তাই তো। টেবিলে ফেলে রাখা পাঁচশ টাকার নোটটা নেই।
টুকুন বলল, আমার মনে হয় ঝেং-এর বাচ্চা নোটটা খেয়ে ফেলেছে। আমরা যখন অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছিলাম তখন সে এক ফাঁকে কপ করে খেয়ে ফেলেছে।
ডাক্তার সাহেব বললেন, শোন খোকা, কেউ কিছু খায়নি। বাতাসে নোটটা টেবিল থেকে নিচে পড়ে গেছে। এক্ষুণি তা খুঁজে বের করা হবে।
ডাক্তার সাহেব ব্যস্ত হয়ে টেবিলের নিচে খুঁজতে লাগলেন। ময়লা ফেলার ঝুড়ির সব কাগজ মেঝেতে ঢেলে ফেলা হল। টুকুনের বাবা-মাও খুঁজতে লাগলেন। টুকুনও খুঁজছে। নোট নেই। ডাক্তার সাহেব গম্ভীর মুখে বললেন, বাতাসে হয়ত জানালা দিয়ে বাইরে চলে গেছে। এই হয়েছে। এছাড়া আর কিছু না। তিনি তাঁর এ্যাসিসটেন্টকে বাইরে খুঁজতে পাঠালেন। কিছু পাওয়া গেল না।
ডাক্তার সাহেব বললেন, বুঝতে পেরেছি কি হয়েছে –নোটটা জানালা দিয়ে। বাইরে চলে গেছে। কেউ একজন খুঁজে পেয়ে নিয়ে গেছে। এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা। রশিদ সাহেব বিব্রত গলায় বললেন, কিছু যদি মনে করেন, আমি আপনাকে টাকাটা দিয়ে দি।
আরে না, আপনি কেন টাকা দেবেন! ভাল কথা, এই অদৃশ্য জন্তুর অস্তিত্বে আপনারা কি বিশ্বাস করেন?
জি-না।
এমন কিছু কি ঘটেছে যাতে এই জন্তুটিকে বিশ্বাস করতে হয়?
না, এমন কিছু ঘটে নি।
তাহলে তো কোন সমস্যাই নেই। এই ছেলে কি ভাবছে না ভাবছে এটা বড় কথা নয়। আমার মনে হয় আপনার ছেলে এইচ. জি. ওয়েলএর ইনভিজিবল ম্যান বইটা পড়েছে। পড়ার পর তার মাথায় অদৃশ্য জন্তুর ধারণা ঢুকে গেছে। আপনারা প্রশ্রয় দেবেন না। তাহলেই হল।
আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি না।
দিচ্ছেন না তাও কিন্তু না। প্রশ্রয় দিচ্ছেন– এই যে ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছেন, এও এক ধরনের প্রশ্রয় দেয়া।
ডাক্তার সাহেব টুকুনের দিকে তাকিয়ে বললেন, খোকা তুমি কি অদৃশ্য মানব বইটা পড়েছ?
টুকুন গম্ভীর গলায় বলল, মানুষ অদৃশ্য হতে পারে না। অদৃশ্য হয় ঝেং এর বাচ্চা।
ডাক্তার সাহেব বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে।
রশিদ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। টুকুনকে বললেন, উনাকে স্নামালিকুম দাও।
টুকুন বলল, স্লামালিকুম।
ডাক্তার সাহেব বললেন, খোকা, তুমি কি তোমার ঝেং-এর বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছ?
জি, নিয়ে যাচ্ছি।
গুড।
তাঁরা চলে যাবার পর ডাক্তার সাহেবের ভুরু কুঞ্চিত হল, কারণ টেবিলে রাখা তাঁর ডায়েরীর অর্ধেকের মত পাতা নেই। মনে হচ্ছে এইমাত্র ছিঁড়ে নেয়া হয়েছে। অথচ এই ডায়েরীটা তার খুবই দরকারী। জরুরী ঠিকানা, টেলিফোন নাম্বার লেখা। ডাক্তার সাহেব গম্ভীর মুখে বসে রইলেন।
অপালার পরীক্ষা
০৬.
