হাদীস নং ২৫৪০
মুসাদ্দাদ রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রয় করবে না। আর তোমরা (দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে) দালালী করবে না। কেউ যেন তার ভাইয়ের ক্রয়ের উপরে দাম না বাড়ায় এবং কেউ যেন তার ভাইয়ের (বিয়ের) প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়।
হাদীস নং ২৫৪১
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………আবু হুরায়রা ও যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, এক বেদুঈন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আমার ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব মুতাবিক ফয়সালা করুন। তখন তার প্রতিপক্ষ, যে তার তুলনায় সমঝদার সে বলল, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করুন এবং আমাকে (ঘটনাটি খুলে বলার) অনুমতি দিন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বল । সে বললে, আমার ছেলে এ লোকরে বাড়ীতে মজুর ছিল। তারপর তার স্ত্রীর সাথে যিনা করে। লোকেরা আমাকে বলল, তোমার ছেলের উপর রজম ওয়াজিব হয়েছে। তখন আমি আমার ছেলেকে একশত বকরী এবং একটি বাদীর বিনিময়ে এর কাছ থেকে মুক্ত করে এনেছি। পরে আমি আলিমদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেন, তোমার ছেলের উপর একশত বেত্রাঘাত এবং এব বছরের নির্বাসন ওয়াজিব হয়েছে। আর স্ত্রীর দণ্ড রজম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর কসম, অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহ মোতাবেকই ফয়সালা করব। বাদী এবং বকরী পাল তোমাকে ফেরত দেওয়া হবে, আর তোমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত সহ এক বছরের নির্বাসন দেওয়া হবে। আর অপরজনকে বললেন, হে উনাইস তুমি আগমীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর কাছে যাবে। সে স্ত্রী যদি স্বীকার করে তাহলে তাকে রজম করবে। (রাবী বলেন) উনাইস রা. পরদিন সকালে সে স্ত্রীলোকের কাছে গেলেন। সে যিনার অপরাধ স্বীকার করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে দিলেন এবং তাকে রজম করা হল।
হাদীস নং ২৫৪২
খাল্লাদ ইবনে ইয়াহইয়া রহ………আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুকাতাবা অবস্থায় বারীরা আমার কাছে এসে বলল, হে উম্মুল মুমিনীন। আপনি আমাকে খরিদ করুন। কারণ আমার মালিক আমাকে বিক্রি করে ফেলবে। তারপর আমাকে আযাদ করে দিন। তিনি বললেন, বেশ, বারীরা বলল, ওয়ালার অধিকার মালিকের থাকবে-এ শর্ত না রেখে তারা আমাকে বিক্রি করবে না। তিনি বললেন, তবে তোমাকে দিয়ে আমার কোন প্রয়োজন নেই। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনলেন। কিংবা তাঁর কাছে সে সংবাদ পৌঁছল। তখন তিনি বললেন, বারীরার ব্যাপার কী? এবং বললেন, তাকে খরিদ কর। তারপর তাকে আযাদ করে দাও। তারা যত ইচ্ছা শর্তারোপ করুক। আয়িশা রা. বলেন, তারপর আমি তাকে খরিদ করলাম এবং আযাদ করে দিলাম। তার মালিক পক্ষ ওয়ালার শর্তারোপ করল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালা তারই হবে, যে আযাদ করবে, তারা শর্তারোপ করলেও।
হাদীস নং ২৫৪৩
মুহাম্মদ ইবনে আরআরা রহ………আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে শহরের বাইরে গিয়ে বাণিজ্যিক কাফেলা থেকে মাল খরিদ করতে নিষেধ করেছেন। আর বেদুইনের পক্ষ হয়ে মুহাজিরদের বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর কোন স্ত্রীলোক যেন তার বোনের (অপর স্ত্রীলোকের) তালাকের শর্তারোপ না করে আর কোন লোক যেন তার ভাইয়ের দামের উপর দাম না করে এবং নিষেধ করেছেন দালালী করতে, এবং স্তনে দুধ জমা করতে (ধোকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে)। মুআয ও আবদুস সামাদ রহ. শুবা রহ. থেকে হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনে আরআরা রহ.-এর অনুসরণ করেছেন। গুনদার ও আবদুর রাহমান রহ. ‘নুহিয়া’ বলেছেন এবং আদম রহ. বলেছেন, ‘নুহিনা’ আর নাযর ও হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল বলেছেন, ‘নাহা’।
হাদীস নং ২৫৪৪
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….উবাই ইবনে কাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর রাসূল মূসা আ. বলেন। তারপর তিনি সম্পূর্ণ ঘটনাটি বর্ণনা করেন। (এ প্রসঙ্গে খিযর আ.-এর এ উক্তিটি উল্লেখ করেন যা তিনি মূসা আ.-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন), আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবে না? (মূসা আ.-এর আপত্তি) প্রথমটি ছিল ভুলবশত, দ্বিতীয়টি শর্ত স্বরূপ, তৃতীয়টি ইচ্ছাকৃত। মূসা আ. বললেন, আপনি আমার ভুলের কারণে আমার দোষ ধরবেন না এবং আমার ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। তাঁরা উভয়ে এক বালকের সাক্ষাত পেলেন এবং খিযর আ. তাকে হত্যা করলেন। তারপর তাঁরা উভয়ে পথ চলতে লাগলেন। কিছু দূর এগিয়ে তাঁরা পতনোন্মুখ একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন। খিযর আ. প্রাচীরটি সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। ইবনে আব্বাস রা. আয়াতের ورائهم ملك এর স্থলে أمامهم ملك পড়েছেন।
হাদীস নং ২৫৪৫
ইসমাঈল রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারীরা আমার কাছে এসে বলল, আমি আমার মালিকের সঙ্গে নয় উকিয়ার বিনিময়ে আমাকে আযাদ করার এক চুক্তি করেছি। প্রতি বছর এক উকিয়া করে পরিশোধ করতে হবে। তাই আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আয়িশা রা. বললেন, তারা যদি এ শর্তে রাযী হয় যে, আমি তাদের সমস্ত প্রাপ্য এক সাথে দিয়ে দিই এবং তোমার ওয়ালা আমার জন্য থাকবে, তাহলে আমি তা করব। বারীরা তার মালিকের কাছে গিয়ে তাদের একথা বলল, কিন্তু তারা তা অস্বীকার করল। তারপর বারীরা তাদের কাছ থেকে ফিরে এল। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিলেন। বারীরা বলল, আমি তাদের কাছে প্রস্তাবটি পেশ করেছি, ওয়ালার অধিকার তাদের জন্য না হলে, এতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনলেন এবং আয়িশা রা.-ও তাকে অবহিত করলেন। তারপর তিনি বললেন, তুমি বারীরাকে নিয়ে নাও এবং তাদের জন্য ওয়ালার অধিকারের শর্ত মেনে নাও। কেননা, ওয়ালার অধিকার তো তারই যে আযাদ করবে। আয়িশা রা. তাই করলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মাঝে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা করে বললেন, লোকদের কি হল যে, তারা এমন সব শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই? আল্লাহর কিতাবের বহির্ভূত যে কোন শর্ত বাতিল, যদিও শত শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর ফায়সালা যথার্থ ও তাঁর শর্ত সুদৃঢ়। ওয়ালা তো তারই যে আযাদ করে।