হাদীস নং ২৮১৬
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আবু হুরায়রা রা. সুত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিসরা ধ্বংস হবে, তারপর আর কিসরা হবে না। আর কায়সার অবশ্যই ধ্বংস হবে, তারপর আর কায়সার হবে না। এবং এটা নিশ্চিত যে, তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহর রাহে বণ্টিত হবে। আর তিনি যুদ্ধকে কৌশল নামে আখ্যায়িত করেন।
হাদীস নং ২৮১৭
আবু বকর ইবনে আসরাম রহ……..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধকে কৌশল নামে আখ্যায়িত করেছেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আবু বকর হলেন বূর ইবনে আসরাম।
হাদীস নং ২৮১৮
সাদকা ইবনে ফাযল রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যুদ্ধ হল কৌশল।
হাদীস নং ২৮১৯
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন, কে আছ যে কাব ইবনে আশরাফ-এর (হত্যার) দায়িত্ব নিবে? কেননা সে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলাম রা. বলেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. কাব ইবনে আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কষ্টে ফেলেছে এবং আমাদের থেকে সাদকা চাচ্ছে। বারী বলেন, তখন কাব বলল, এখন আর কী হয়েছে? তোমরা তো তার থেকে আরো অতিষ্ট হয়ে পড়বে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আমরা তাঁর অনুসরণ করেছি, এখন তাঁর পরিণতি না দেখা পর্যন্ত তাকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা পছন্দ করি না। রাবী বলেন, মুহাম্মদ ইবনে মাসলাম রা. এভাবে তার সাথে কথা বলতে থাকেন এবং সুযোগ পেয়ে তাকে হত্যা করে ফেলেন।
হাদীস নং ২৮২০
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ………জাবির রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাব ইবনে আশরাফ হত্যা করার দায়িত্ব কে নিবে? তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, আপনি কি এ পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রা. বললেন, তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি । তিনি বললেন, আমি অনুমতি প্রদান করলাম।
হাদীস নং ২৮২১
মুসাদ্দা রহ……..বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খন্দক যুদ্ধের দিন দেখেছি, তিনি স্বয়ং মাটি বহন করেছেন। এমনকি তাঁর সমগ্র বক্ষদেশের কেশরাজিকে মাটি আবৃত করে ফেলেছে আর তাঁর শরীরে অনেক পশম ছিল। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. রচিত কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন: “হে আল্লাহ আপনি যদি আমাদেরকে হিদায়েত না করতেন, তাহলে আমরা হিদায়েত পেতাম না। আর আমরা সাদকা করতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না। আপনি আমাদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ করুন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদেরকে অবিচল রাখুন। শত্রুগণ আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, যখন তারা ফিতনা সৃষ্টির সংকল্প করেছে, আমরা তা অস্বীকার করেছি”। আর তিনি এ কবিতাগুলো আবৃত্তি কালে স্বর উঁচু করেছিলেন।
হাদীস নং ২৮২২
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নুমাইর রহ……..জারীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর কাছে প্রবেশ করতে বাধাঁ দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আমার অসুবিধার কথা জানালাম যে, আমি ঘোড়ার পিঠে স্থির থাকতে পারিনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হাত দিয়ে আঘাত করলেন এবং এ দু’আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে (ঘোড়ার পিঠে) স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়েতকারী ও হিদায়েতপাপ্ত বানান’।
হাদীস নং ২৮২৩
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ……….সাহল ইবনে সাদ সাঈদী রা. থেকে বর্ণিত, তাকে লোকেরা জিজ্ঞাসা করেছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখন কিরূপে চিকিৎসা করা হয়েছিল? তখন সাহল রা. বলেন, এখন আর এ বিষয়ে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত কেউ অবশিষ্ট নেই । আলী রা. তাঁল ঢালে করে পানি বহন করে নিয়ে আনছিলেন, আর ফাতিমা রা. তাঁর মুখমণ্ডল হতে রক্ত ধৌত করছিলেন এবং একটি চাটাই নিয়ে পোড়ানো হয় আর তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখমের মধ্যে পুরে দেওয়া হয়।