অপালার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। খুব ভাল পরীক্ষা হওয়ায় তার মন ভাল। সে পরীক্ষার পরদিনই একটা ক্যামেরা নিয়ে টুকুনদের বাসায় উপস্থিত। এখন সে টুকুনের বিখ্যাত ঝেং-এর ছানা নিয়ে গবেষণা করবে। ক্যামেরা এনেছে। ঝেং-এর বাচ্চার ছবি তুলে, ছবি প্রিন্ট করবে। যদি ছবিতে কিছু আসে। বেশকিছু ছবি তোলা হল। সিঙ্গেল ছবি, টুকুনের কোলে বসিয়ে ছবি। ফ্ল্যাশ লাইট দিয়ে, ফ্ল্যাশ লাইট ছাড়া।
টুকুন বলল, ছবিতে কি ওকে দেখা যাবে ছোট ফুপু?
অপলা বলল, না দেখা যাবে না। যে জিনিস চোখে দেখা যায় না সে জিনিস ক্যামেরাতেও ধরা পড়ে না।
তাহলে ছবি তুলছ কেন?
এমনি তুলছি।
অপলা শুধু যে ছবি তুলল তাই না, আরো কিছু কাণ্ড করল। ওজন মাপার যন্ত্রে জন্তুটার ওজন নেয়ার চেষ্টা করল। না এর কোন ওজন নেই।
অপলা বলল, এখন তোর ঝেং-এর বাচ্চাকে আমরা চৌবাচ্চার পানিতে চুবিয়ে ধরে রাখব।
তাতে কি হবে?
দেখব বেঁচে থাকার জন্যে এর অক্সিজেনের দরকার আছে কি না। ধর, এটাকে নিয়ে আয়, আমরা চৌবাচ্চার পানিতে চুবাব।
না, এর কষ্ট হবে।
কষ্ট হলে ছটফট করবে। তখন ছেড়ে দিস। তোর হাতেই তো থাকবে।
ঝেং এর বাচ্চাকে চৌবাচ্চার পানিতে চুবানো হল। কিছু হল না। অপলা বলল, আচ্ছা, তোর এই জন্তুটার উপর আমি যদি বসে পড়ি তাহলে ওর কি হয়?
কিছুই হয় না। চ্যাপ্টা হয়ে যায়। তুমি উঠে দাঁড়ালে আবার ঠিক হয়ে যায়।
চল এটাকে কোন একটা ক্লিনিকে নিয়ে যাই। এক্সরে করাব। এক্সরে করে দেখব কি ব্যাপার।
তাও করা হল। অপলা নানান পরীক্ষার পর একটি রিপোর্ট লিখল। সেই রিপোর্ট টাইপ করে টুকুনের হাতে দিয়ে বলল, নে গাধা, বাংলায় লিখে এনেছি। যাকে বলে নিখুঁত বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন। বসে বসে পড়, তারপর মাথা থেকে ঝেং-এর বাচ্চা দূর কর। তুই সবাইকে যথেষ্ট যন্ত্রণা দিয়েছিস। আর না।
অপলা যা লিখে এনেছে তা হল–
ঝেং-এর বাচ্চা
একটি বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন
নাম : ঝেং-এর বাচ্চা।
প্রজাতি : অজানা। (টুকুনের ধারণা– এটি চার কানের অদৃশ্য জন্তু)
ওজন : শূন্য।
দৈর্ঘ ও উচ্চতা : শূন্য।
বর্ণ ও গন্ধ: নাই।
খাদ্য : গ্রহণ করে না। (টুকুনের ধারণা –কাগজ খায় যদিও তা প্রমাণ করা যায়নি।)
ফটোগ্রাফি এবং এক্সরে পরীক্ষা : কিছু পাওয়া যায়নি।
অক্সিজেন গ্রহণ : তথাকথিত জন্তুটি অক্সিজেন গ্রহণ করে না। পানির নিচে, এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড পূর্ণ বাক্সে জন্তুটিকে দীর্ঘ সময় রেখে দেখা গেছে সে ভালই আছে।
ঘাত সহনশীলতা : প্রচণ্ড চাপেও জন্তুটির কিছু হয় না। জন্তুটি স্থিতিস্থাপক। টানলে রবারের মত বাড়ে ( টুকুনের বক্তব্য। কারণ আমরা কেউ তা দেখতে পাচ্ছি না।]