হাদীস নং ২৫২৩
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ রহ……….হাসান (বসরী) রহ. বলেন, আল্লাহর কসম, হাসান ইবনে আলী রা. পর্বত সদৃশ সেনাদল নিয়ে মুআবিয়া রা.-এর মুখোমুখি হলেন। আমর ইবনে আস রা. বললেন, আমি এমন সেনাদল দেখতে পাচ্ছি যারা প্রতিপক্ষকে হত্যা না করে ফিরে যাবে না। মুআবিয়া রা. তখন বললেন, আল্লাহর কসম ! আর (মুআবিয়া ও আমর ইবনে আস) রা. উভয়ের মধ্যে মুআবিয়া রা. ছিলেন উত্তম ব্যক্তি। হে আমর ! এরা ওদের এবং ওরা এদের হত্যা করলে, আমি কাকে দিয়ে লোকের সমস্যার সমাধান করব? তাদের নারীদের কে তত্ত্বাবধান করবে? তাদের দুর্বল ও শিশুদের কে রক্ষণাবেক্ষণ করবে ? তারপর তিনি কুরাইশের বনূ আবদে শামস খার দু’জন আবদুর রহমান ইবনে সামুরাহ ও আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.-কে হাসান রা.-এর কাছে পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, তোমরা উভয়ে এ লোকটির কাছে যাও এবং তাঁর কাছে (সন্ধির) প্রস্তাব দাও, তাঁর সঙ্গে আলোচনা কর ও তাঁর বক্তব্য জানতে চেষ্টা কর। তার তাঁর কাছে গেলেন এবং তাঁর সঙ্গে কথা বললেন, আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তাঁর বক্তব্য জানলেন। হাসান ইবনে আলী রা. তাদের বললেন, আমরা আবদুল মুত্তালিবের সন্তান, এই সম্পদ আমরা পেয়েছি। আর এর রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছে। তার উভয়ে বললেন, (মুআবিআ রা. আপনার কাছে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছেন। আর আপনার বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন ও সন্ধি কামনা করেছেন। তিনি বললেন, এ দায়িত্ব কে নিবে? তারা বললেন, আমরা আপনার জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করছি। এরপর তিনি তাদের কাছে যে সব প্রশ্ন করলেন, তারা বললেন, আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি। তারপর তিনি তাঁর সাথে সন্ধি করলেন। হাসান (বসরী) রহ. বলেন, আমি আবু বাকরা রা.-কে বলতে শুনেছি : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি মিম্বরের উপর দেখেছি, হাসান রা. তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার লোকদের দিকে আরেকবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আমার এ সন্তান নেতৃস্থানীয়। সম্ভবত তার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা মুসলমানের দুটি বড় দলের মধ্যে মিমাংসা করাবেন। আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, আলী ইবনে আবদুল্লাহ আমাকে বলেছেন যে, এ হাদীসের মাধ্যমেই আবু বাকরা রা. থেকে হাসানের শ্রুতি আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।
হাদীস নং ২৫২৪
ইসমাঈল ইবনে আবু উওয়াইস রহ……..আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার দরজায় বিবাদের আওয়াজ শুনতে পেলেন ; দুজন তাদের আওয়াজ উচ্চ করেছিল। একজন আরেকজনের কাছে ঋণের কিছু মাফ করে দেওয়ার এবং সহানুভূতি দেখানোর অনুরোধ করছিল। আর অপর ব্যক্তির বলছিল, না, আল্লাহর কসম ! আমি তা করব না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, সৎকাজ করবে না বলে যে আল্লাহর নামে কসম করেছে, সে লোকটি তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, সৎকাজ করবে না বলে যে আল্লাহর কসম করেছে, সে লোকটি কোথায়? সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমি। সে যা চাইবে তার জন্য তা-ই হবে।
হাদীস নং ২৫২৫
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………কাব ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাদরাদ আল-আসলামীর কাছে তার কিছু মাল পাওনা ছিল। রাবী বলেন, একবার সাক্ষাত পেয়ে তিনি তাকে ধরলেন, এমনকি তাদের আওয়াজ চড়ে গেল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি যেন হাতের ইশারায় বলছিলেন, অর্ধেক (নাও)। তারপর তিনি তার পাওনার অর্ধেক নিলেন আর অর্ধেক ছেড়ে দিলেন।
হাদীস নং ২৫২৬
ইসহাক রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মানুষের প্রতিটি হাতের জোড়ার জন্য তার উপর সাদকা রয়েছে। সূর্যোদয় হয় এমন প্রতিদিন মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সাদকা।
হাদীস নং ২৫২৭
আবুল ইয়ামান রহ………..যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি এক আনসারীর সাথে বিবাদ করেছিলেন, যিনি বদরে শরীক ছিলেন। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে পাথরী যমীনের একটি নালা সম্পর্কে অভিযোগ করলেন। তারা উভয়ে সে নালা থেকে পানি সেব করতেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইরকে বললেন, হে যু্বাইর! তুমি প্রথমে পানি সেচবে। তারপর তোমার প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দিবে। আনসারী তখন রেগে গেল এবং বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! সে আপনার ফুফুর ছেলে বলে (এ বিচার) ? এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারার রং বদলে গেল। তারপর তিনি বললেন, তুমি সেচ কর, তারপর পানি আটকে রাখ, বেষ্টনীর বরাবর পৌঁছা পর্যন্ত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর রা.-কে তার পূর্ণ হক দিলেন। এর আগে যুবাইর রা.-কে তিনি এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন যা আনসারীর জন্য সুবিধাজনক ছিল। কিন্তু আনসারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাগান্বিত করলে সুস্পষ্ট নির্দেশের যুবাইর রা.-কে তিনি তার পূর্ণ হক দান করলেন। উরওয়া রা. বলেন, যুবাইর রা. বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমার নিশ্চিত ধারণা যে (আল্লাহর বাণী) : কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ তারা তাদের নিজেদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পন না করে (৪: ৬৫) আয়াতটি সে ব্যাপারেই নাযিল হয়েছিল।