হাদীস নং ২৮৪০
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রা. কয়েকজন সাহাবীসহ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ইবনে সাইয়াদের কাছে যান। তাঁরা তাকে বনী মাগালার টিলার উপর ছেলে-পেলেদের সঙ্গেদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে দেখতে পান। আর এ সময় ইবনে সাইয়াদ বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছিল। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (আগমন সম্পর্কে) সে কোন কিছু টের না পেতেই রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিঠে হাত দিয়ে দৃদু আঘাত করলেন। এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (হে ইবনে সাইয়াদ) তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল? তখন ইবনে সাইয়াদ তাঁর প্রতি তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মী লোকদের রাসূল। ইবনে সাইয়াদ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর সকল রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি দেখ? ইবনে সাইয়াদ বলল, আমার নিকট সত্য সংবাদ ও মিথ্যা সবাদ সবই আসে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রকৃত অবস্থা তোমার নিকট সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত হয়ে আছে। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, আচ্ছা! আমি আমার অন্তরে তোমার জন্য কিছু কথা গোপন রেখেছি (বলতো তা কি ?) ইবনে সাইয়াদ বলল, তা হচ্ছে ধুয়া। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আরে থাম, তুমি তোমার সীমার বাইরে যেতে পার না। উমর রা. বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে প্রকৃত দাজ্জাল হয়, তবে তুমি তাকে কাবু করতে পারবে না আর যদি সে দাজ্জাল না হয়, তবে তাকে হত্যা করে তোমার কোন লাভ নেই। ইবনে উমর রা. বললেন, রাসূলূল্লাহ ও উবাই ইবনে কাব রা. উভয়ে সে খেজুর বৃক্ষের নিকট গমন করেন, যেখানে ইবনে সাইয়াদ অবস্থান করছিল। যখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে পৌঁছলেন, তখন তিনি খেজুর ডালের আড়ালে চলতে লাগলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল, ইবনে সাইয়াদের অজ্ঞাতসারে তিনি তার কিছু কথা শুনে নিবেন। ইবনে সাইয়াদ নিজ বিছানা পেতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল এবং কি কি যেন গুণগুণ করছিল। তার মা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখে ফেলেছিল যে, তিনি খেজুর বৃক্ষ ডালের আড়ালে আসছেন। তখন সে ইবনে সাইয়াদকে বলে উঠল, হে সাফ! আর এ ছিল তার নাম। সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহিলাটি যদি তাকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিত, তবে তার ব্যাপারটা প্রকাশ পেয়ে যেত। আর সালিম রহ. বলেন, ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেছেন যে, এরপর নবী লোকদের মাঝে দাঁড়ালেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর তা’আলার যথাযথ প্রশংসা করলেন। তারপর দাজ্জাল সম্পর্কে উল্লেখ করলেন। আর বললেন, আমি তোমাদের দাজ্জাল থেকে সতর্ক করে দিচ্ছি। প্রতোক নবীই তাঁর সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। নূহ আ. তাঁর সম্প্রদায়কেও দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্পর্কে এমন একটি কথা জানিয়ে দিব, যা কোন নবী তাঁর সম্প্রদায়কে জানন নি।
হাদীস নং ২৮৪১
মাহমুদ রহ………..উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আগামীকাল আপনি মক্কায় পৌঁছে কোথায় অবতরণ করবেন? তিনি বললেন, আকীল কি আমাদের জন্য কোন ঘরবাড়ি অবশিষ্ট রেখেছে? এরপর বললেন, আমরা আগামীকাল খায়ফে বানু কানানার মুহাসসাব নামক স্থানে অবতরণ করবে। যেখানে কুরায়েশ লোকেরা কুফরীর উপর শপথ করেছিল। আর তা হচ্ছে এই যে, বানু কানানা ও কুরায়েশগণ একত্রে এ শপথ করেছিল যে, তারা বানু হাশেমের সহিত ক্রয়-বিক্রয় করবে না এবং তাদের নিজগৃহে আশ্রয়ও দিবে না। যুহরী রহ. বলেন, খায়ফ হচ্ছে একটি উপত্যকা।
হাদীস নং ২৮৪২
ইসমাঈল রহ………..আসলামা রা. থেকে বর্ণিত, উমর রা. হুনাইয়া নামক তাঁর এক আযাদকৃত গোলামকে সরকারী চারণভূমির তত্বাবধানে নিয়োগ করেন। আর তাকে আদেশ করেন, হে হুনাইয়া! মুসলমানদের সাথে অত্যন্ত বিনয়ী থাকবে, মজলুমের বদ দু’আ থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, মজলুমেরে দু’আ কবূল হয়। আর স্বল্প সংখ্যক উট ও স্বল্প সংখ্যক বকরীর মালিককে এ (চারণভূমিতে) প্রবেশ করতে দিবে। আর আবদুর রহমান ইবনে আউফ ও উসমান ইবনে আফফান রা.-এর পশু ব্যাপারে সতর্ক থাকবে (প্রবেশ করতে দিবেনা)। কেননা যদি তাদের পশুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, তবে তাঁরা তাদের কৃষি ক্ষেত ও খেজুর বাগানের প্রতি মনোনিবেশ করবেন। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক উট-বকরীর মালিকদের পশু ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের পরিবার-পরিজনন নিয়ে আমার নিকট উপস্থিত হবে। আর বলবে, হে আমীরুল মুমিনীন! হে আমীরুল মুমিনীন! আমি কি তাদের বঞ্চিত করতে পারব? হে অবুঝ! সুতরাং পানি ও ঘাস দেওয়া আমার পক্ষে সহজ, স্বর্ণ-রৌপ্য দেওয়ার চাইতে। আল্লাহর শপথ! এ সব লোকেরা মনে করবে, আমি তাদের প্রতি জুলুম করেছি। এটা তাদেরই শহর, জাহেলী যুগে তারা এতে যুদ্ধ করেছে, ইসলামের যুগে তারা এতেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে মহান আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, যে সব ঘোড়ার উপর আমি যোদ্ধাগণকে আল্লাহর রাস্তায় আরোহণ করিয়ে থাকি যদি সেগুলো না হতো তবে আমি তাদের দেশের এক বিঘত পরিমাণ জমিও সংরক্ষণ করতাম না।