হু।
কেন! আমি কি করলাম?
তুমি আমার কথা বিশ্বাস করনি। এই জন্যে আমি রাগ করেছি। তুমি যা বল আমি তা বিশ্বাস করি। তুমি কেন আমার কথা বিশ্বাস কর না?
তুই চাস আমি তোর কথা বিশ্বাস করি?
হ্যাঁ।
শোন টুকুন, আমি অন্য বড়দের মত না। আমি ছোটদের কথা মন দিয়ে শুনি এবং বিশ্বাস করার চেষ্টা করি। কিন্তু তোর কথা বিশ্বাস করা যাচ্ছে না?
কেন যাচ্ছে না?
বিশ্বাস করা যাচ্ছে না, কারণ মানুষের পক্ষে কথা বলা সম্ভব, পাখির পক্ষে সম্ভব না। মানুষের মাথায় অনেকখানি মগজ। পাখির মগজ আর কতটুকু! এই একটুখানি। লবণের চামচে একচামচ। এত অল্প মগজ নিয়ে পাখির পক্ষে কথা বলা সম্ভব না।
ময়নাও তো কথা বলে। ময়নার মগজও তো একটুখানি।
ময়না বলে শেখানো কথা। তাও একট-দুটা বাক্য –কুটুম এসেছে পিড়ি দাও –এই রকম। এর বেশি না। তাছাড়া ময়না যখন কথা বলে আমরা সবাই তা শুনতে পাই এবং বুঝতে পারি। এখানে কাক কথা বলছে আর তুই একা শুধু বুঝতে পারছিস তা তো হয় না। তুই তো আলাদা কিছু না। তুই আমাদের মতই একজন। তোর দুটা হাত, দুটা পা, দুটা চোখ …. আমাদেরও তাই। বুঝতে পারছিস?
পারছি।
বুঝতে পেরে থাকলে আমার দিকে তাকিয়ে বিরাট একটা হাসি দে। দাঁত বের করে হাস।
টুকুন হাসল না, গম্ভীর গলায় বলল, আচ্ছা ছোট ফু, কাকটা যদি আমার জন্মদিনে আমার জন্যে কোন উপহার নিয়ে আসে তাহলে কি তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে?
অপলা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, যদি সত্যি সত্যি তোর জন্যে সে উপহার নিয়ে উপস্থিত হয় তাহলে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আবার ভাবতে হবে। কোন কিছুই চট করে বিশ্বাস করতে নেই। বিশ্বাস করলে খুব সমস্যা। বিরাট সমস্যা। ভয়ংকর সমস্যা।
কি সমস্যা?
ধর, একজন লোক এসে বলল, ঢাকার নিউ এলিফেন্ট রোডে বাটার জুতার দোকানের সামনে এক ভয়ঙ্কর কাণ্ড হয়েছে। একটা বাঘ বের হয়েছে। যাকে পাচ্ছে তাকেই কামড়ে খেয়ে ফেলছে। এখন যদি লোকটার কথায় বিশ্বাস করে সবাই ঢাকা ছেড়ে পালাতে শুরু করে তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াবে? এট কি ঠিক হবে টুকুন?
না, ঠিক হবে না।
তাহলে তুই এখন বুঝতে পারছিস যে আমাদের চট করে কিছু বিশ্বাস করতে নেই?
পারছি।
এই কারণেই আমি তোর কথা বিশ্বাস করছি না। তবে তোর জন্মদিন আসুক, দেখা যাক তোর কাক কি উপহার নিয়ে উপস্থিত হয়। তারপর আমরা না হয় আবার চিন্তা-ভাবনা করব। এখন একটু হাস তো লক্ষ্মী সোনা।
টুকুনের রাগ লাগছে। হাসতে ইচ্ছা করছে না। তবু ছোট ফুপুকে খুশি করার জন্যে সে হাসল।
আজ টুকুনের জন্মদিন
০৪.
