হাদীস নং ২৫১৭
ইয়াকুব ইবনে মুহাম্মদ রহ……….আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ আমাদের এ শরীয়াতে সংগত নয় এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর মাখরামী রহ. ও আবদুল ওয়াহিদ ইবনে আবু আউন, সাদ ইবনে ইবরাহীম রহ. থেকে তা বর্ণনা করেছেন।
হাদীস নং ২৫১৮
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়াতে সন্ধি করার সময় আলী রা. উভয় পক্ষের মাঝে এক চুক্তিপত্র লিখলেন। তিনি লিখলেন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মুশরিকরা বলল, ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লেখা চলবে না। আপনি রাসূল হলে আপনার সঙ্গে লড়াই কিসের? তখন তিনি আলীকে বললেন, ওটা মুছে দাও। আলী রা. বললেন, আমি তা মুছব না। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তা মুছে দিলেন এবং এই শর্তে তাদরে সাথে সন্ধি করলেন যে, তিনি এবং তাঁর সাহাবা তিন দিনের জন্য মক্কায় প্রবেশ করবেন এবং جلبان السلاح ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না। তারা জিজ্ঞাসা করল, جلبان السلاح মানে কি? তিনি বললেন, ‘জুলুব্বান’ অর্থ ভিতরে তরবারীসহ খাপ।
হাদীস নং ২৫১৯
উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা রহ………বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যিলকাদ মাসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরার উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করল। অবশেষে এই শর্তে তাদের সাথে ফয়সালা করলেন যে, তিনদিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্দিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তারা (মুশরিকরা) বলল, আমরা তাঁর রিসালত স্বীকার করি না। আমরা যদি একথাই মানে করতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসূল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল এবং আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ । তারপর তিনি আলীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ শব্দটি মুছে দাও। তিনি বললেন, না। আল্লাহর কসম, আমি আপনাকে (রাসূলুল্লাহ শব্দটি) কখনো মুছব না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন এবং লিখলেন, এ সন্ধিপত্র মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ সম্পন্ন করেন-খাপ বদ্ধ অস্ত্র ছাড়া আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে দিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাকে বাঁধা দিবেন না। তিনি যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন তারা এসে আলীকে বলল, তোমার সঙ্গীকে আমাদের এখান থেকে বের হতে বল। কেননা, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হলেন। তখন হামজার মেয়ে হে চাচা, হে চাচা, বলেন তাদের পেছনে পেছনে চলল। আলী রা. তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেন এবং ফাতিমাকে বললেন, এই নাও, তোমার চাচার মেয়েকে। আমি ওকে তুলে এনেছি। আলী, যায়েদ ও জাফর তাকে নেওয়ার ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হলেন। আলী রা. বললেন, আমি তার বেশী হকদার। কারণ সে আমার চাচার মেয়ে। জাফর রা. বললেন, সে আমার চাচার মেয়ে এবং তার খালা আমার স্ত্রী। যায়েদ রা. বললেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালার অনুকূলে ফয়সালা দিলেন এবং বললেন, খালা মায়ের স্থলবর্তী। আর আলীকে বললেন, আমি তোমার এবং তুমি আমার। জাফরকে বললেন, তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমার সদৃশ্য। আর যায়েদকে বললেন, তুমি তো আমাদের ভাই ও আযাদকৃত গোলাম।
হাদীস নং ২৫২০
মুহাম্মদ ইবনে রাফি রহ………..ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা করতে রওয়ানা হলেন। কিন্তু কুরাইশ কাফিরার তাঁর ও বায়তুল্লাহর মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল। তখন তিনি হুদায়বিয়াতে তাঁর হাদী কুরবানী করলেন, আর মাথা মুড়াইলেন এবং তাদের সাথে সন্ধি করলেন এই শর্তে যে, আগামী বছর তিনি উমরা করবেন আর তরবারি ছাড়া অন্য কোন অস্ত্র নিয়ে তাদের কাছে আসবেন না । আর তারা যতদিন পছন্দ করবে তিনি ততদিন সেখানে থাকবেন। পরের বছর তিনি উমরা করলেন এবং যেমন সন্ধি করেছিলেন তেমনিভাবে মক্কায় প্রবেশ করলেন। তিনি সেখানে তিনদিন অবস্থান করলেন। তারা তাকে বেরিয়ে যেতে বললে, তিনি বেরিয়ে গেলেন।
হাদীস নং ২৫২১
মুসাদ্দাদ রহ……..সাহল ইবনে আবু হাসমা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার সন্ধিবদ্ধ থাকাকালে আবদুল্লাহ ইবনে সাহল ও মুহাইয়াসা ইবনে মাসউদ ইবনে যায়েদ রা. খায়বার গিয়েছিলেন।
হাদীস নং ২৫২২
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রহ…………আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রুবাইয়্যি বিনতে নাযর রা. এক কিশোরীর সামনের দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। তারা ক্ষতিপূরণ দাবী করল আর অপর পক্ষ ক্ষমা চাইল। তারা অস্বীকার করল এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এল। তিনি কিসাসের নির্দেশ দিলেন। আনাস ইবনে নাযর রা. তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! রুবাইয়্যি-এর দাঁত ভাঙ্গা হবে? না যিনি আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তিনি বললেন, হে আনাস ! আল্লাহর বিধান হল কিসাস। তারপর বাদীপক্ষ রাযী হয় এবং ক্ষমা করে দেয়। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লারহ বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও রয়েছেন যে, আল্লাহর নামে কোন কসম করলে তা পূরণ করেন। ফাযারী রহ. হুমায়দ রহ. সূত্রে আনাস রা. থেকে রিওয়ায়াত করতে গিয়ে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তখন লোকেরা সম্মত হল এবং ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করল।