউযে (কাওসারে) মিলিত হবে। আনাস রা. বলেন, কিন্তু আমরা (আনসারগণ) ধৈর্যধারণ করতে পারিনি।
হাদীস নং ২৯২৭
আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ উয়াইসী রহ……….যুবাইর ইবনে মুতইম রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন, আর তখন তাঁর সঙ্গে আরো লোক ছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইন থেকে আসছিলেন। বেদুঈন লোকেরা তাঁর কাছে গনীমতের মাল চাইতে এসে তাকে আকড়িয়ে ধরল। এমনকি তারা তাকে একটি বাবলা গাছের সাথে ঠেকিয়ে দিল এবং কাঁটা তাঁর চাদরে আটকে ধরল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থামলেন। তারপর বললেন, আমার চাদরখানা দাও। আমার নিকট যদি এ সকল কাঁটাদার বন্য বৃক্ষের সমপরিমাণ পশু থাকত, তবে সেগুলো তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। এরপরও আমাকে তোমরা কখনো কৃপণ, মিথ্যাবাদী এবং দুর্বল চিত্ত পাবে না।