হাদীস নং ২৮২৪
ইয়াহইয়া রহ………..আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয ও আবু মূসা রা.-কে ইয়ামানে প্রেরণ করেন ও নির্দেশ দেন যে, লোকদের প্রতি নম্রতা করবে, কঠোরতা করবে না, তাদের সুসংবাদ দিবে, ঘৃণা সৃষ্টি করবে না। পরস্পর মতৈক্য পোষণ করবে, মতভেদ করবে না।
হাদীস নং ২৮২৫
আমর ইবনে খালিদ রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহুদ যুদ্ধের দিন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-কে পঞ্চাশ জন পদাতিক যোদ্ধার উপর আমীর নিযুক্ত করেন এবং বলেন, তোমরা যদি দেখ যে, আমাদেরকে পক্ষীকূল ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে, তথাপি তোমরা আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্বস্থান ত্যাগ করবে না। আর যদি তোমরা দেখ যে, আমরা শত্রু দলকে পরাস্ত করেছি এবং আমরা তাদেরকে পদদলিত করেছি, তখনও আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্বস্থান ত্যাগ করবে না। অনন্তর মুসলমানগণ কাফিরদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে দিল। বারা রা. বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি মুশরিকদের মহিলাদেরকে দেখতে পেলাম তারা নিজ পরিধেয় বস্ত্র উপরে উঠিয়ে পলায়ন করেছে। যাতে পায়ের অলঙ্কার ও পায়ের নলা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর সহযোগীগণ বলতে লাগলেন, লোক সকল! এখন তোমরা গনীমতের মাল সংগ্রহ কর। তোমাদের সাথীরা বিজয় লাভ করেছে। আর অপেক্ষা কিসের? তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে যা বলেছিলেন, তা তোমরা ভুলে গিয়েছো? তাঁরা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা লোকদের সাথে মিলিত হয়ে গনীমতের মাল সংগ্রহে অংশগ্রহণ করব। তারপর যখন তাঁরা স্বস্থান ত্যাগ করে নিজেদের লোকজনের নিকট পৌঁছল, তখন (কাফিরগণ কর্তৃক) তাদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তাঁরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে থাকেন। এটা সে সময় যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে পেছন থেকে ডাকছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বারজন লোক ব্যতীত অপর কেউই অবশিষ্ট ছিলনা। কাফিরগণ এ সুযোগ মুসলমানদের সত্তর জনকে বন্দী ও সত্তর জনকে নিহত করেন। এ সময় আবু সুফিয়ান তিনবার আওয়াজ দিল, লোকদের মধ্যে কি মুহাম্মদ জীবিত আছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তর দিতে নিষেধ করেন। পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল–লোকদের মধ্যে কি আবু কুহাফার পুত্র (আবু বকর রা.) জীবিত আছে? পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল, লোকদের মধ্যে কি খাত্তাবের পুত্র (উমর রা.) জীবিত আছে? তারপর সে নিজ লোকদের নিকট গিয়ে বলল, এর সবাই নিহত হয়েছে। এ সময় উমর রা. ধৈর্যধারণ করতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ওহে আল্লাহর শত্রু ! আল্লাহর শপথ! তুমি মিথ্যা বলছো। যাদের তুমি নাম উচ্চারণ করেছো তাঁরা সবাই জীবিত আছেন। তোমাদের জন্য চরম পরিণতি অবশিষ্ট রয়েছে। আবু সুফিয়ান বলল, আজ বদরের দিনের প্রতিশোধ। যুদ্ধ তো বালতির ন্যায়। তোমরা তোমাদের লোকদের মধ্যে নাক-কান কর্তিত দেখবে, আমি এর আদেশ করিনি কিন্তু তা আমি অপছন্দও করিনি। এরপর বলতে লাগল, হে হুবাল (মূর্তি) তুমি উন্নত শির হও। হে হুবাল! তুমি উন্নত শির হও। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমরা এর উত্তর দিবে না? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি বলবে? তিনি বললেন, তোমরা বল, আল্লাহ তাআলাই সর্বোচচ মর্যাদাবান তিনিই মহিমান্বিত। আবু সুফিয়ান বলল, আমাদের জন্য উযযা (দেবতা) রয়েছে, তোমাদের উযযা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা বল, আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী বন্ধু তোমাদের কোন সাহায্যকারী বন্ধু নেই।