হাদীস নং ২৮১০
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কোন একজন নবীকে একটি পিপিলিকা কামড় দেয়। তিনি পিপীলিকার সমগ্র আবাসটি জ্বালিয়ে দেয়ার আদেশ করেন এবং তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেন, তোমাকে একটি পিপিলিকা কামড় দিয়েছে আর তুমি আল্লাহর তাসবীহ পাঠকারী জাতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছ।
হাদীস নং ২৮১১
মুসাদ্দাদ রহ……….জারীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যিলখালাসার ব্যাপারে শান্তি দিবে না? খাশআম গোত্রে একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর রা. বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ অশ্বারোহীর সাথে নিয়ে রওয়ানা করলাম। তারা নিপুন অশ্বারোহী ছিল। জারীর রা. বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলির চিহ্ন দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হিদায়েত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন। তারপর জারীর রা. সেখানে গমন করেন এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলেন ও জ্বালিয়ে দেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ সংবাদ নিয়ে এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর রা.-এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ তাআলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখন যুলখালাসাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। জারীর রা. বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু’আ করেন।
হাদীস নং ২৮১২
মুহাম্মদ ইবন কাসীর রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর ইয়াহুদীদের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।
হাদীস নং ২৮১৩
আলী ইবনে মুসলিম রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীগণের একটি দল আবু রাফে ইয়াহুদীকে হত্যা করার জন্য প্রেরণ করেন। তাদের মধ্য থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে ইয়াহুদীদের দুর্গে ঢুকে পড়ল। তিনি বলেন, তারপর আমি তাদের পশুর আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। এরপর তারা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। তারা তাদের একটি গাধা হারিয়ে ফেলেছিল এবং তার খোঁজে তারা বেরিয়ে পড়ে। আমিও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। তাদেরক আমি বুঝতে চেয়েছিলাম যে, আমি তাদের সঙ্গে গাধার খোঁজ করছি। অবশেষে তারা গাধাটি পেল। তখন তারা দুর্গে প্রবেশ করে এবং আমিও প্রবেশ করলাম। রাতে তারা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আর তারা চাবিগুলো একটি কুলুঙ্গির মধ্যে রেখে দিল। আমি তো দেখতে পাচ্ছিলাম। যখন তারা ঘুমিয়ে পড়ল, আমি চাবিগুলো নিয়ে নিলাম এবং দুর্গের দরজা খুললাম। তারপর আমি আবু রাফের নিকট পৌঁছলাম এবং বললাম, হে আবু রাফে! সে আমার ডাকে সাড়া দিল। তখন আমি আওয়াজের প্রতি লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত হানলাম, অমনি সে চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি বেরিয়ে এলাম। আমি পুনরায় প্রবেশ করলাম, যেন আমি তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছি। আর আমি আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবু রাফে! সে বলল, তোমার কি হল, তোমার মা ধ্বংস হোক। আমি বললাম, তোমার কি অবস্থা? সে বলল, আমি জানি না, কে বা কারা আমার এখানে এসেছিল এবং আমাকে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, তারপর আমি আমার তরবারী তার পেটের উপর রেখে সব শক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম, ফলে তার হাঁড় পর্যন্ত কট করে উঠল। এরপর আমি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বের হয়ে এলাম। আমি অবতরণের উদ্দেশ্যে তাদের সিড়ির কাছে এলাম। যখন আম পড়ে গেলাম, তখন এতে আমার পায়ে আঘাত লাগল। আমি আমার সাথীদের সঙ্গে এসে মিলিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এখান হতে ততক্ষণ পর্যন্ত যাব না, যাবত না আমি মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকারীণীর আওয়াজ শুনতে পাই। হিজাযবাসীদের বণিক আবু রাফের মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা না শোনা পর্যন্ত আমি সে স্থান ত্যাগ করলাম না। তিনি বলেন, তখন আমি উঠে পড়লাম এবং আমার তখন কোনরূপ ব্যথা বেদনাই অনুভব হচ্ছিল না। অবশেষে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে এ বিষয়ে তাকে সংবাদ দিলাম।
হাদীস নং ২৮১৪
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীগণের একদলকে আবু রাফে ইয়াহুদীর নিকট প্রেরণ করেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা. রাত্রিকালে তার ঘরে ঢুকে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করেন।
হাদীস নং ২৮১৫
ইউসুফ ইবনে মূসা রহ………উমর ইবনে উবাইদুল্লাহ আযাদকৃত গোলাম আবুন নাযার রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনে উবাদুল্লাহর লেখক ছিলাম। তিনি বলেন, তাঁর নিকট আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. একখানা পত্র লিখেন। যখন তিনি হারুরিয়ার দিকে অভিযানে বের হন। আমি পত্রটি পাঠ করলাম–তাঁতে লেখা ছিল যে, শত্রুর সাথে কোন এক মুখোমুখি যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। এরপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সাথে মোকাবেলায় অবতীর্ণ হওয়ার কামনা করবে না এবং আল্লাহ তাআলার নিকট নিরাপত্তার দু’আ করবে। তারপর যখন তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে অবস্থিত। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন, হে আল্লাহ, কুরআন অবতরণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সৈন্যদলকে পরাজয় দানকারী, আপনি কাফির সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন। মূসা ইবনে উকবা রহ. বলেন, সালিম আবুন নাযার আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনে উবাইদুল্লাহর লেখক ছিলাম। তখন তার কাছে আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা.-এর একখানা পত্র পৌঁছল এই মর্মে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্খা করবে না। আমি আমি রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্খা করবে না। আর যখন তোমরা তাদের মুখোমুখি হবে তখন ধৈর্যধারণ করবে।