আজ টুকুনের জন্মদিন।
টুকুন ভেবেছিল জমকালো জন্মদিন হবে। লোকজনে বাড়ি ভরে যাবে। বিরাট একটা কেক আসবে। সাতটা মোমবাতি জ্বলবে। সে ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নেভাবার সময় মনে মনে একটা জিনিস চাইবে। যা চাইবে তাই হবে। এই হল নিয়ম। দেখা গেল জন্মদিনে কেউ আসছে না।
রশিদ সাহেব বিকেলে অফিস থেকে ফিরলেন খালি হাতে। উপহারের কোন প্যাকেট তাঁর হাতে দেখা গেল না। এক সময় টুকুন তার মার কাছে গিয়ে বলল, জন্মদিনের কেক আনতে কে যাবে মা?
তিনি বললেন, কেউ যাবে না। তোমাকে গত জন্মদিনে আমরা কি বলেছিলাম? সাত বছর বয়স পর্যন্ত জন্মদিন হবে। তারপর আর হবে না। তোমার বাবার এসব পছন্দ না। আমারো না।
কেউ আসবে না মা?।
না, কেউ আসবে না। কাউকে আসতে বলিনি। তবে কেউ যদি নিজ থেকে চলে আসে তাহলে আসবে। যেমন ধর তোমার ছোট ফুপু। সে তো আসবেই।
উপহারও আনবে। তাই না মা?
হ্যাঁ উপহার আনবে।
তোমরা কি কিছু কিনেছ আমার জন্যে?
আমরা একটা উপহার কিনেছি। তবে তা তোমাকে দেয়া ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না। তোমার বাবা চিন্তা করছেন। তিনি যদি মনে করেন তোমাকে দেয়া যায় তাহলে হয়তো বা দেয়া হবে।
কতক্ষণ লাগবে তাঁর চিন্তা শেষ করতে?
তা তো বলতে পারি না।
টুকুন মন খারাপ করে ঘুরতে লাগল। তার কিছু ভাল লাগছে না। অবশ্যি সে এখনো আশা ছাড়েনি। তার কেন জানি মনে হচ্ছে সন্ধ্যার পর দেখা যাবে এক এক করে বাড়ি ভর্তি হয়ে গেছে। তাদের টুকুনের জন্মদিনের কথা বলা হয়নি, তবে তারিখটা তাঁদের মনে ছিল বলে নিজে থেকেই চলে এসেছেন। এত মানুষজন এসেছে দেখে শেষ মুহূর্তে বাবা বলবেন –আচ্ছা ঠিক আছে, একটা কেক না হয় কিনে নিয়ে আসি।
সন্ধ্যার পরও কেউ এল না। এমন কি ছোট ফুপুও না। তবে ছোট ফুপু টেলিফোন করলেন।
হ্যালো টুকুন সোনা, শুভ জন্মদিন।
টুকুন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, থ্যাঙ্ক ইউ।
ছোট ফুপু টুকুনের কাঁদো গলা ধরতে পারলেন না। তিনি হাসিমুখে বললেন, খুব মজা হচ্ছে, তাই না?
হু।
কেক কি কাটা হয়ে গেছে?
এখনো হয়নি।
টুকুনের চোখে এবার সত্যি সত্যি পানি এসে গেল। টেলিফোনে চোখের পানি দেখা যায় না বলে রক্ষা। দেখা গেলে সমস্যা হত।
টুকুন!
জ্বি!
তোর গলা এমন শুনাচ্ছে কেন? সর্দি লেগেছে নাকি?
হু।
ছোট ফুপু বললেন, আমার কোন অসুখ-বিসুখ হলে ভাল হত। বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম করতে পারতাম। অসুখ-বিসুখ কিছু হচ্ছে না। দিনরাত ফিজিক্স পড়তে হচ্ছে। এখন পড়ছি ফুয়িড ডায়নামিক্স –অতি বিশ্রী জিনিস।
আমার উপহার কিনেছ ছোট ফুপু?
না, কেনা হয়নি। ঘর থেকে বের হতে পারি না –উপহার কিনব কি? একসময় কিনে এসে দিয়ে যাব।
আচ্ছা।
ভাল কথা, তোর কাক কি উপহার নিয়ে এসেছে?