রাসায়নিক সক্রিয়তা : বস্তুটি রাসায়নিকভাবে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। পানি, তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষার তার কিছুই করে না।
বস্তু ভেদ্যতা : জন্তুটি যে কোন বস্তুর ভেতর দিয়ে যেতে পারে। একে টিনের ট্রাংকের ভেতরে বন্ধ করে রাখলেও এ ট্রাংকের ভেতর দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। সিমেন্টের দেয়ালের ভেতর দিয়ে পারাপার করতে পারে (টুকুনের ধারণা)।
গবেষকের পরীক্ষার ফলাফল : পরীক্ষালব্ধ ফলাফল বিবেচনা করে গবেষক এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, অদৃশ্য জন্তু জনৈক কিশোরের কষ্টকল্পনা। এই কল্পনাকে কিছুতেই প্রশ্রয় দেয়া যায় না। কিশোরকে বলা হচ্ছে সে যেন তার এই অদৃশ্য জন্তু, তথাকথিত ঝেং-এর বাচ্চাকে অনতিবিলম্বে দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসে। তার নিজের এবং পরিবারের শান্তির জন্যে এটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
টুকুন মুখ কালো করে প্রতিবেদন পড়ল। অপলা হাই তুলে বলল, পড়েছিস?
হু।
তোকে তিন দিন সময় দেয়া হল। তিন দিনের ভেতর এই যন্ত্রণার মুক্তি চাই। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় যা পাওয়া গেল, তোকে বললাম।
আচ্ছা।
মুখ হাড়ির মত করে রেখেছিস কেন? মুখ হাড়ির মত করে রাখার কিছু নেই।
অপলা শিস দিতে দিতে চলে গেল। মন খারাপ করে নিজের ঘরে টুকুন চুপচাপ বসে রইল। ঝেং-এর বাচ্চাকে নিয়ে আজ আর খেলতেও ইচ্ছা করছে না। শুধুই কাঁদতে ইচ্ছা করছে। মৃদুলা যদি একটু বড় হত তাহলে তার সঙ্গে গল্প করে সময় কাটত। সে এখনো এত ছোট। সে এখন শুধু দাঁড়াতে শিখেছে, অল্প অল্প হাঁটাও শিখেছে। কথা বলা ঠিকমত শেখেনি। কাগজ ছেঁড়া ছাড়া অন্য কিছু এখনো ভালমত পারে না। সে কাগজ ঘেঁড়ে। ঝেং-এর বাচ্চা তার কোলে বসে থাকে। কোলে বসে বসেই খায়। টুকুনের ধারণা– মৃদুলা ঝেং-এর বাচ্চাকে দেখতে পায়। সে কথা বলতে পারে না বলে ঘটনাটা অন্যদের বলতে পারে না।
আজ ছুটির দিন
০৭.
আজ ছুটির দিন। ছুটির দিন দুপুরে টুকুন কখনো ঘুমায় না। আজ তার এতই মন খারাপ যে চাদর গায়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল– ঘুম ভাঙল দাঁড়কাকের ডাকে —
ও টুকুন! টুকুন! অসময়ে ঘুমুচ্ছ? ব্যাপারটা কি? দুপুরে কেউ ঘুমায়?
টুকুন উঠে বসল। কাক একসঙ্গে অনেকগুলি প্রশ্ন করল,
ব্যাপার কি?
মন খারাপ কেন?
কাঁদছিলে নাকি?
হয়েছে কি?
টুকুন বলল, ছোট ফুপু রিসার্চ করে বের করেছেন ঝেং-এর বাচ্চা বলে কিছু নেই।
রিসার্চ করে বের করে ফেলেছে?
হু।
কি বলল সে?
বলল, এমন কিছু থাকতে পারে না যে শুধু কাগজ খায় –আর কিছু খায় না।
এই কথা বলল?
