হাদীস নং ২৮৭২
আবুল ওয়ালীদ রহ………জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলাম। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। সিরার হচ্ছে মদীনার উপকণ্ঠে একটি স্থানের নাম।
হাদীস নং ২৮৭৩
আবদান রহ………..আলী রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মালের মধ্য থেকে যে অংশ আমি পেয়েছিলাম তাতে একটি জাওয়ান উটনীও ছিল। আর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুমুসের মধ্য থেকে আমাকে একটি জওয়ান উটনী দান করেন। আর আমি যখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমা রা.-এর সাথে বাসর যাপন করব, তখন আম বানূ কায়নুকা গোত্রের জনৈক স্বর্ণকারের সাথে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হলাম যে, সে আমার সঙ্গে যাবে এবং আমরা উভয়ে মিলে ইযখির ঘাস (জঙ্গল হতে) সংগ্রহ করে আনব। ইতিমধ্যে আমি যখন আমার জওয়ান উটনী দুটির জন্য আসবাপত্র যেমন পালান (বসার আসন) থলে ও রশি ইত্যাদি একত্রিত করছিলাম, আর আমার উটনী দুটি জনৈক আনসারীর হুজরার পার্শ্বে বসা ছিলে। আম আসবাবপত্র যোগাড় করে এসে দেখি উট দুটির কুঁজ কেটে ফেলা হয়েছে এবং কোমরের দিকে পেট কেটে কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। উটনী দুটির এ দৃশ্য দেখে আমি অশ্রু সম্বরণ করতে পারলাম না। আমি বললাম, কে এমনটি করেছে? লোকেরা বলল, হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এমনটি করেছে। সে এ ঘরে আছে এবং শরাব পানকারী কতিপয় আনসারীর সাথে আছে। আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চলেন গেলাম। তখন তাঁর নিকট যায়েদ ইবনে হারিসা রা. উপস্থিত ছিলেন। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেহারা দেখে আমার মানসিক অবস্থা উপলব্ধি করতে পারলেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আজকের মত দুঃখজনক অবস্থা দেখিনি। হামযা আমার উট দুটির উপর অত্যাচার করেছে। সে দুটর কুঁজ কেটে ফেলেছে এবং পাঁজর ফেড়ে ফেলেছে। আর সে এখন অমুক ঘরে শরাব পানকারী দলের সাথে আছ। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদরখানা আনতে আদেশ করলেন এবং চাদরখানা চড়ায়ে পায়ে হেঁটে চললেন। আমি এবং যায়েদ ইবনে হারিসা রা. তাঁর অনুসরণ করলাম। হামযা যে ঘরে ছিল সেখানে পৌঁছে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তারা অনুমতি দিল। তখন তারা শরাব পানে মত্ত ছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযাকে তার কাজের জন্য তিরস্কার করতে লাগলেন। হামযা তখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত। তার চক্ষু দুটি ছিল রক্তলাল। হামযা তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি তাকাল। আবার সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল এবং তাঁর হাঁটু পানে তাকাল। পুনরায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁর নাভীর দিকে তাকাল। আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁর মুখমণ্ডলের প্রতি তাকাল। এরপর হামযা বলল, তোমরাই তো আমার পিতার গোলাম। এ অবস্থা দেখে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারলেন, সে এখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত আছে। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনে হেঁটে সরে আসলেন। আর আমরাও তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসলাম। (এ ছিল মদ হারাম হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা)।
হাদীস নং ২৮৭৪
আবদুল আযীয ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর ছিদ্দীক রা.-এর নিকট রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর তাঁর মিরাস বণ্টনের দাবী করেন। যা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) হিসাবে আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক তাকে প্রদত্ত সম্পদ থেকে রেখে গেছেন। তখন আবু বকর রা. তাকে বললেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টিত হবে না আমরা যা ছেড়ে যাই, তা সাদকা রূপে গণ্য হয়। এতে ফাতিমা বিনতে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হলেন এবং আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর সঙ্গে কথাবার্তা বলা ছেড়ে দিলেন। এ অবস্থা তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর ফাতিমা রা. ছয় মাস জীবিত ছিলেন। আয়িশা রা. বলেন, ফাতিমা রা. আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর নিকট রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ত্যাজ্য খায়বার ও ফাদাকের ভূমি এবং মদীনার সাদকাতে তাঁর অংশ দাবী করেছিলেন। আবু বকর রা. তাকে তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান এবং তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আমল করতেন, আমি তাই আমল করব। আমি তার কোন কিছুই ছেড়ে দিতে পারি না। কেননা আমি আশংকা করি যে, তাঁর কোন কথা ছেড়ে দিয়ে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে না যাই। অবশ্য রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদীনার সাদকাকে উমর রা. তা আলী ও আব্বাস রা.-কে হস্তান্তর করেন। আর খায়বার ও ফাদাকের ভূমিকে পূর্ববৎ রেখে দেন। উমর রা. এ প্রসঙ্গে বলেন, এ সম্পত্তি দুটিকে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জরুরী প্রয়োজন পূরণ ও বিপত্কালীন সময়ে ব্যয়ের জন্য রেখেছিলেন। সুতরাং এ সম্পত্তি দুটি তারই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, যিনি মুসলমানদের শাসন ক্ষমতার অধিকারী খলীফা হবেন। যুহরী রহ. বলেন, এ সম্পত্তি দুটির ব্যবস্থাপনা অদ্যাবধি সেরূপই রয়েছে।