হাদীস নং ২৯২০
মুসাদ্দাদ রহ………..আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আমি বদর যুদ্ধে সারিতে দণ্ডায়মান, আমি আমার ডানে বামে তাকিয়ে দেখলাম, অল্প বয়স্ক দু’জন আনসার যুবকের মাঝখানে রয়েছি। আমার আকাংখা ছিল, তাদের অপেক্ষা শক্তিশালীদের মধ্যে থাকি। তখন তাদের একজন আমাকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, চাচা! আপনি কি আবু জাহলকে চিনেন? আমি বললাম হ্যাঁ। তবে ভাতিজা তাতে তোমার কি প্রয়োজন? সে বলল, আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে সে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গালমন্দ করে। সে মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। আমি যদি তাকে দেখতে পাই, তবে আমার দেহ দেহ থেকে বিছিন্ন হবে না যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে যার মৃত্যু আগে অবধারিত, সে মারা যায়। আমি তার কথায় বিস্মিত হলাম। তা শুনে দ্বিতীয়জন আমাকে খোঁচা দিয়ে অনুরূপ বলল। তৎক্ষণাৎ আমি আবু জাহালকে দেখলাম, সে মানুষের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন আমি বললাম, এই যে, তোমাদের সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলে। তারা তৎক্ষণাৎ নিজের তরবারী নিয়ে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করল। এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে ফিরে এসে তাকে অবহিত করল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছে? তারা উভয়ে দাবী করল, আমি তাকে হত্যা করেছি। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের তরবারী তোমরা মুছে ফেলনি তো? তারা উভয়ে বলল, না। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়ের তরবারী দেখলেন এবং বললেন, তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছো। অবশ্য তার থেকে প্রাপ্ত মালামাল মুআয ইবনে আমর ইবনে জামুহের জন্য। তারা দু’জন হল, মুআয ইবনে আফরা ও মুআয ইবনে আমর ইবনে জামূহ।
হাদীস নং ২৯২১
আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা রহ…………আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের বছর আমরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখি হলাম, তখন মুসলিম দলের মধ্যে ছুটোছুটি আরম্ভ হল। এমন সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে একজন মুসলমানের উপর চড়ে বসেছে। আমি ঘুরে তার পেছনের দিক দিয়ে এসে তরবারী দ্বারা তার ঘাড়ের রগে আঘাত হানলাম। তখন সে আমার দিকে এগিয়ে এল এবং আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যে, আমি তাতে মৃত্যুর আশংকা করছিলাম। মৃত্যু তাকেই পাকড়াও করল এবং আমাকে ছেড়ে দিল। তারপর আমি উমর রা.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, লোকদের কি হয়েছে? লোকদের কি হয়েছে? উমর রা. বললেন, আল্লাহর হুকুম। এরপর লোকজন ফিরে এলো এবং রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসলেন, তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্ত। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছে যে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? তারপর আমি বসে পড়লাম। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্য। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছ যে, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? তারপর আমি বসে পড়লাম। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয়বার অনুরূপ বললেন, আমি আবার দাঁড়ালাম, তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু কাতাদা ! তোমার কি হয়েছে? আমি তখন সম্পূর্ণ ঘটনা বললাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু কাতাদা রা. সত্য বলেছে। সে ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান আমার নিকট আছে। আপনি আমার পক্ষ থেকে একে সম্মত করিয়ে দিন। তখন আবু বকর ছিদ্দীক রা. বলে উঠলেন, কখনো না, আল্লাহর শপথ! রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এমন করবেন না যে, আল্লাহর সিংহাদের মধ্যে থেকে কোন সিংহ আল্লাহ ও রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষে যুদ্ধ করবে আর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান তোমাকে দিবেন! তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকর রা. ঠিকই বলেছে। ফলে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আমাকে দিলেন। আমি তা থেকে একটি বর্ম বিক্রি করে বানূ সালমায় একটি বাগান ক্রয় করি। এটাই ইসলাম গ্রহণের পর আমার প্রথম সম্পত্তি, যা আমি লাভ করি।
হাদীস নং ২৯২২
মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ রহ………..হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু চাইলাম। তখন তিনি আমাকে দিলেন। আমি আবার চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমাকে বললেন, হে হাকীম, এ সকল মাল সবুজ শ্যামল ও সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা নির্লোভ অন্তরে গ্রহণ করে, তার তাতে বরকত দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি তা লোভনীয় অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয় না। তার উদাহরণ সে ব্যক্তির ন্যায়, যে আহার করে কিন্তু উদর পূর্ণ হয় না। আর উপরের হাত নীচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম রা. বলেন, আমি বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সে মহান সত্তার কসম! যিনি আমাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন আপনার পর আমি দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া পর্যন্ত আর কারো মাল কামনা করব না। পরে আবু বকর রা.(তাঁর খিলাফত কালে) হাকীম ইবনে হিযাম রা.-কে ভাতা নেওয়ার জন্য আহবান করতেন কিন্তু তিনি কোন কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর উমর রা. তাকে ভাতা দানের উদ্দেশ্যে আহবান করেন কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তখন উমর রা. বললেন, হে মুসলিমগণ! আমি হাকীম ইবনে হিযাম রা.-কে তার জন্য সে প্রাপ্য দিতে চেয়েছি। যা আল্লাহ তা’আলা তার জন্য সম্পদ থেকে হিসসা রেখেছেন। আর সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। এভাবে হাকীম ইবনে হিযাম রা. রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে আর কারো নিকট থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কিছুই গ্রহণ করেন নি।