মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ………রাফি ইবনে খাদীজ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুল-হুলাইফায় অবস্থান করছিলাম। লোকেরা ক্ষুধার্ত হয়েছিল। আর আমরা গনীমত স্বরূপ কিছু উট ও বকরী লাভ করেছিলাম। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের পেছন সারিতে ছিলেন। লোকেরা তাড়াতাড়ি করে (জন্তু যবেহ করে) ডেগ চড়িয়ে দিয়েছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডেগগুলো (উপুড় করে ফেলার) নির্দেশ দিলেন এবং উপুড় করে ফেলে দেওয়া হল। এরপর তিনি দশটি বকরীকে একটি ঘোড়া কম ছিল। তাঁরা তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে গেল এবং তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। এরপর এক ব্যক্তি উটটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করল, আল্লাহ তা’আলা তার গতিরোধ করে দিলেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ সকল গৃহপালিত জন্তুর মধ্যেও কতক বন্য জন্তুর মত অবাধ্য হয়ে যায়। সুতরাং যা তোমাদের নিকট হতে পলায়ন করে তার সঙ্গে এরূপ আচরণ করবে। রাবী বলেন, আমার দাদা রাফি ইবনে খাদীজ রা. বলেছেন, আমরা আশা করি কিংবা বলেছেন আশংকা করি যে, আমরা আগামীকাল শত্রুর মুখোমুখি হব। আর আমাদের সঙ্গে ছুরি নেই। আমরা কি বাঁশের ধারালো চোকলা দ্বারা যবেহ করব? রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং (যার যবেহকালে) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে (বিসমিল্লাহ পাঠ করা হয়েছে) তা আহার কর। কিন্তু দাঁত ও নখ দিয়ে নয়। কারণ আমি বলে দিচ্ছি : তা এই যে, দাঁত হল হাঁড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি।
হাদীস নং ২৮৫৯
মুহাম্মদ ইবনে মুসান্ন রহ……..জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি যুলখালাসা মন্দিরটিকে ধ্বংস করে আমাকে সান্ত্বনা দিবে না? এ ঘরটি খাসআম গোত্রের একটি মন্দির ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা বলা হত। এরপর আমি আহমাস গোত্রের দেড়শ লোক নিয়ে রওয়ানা হলাম। তাঁরা সবাই নিপুণ অশ্বারোহী ছিলেন। আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালাম যে, আমি ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে পারি না। তখন তিনি আমার বুকে হাত দ্বারা আঘাত করলেন। এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলের ছাপ দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য দু’আ করে বললেন, হে আল্লাহ! তাকে ঘোড়ার পিঠে স্থির রাখ এবং তাকে পথপ্রদর্শক ও সুপথ প্রাপ্ত করুন। অবশেষে জারীর রা. তথায় গমন করলেন। ঐ মন্দিরটি ভেঙ্গে দিলেন ও জ্বালিয়ে দিলেন। এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সুসংবাদ প্রদানের জন্য দূত প্রেরণ করলেন। জারীর রা.-এর দূত রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, সে সত্তার কসম! আমি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার নিকট আসিনি, যতক্ষণ না আমি তাকে জ্বালিয়ে কাল উটের ন্যায় করে ছেড়েছি। (অর্থাৎ তা জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়েছি) তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক লোকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু’আ করলেন। মুসাদ্দাদ রহ. বলেন, হাদীসে উল্লেখিত যুলখালাসা অর্থ গোত্রের একটি ঘর।
হাদীস নং ২৮৬০
আদম আবু ইয়াস রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেন, মক্কা বিজয়ের পর থেকে (মক্কা থেকে) হিজরতের প্রয়োজন নেই। তখন তোমরা বেরিয়ে পড়বে।
হাদীস নং ২৮৬১
ইবরাহীম ইবনে মূসা রহ……….মুজাশি ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুজাশি তাঁর মুজালিদ ইবনে মাসউদ রা.-কে নিয়ে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, এ মুজালিদ আপনার কাছে হিজরত করার জন্য বাইয়াত করতে চায়। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরতেরে প্রয়োজন নেই। কাজেই আমি তার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে বায়আত নিচ্ছি।
হাদীস নং ২৮৬২
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….আতা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবাইদ ইবনে উমাইর রা. সহ আয়িশা রা.-এর নিকট গমন করি। তখন তিনি সাবীর পাহাড়ের উপর অবস্থান করছিলেন। তিনি আমাদের বললেন, যখন থেকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মক্কা বিজয় দান করেছেন, তখন হিজরত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
হাদীস নং ২৮৬৩
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হাওশাব তায়িফী রহ……….আবু আবদুর রহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি ছিলেন উসমান রা.-এর সমর্থক। তিনি ইবনে আতিয়্যাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যিনি আলী রা.-এর সমর্থক ছিলেন, কোন বস্তু তোমাদের সাথী (আলী রা.-কে রক্তপাতে সাহস যুগিয়েছে, তা আমি জানি। আমি তাঁর কাছে শুনেছি, তিনি বলতেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং যুবাইর (ইবনে আওয়াম) রা.কে প্রেরণ করেছেন, আর বলেছেন, তোমরা খাক বাগান অভিমুখে চলে যাও, সেখানে তোমরা একজন মহিলাকে পাবে, হাতিব তাকে একটি পত্র দিয়েছি। আমরা সে বাগানে পৌঁছলাম এবং মহিলাটিকে বললাম, পত্রখানি দাও সে বলল, সে বলল, (হাতিব) আমাকে কোন পত্র দেয়নি। তখন আমরা বললাম, হয় তুমি পত্র বের করে দিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদের পত্রসহ প্রত্যাবর্তনের পর) হাতিবকে ডেকে পাঠান। তখন সে বলল, আমার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করবেন না। আল্লাহর কসম! আমি কুফরী করিনি, আমার হৃদয়ে ইসলামের প্রতি অনুরাগই বর্ধিত হয়েছে। আপনার সাহাবীগণের মধ্যে কেউই এমন নেই, মক্কায় যার সাহায্যকারী আত্মীয়-স্বজন না আছে। যদ্বারা আল্লাহ তা’আলা তাঁর পরিবার-পরিজন ধন-সম্পদ রক্ষা করেছেন। আর আমার এমন কেউ নেই। তাই আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে চেয়েছি। (যার বিনিময়ে তারা আমার মাল-আওয়াদ হিফাজত করবে) তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সত্যবাদী রূপে স্বীকার করে নিলেন। উমর রা. বললেন, লোকটিকে আমার আমার হাতে ছেড়ে দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই, সে তো মুনাফিকী করেছে। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি জান কি ? অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা আহলে বদর সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত রয়েছেন এবং তাদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তোমরা যেমন ইচ্ছা আমল কর। একথাই তাকে (আলী রা. দুঃসাহসী করেছে।