হাদীস নং ২৬০৭
হাফস ইবনে উমর রা………. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানূ সুলাইমের সত্তর জন্য লোকের একটি দলকে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বানূ আমিরের কাছে পাঠান। দলটি সেখানে পৌঁছলে আমার মামা তাদেরকে বললেন, আমি সর্বাগ্রে বনূ আমিরের কাছে যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী পৌঁছাতে পারি, (তবে তো ভাল) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে।তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী শুনাতে লাগলেন, সেই সময় আমির গোত্রীয়রা এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করল। আর সেই ব্যক্তি তার প্রতি তীর মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ আকবার, কাবার রবের কসম! আমি সফলকাম হয়েছি। তারপর কাফিররা তার অন্যান্য সঙ্গীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সকলকে শহীদ করল, কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যক্তি বেঁচে গেলেন, তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন। হাম্মাম রহ. অতিরিক্ত উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তার সাথে অন্য একজন ছিলেন। তারপর জিবরাঈল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর দিলেন যে, প্রেরিত দলটি তাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করেছেন। পরে এ আয়াতটি মানসুখ হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি অবাধ্যতার দরুন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রমাগত চল্লিশ দিন রিল, যাকওয়ান, বানূ লিহয়ান ও বানূ উসাইয়্যার বিরুদ্ধে দু’আ করেন।
হাদীস নং ২৬০৮
মূসা ইবনে ইসমাঈল রহ……….জুনদুব ইবনে সুফিয়ান রা. থেকে বর্ণিত, কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হলে তিনি পড়েছিলেন : তুমি তো একটি আঙ্গুল মাত্র ; তুমি তো রক্তাক্ত হয়েছ আল্লাহরই পথে।
হাদীস নং ২৬০৯
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রহ……….আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহত হলে কিয়ামতের দিন সে তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়ে আসবে এবং তা থেকে মিশকের ছড়াবে এবং আল্লাহই ভাল জানেন কে তার পথে আহত হবে।
হাদীস নং ২৬১০
ইয়াহইয়া ইবনে বুকাইর রহ………আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, আবু সুফিয়ান ইবনে হারব রা. তাকে জানিয়েছেন যে, হিরাকল তাকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধের ফলাফল কিরূপ ছিল? তুমি চলেছ যে, যুদ্ধ বড় পানির পাত্র এবং ধন সম্পদের মত। রাসূলগণ এভাবেই পরীক্ষিত হয়ে থাকেন। তারপর ভাল পরিণতি তাদেরই হয়।
হাদীস নং ২৬১১
মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ খুযায়ী রহ……..আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইবনে নাযার রা. বদরের যুদ্ধের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধ করেছেন, আমি সে সময় অনুপস্থিত ছিলাম। আল্লাহ যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে শরীক মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আনাস ইবনে নাযার রা. বলেছিলেন, ইয়া আল্লাহ ! এরা অর্থাৎ তাঁর সাহাবীরা যা করেছেন, তার সম্বন্ধে আপনার কাছে ওযর পেশ করছি এবং এরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে আমি নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন, এবং সাদ ইবনে মুআযের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হল। তিনি বললেন, হে সাদ ইবনে মুআয, নাযারের রবের কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি। সাদ রা. বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি যা করেছেন, আমি তা করতে পারিনি। আনাস রা. বলেন, আমরা তাকে এমতাবস্থায় পেয়েছি যে, তার দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের যখম রয়েছে। আমরা তাকে নিহত অবস্থায় পেলাম। মুশরিকরা তার দেহ বিকৃত করে ফেলেছিল। তার বোন ছাড়া কেউ তাকে চিনতে পারেনি এবং বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনতে পেরেছিল। আনাস রা. বলেন, আমাদের ধারণা, কুরআনের এই আয়াতটি: من المؤمنين رجال صدقوا ما عاهدوا الله عليه الآية তাঁর এবং তাদের মত মুমিনদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আনাস রা. আরো বলেন, রুবিয়্যা নামক তার এক বোন কোন এক মহিলার সামনের দাঁত ভেঙ্গে দিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কিসাসের নির্দেশ দেন। আনাস রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে হকসহ পাঠিয়েছেন, তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। পরবর্তীতে তার বাদীপক্ষ কিসাসের পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ নিতে রাযী হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন, যারা কসম করলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন।
হাদীস নং ২৬১২
আবুল ইয়ামান ও ইসমাঈল রহ………যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কুরআনের আয়াতসমূহ একত্রিত করে একটি মুসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম, তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমি পেলাম না। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পড়তে শুনেছি। একমাত্র খুযাইমা আনসারী রা.-এর কাছে পেলাম। যার সাক্ষ্যকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ব্যক্তির সাক্ষ্যের সমান সাব্যস্ত করেছিলেন। সে আয়াতটি : من المؤمنين رجال صدقوا ما عاهدوا الله عليه الآية (৩৩: ২৩)।