হাদীস নং ২৭৯৬
আদম রহ……….আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এস জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি ? সে বলল, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তাদের খেদমত করতে চেষ্টা কর।
হাদীস নং ২৭৯৭
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু বাশীর আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন। (রাবী) আবদুল্লাহ বলেন, আমার মনে হয়, তিনি (আবু বাশীর আনসারী) বলেছেন যে, মানুষ শয্যায় ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সংবাদ বাহককে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে, কোন উটের গলায় যেন ধনুকের রশির মালা কিংবা মালা না থাকে, থাকলে তা যেন কেটে ফেলা হয়।
হাদীস নং ২৭৯৮
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ………..ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন পুরুষ যেন অপর কোন মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত সফর না করে। এব ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জে যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে যাও নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।
হাদীস নং ২৭৯৯
আলী ইবনে আবদুল্লাহ রহ………..আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং যুবাইর ও মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রা.-কে পাঠিয়ে বললেন, তোমরা খাখ বাগানে যাও। সেখানে তোমরা এক মহিলাকে দেখতে পাবে। তার নিকট একটি পত্র আছে, তোমরা তার কাছ থেকে তা নিয়ে আসবে। তখন আমরা রওনা করলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদের নিয়ে দ্রুতবেগে চলছিল। অবশেষে আমরা উক্ত খাখ নামক বাগানে পৌঁছলাম এবং সেখানে আমরা মহিলাটিকে দেখতে পেলাম। আমরা বললাম, পত্র বাহির কর। সে বলল, আমার কাছে তো কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, তুমি অবশ্যই পত্র বের করে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় খুলতে হবে। তখন সে তার চুলের খোপা থেকে পত্রটি বের করে দিল। আমরা তখন সে পত্রটি নিয়ে রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলাম। দেখা গেল, তা হাতিব ইবন আবু বালতাআ রা.-এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিক ব্যক্তির নিকট লেখা হয়েছে। যাতে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হাতিব! একি ব্যাপার? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ব্যাপারে কোন তড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। মূলত আমি কুরাইশ বংশীয় লোক ছিলাম না। তবে তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আর যারা আপনার সঙ্গে মুহাজিরগণ রয়েছেন, তাদের সকলেরই মক্কাবাসীদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে তাদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ নিরাপদ। তাই আমি চেয়েছি, যেহেতু আমার বংশগতভাবে এ সম্পর্ক নেই, কাজেই আমি তাদের প্রতি এমন কিছু অনুগ্রহ প্রদর্শন করি, যদ্বারা অন্তত তারা আমার আপনজনদের রক্ষা করবে। আর আমি তো কুফরী কিংবা মুরতাদ হওয়ার উদ্দেশ্যে করিনি এবং ইসলাম গ্রহণের পর পুনঃ কুফরীতে প্রত্যাবর্তন করার প্রতি আকৃষ্ট হবার কারণেও নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাতিব তোমাদের নিকট সত্য কথা বলেছে। তখন উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সম্ভবত তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ তাআলা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর। আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি’। সুফিয়ান রহ. বলেন, এ সনদটি কতই না উত্তম।
হাদীস নং ২৮০০
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন বদর যুদ্ধের দিন কাফির বন্দীদেরকে হাযির করা হল এবং আব্বাস রা.-কেও আনা হল তখন তাঁর শরীরে পোশাক ছিলনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরের জন্য উপযোগী জামা খুজতে গিয়ে দেখলেন আবদুল্লাহ ইবন উবাই এর জামা তাঁর গায়ের উপযোগী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে জামাটি তাকেই পরিয়ে দেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ জামা খুলে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে (তার মৃত্যুর পর) পরিয়ে দিয়েছিলেন। ইবনে উয়াইনাহ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর একটি সৌজন্য আচরণ ছিল, তাই তিনি তার প্রতিদান দিতে চেয়েছেন।
হাদীস নং ২৮০১
কুতাইবা ইবনে সাঈদ রহ……….সাহল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন বলেন, আগমীকাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা দিব, যার হাতে আল্লাহ তাআলা বিজয় দান করবেন। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে, আর আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল তাকে ভালবাসে। লোকেরা সারা রাত এ চিন্তায় কাটিয়ে দেয় যে, কাকে পতাকা দেওয়া হয়? পরদিন সকালে প্রত্যেকেই এ আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন যে, হয়ত তাকে পতাকা দেয়া হবে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলী কোথায়? বলা হল যে, তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুখের লালা তাঁর চোখে লাগিয়ে দিলেন এবং দু’আ করলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে, তাঁর কোন অসুখই ছিল না। তারপর তাঁর হাতে পতাকা দিলেন। আলী রা. জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর হয়ে তাদের আঙিনায় অবতরণ কর। তারপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহবান কর এবং তাদের করণীয় সম্বন্ধে তাদের অবহিত কর। আল্লাহর কসম, আল্লাহ তাআলা যদি তোমার মাধ্যমে এক ব্যক্তিকে হিদায়েত দান করে, তবে তা তোমার জন্য লাল রংয়ের উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা শ্রেয়।