হু।
শোন টুকুন, ঝেং-এর বাচ্চা আছে। প্রতিটি সরকারি অফিসে একটা-দুটা করে ঝেং-এর বাচ্চা আছে। এরা কি করে জান? এরা দরকারী ফাইল খেয়ে ফেলে। প্রায়ই শোন না ফাইল পাওয়া যায় না? পাওয়া যায় না কেন? ঝেং-এর বাচ্চারা খেয়ে ফেলে। এরা বেঁচেই আছে সরকারি ফাইল খেয়ে।
সত্যি?
হ্যাঁ সত্যি।
দলিলপত্রের রেকর্ড যেখানে থাকে সেখানেও ঝেং-এর বাচ্চারা থাকে। তারা মহানন্দে রেকর্ডপত্র খেয়ে ফেলে।
কেউ কিছু বলে না?
না, বরং খুশি হয়।
ছোট ফুপুর রিসার্চ তাহলে ঠিক না?
উঁহু।
একটা কাগজে উনি প্রতিবেদন লিখেছেন। আপনি একটু পড়ে দেখবেন?
প্রতিবেদন ফেদন পড়তে ভাল লাগে না। চোখেও ডিসটার্ব করছে। তুমি পড়। আমি শুনি।
টুকুন পড়ে শোনাল। দাঁড়কাক গম্ভীর ভঙ্গিতে শুনল। পড়া শেষ হলে বলল, বোগাস। রিসার্চ কিছুই হয়নি। তোমার ছোট ফুপুর মাথা মোটা।
উনার মাথা মোটেই মোটা না। গত বছর ফিজিক্স অনার্স পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছেন।
এইটাই তো মাথামোটার লক্ষণ। মাথামোটারা পড়ার বই ছাড়া কিছু বুঝে না– শুধু বই পড়ে আর ফাস্ট-সেকেন্ড হয়। ঐ যে তোমাদের রবীন্দ্রনাথের কথাই ধর। কাক নিয়ে যিনি এত সুন্দর একটা কবিতা লিখলেন —
বৈশাখ মাসে কাক গাছে বসে থাকে।
তিনি কি কখনো ফার্স্ট-সেকেন্ড হয়েছেন? হননি। তুমি তোমার ছোট ফুপুকে বলবে –ফুপু, আপনার মাথা মোটা।
এটা বলা যাবে না। শুনলে উনি খুব রাগ করবেন।
রাগ করলেও বলা উচিত। সত্য গোপন করতে নেই। কি অদ্ভুত মাথামোটা মেয়ে– চোখে দেখা যাচ্ছে না। কাজেই বলে দিল জিনিস নেই। অনেক কিছুই আছে কিন্তু চোখে দেখা যায় না– যেমন ধর তোমার ইলেট্রন প্রোটন। এদের ওজন আছে, কিন্তু ওজন খুব কম। সাধারণ পাল্লাপাথরে মাপা যায় না। সে ঝেং-এর বাচ্চার ওজন মাপার জন্যে সাধারণ একটা দাঁড়িপাল্লা নিয়ে এসেছে– কি রকম মাথামোটা মেয়ে –উফ! যাও তো টুকুন– টেলিফোন করে আমার কথাগুলি বলে আস।
টুকুন টেলিফোন করতে উঠে গেল।
হ্যালো ছোট ফুপু!
কে টুকুন?
কাকটা এসেছিল।
ও আচ্ছা। আমি ভেবেছিলাম ঝেং-এর বাচ্চা পাওয়ার পর কাক বাবাজী দূর হয়েছেন। উনি তাহলে দূর হননি?
না।
ভাল কথা। উনি কি বললেন?
উনি বললেন– তোমার মাথা মোটা।
আমার মাথা মোটা?
হ্যাঁ?
আর উনার মাথা খুব সরু?
ছোটফুপা উনার নিজের মাথার কথা কিছু বলেন নি। তোমারটার কথা বলেছেন।
কেন আমার মাথা মোটা সেটা বলেনি?
বলেছেন। উনি বলেছেন চোখে না দেখা গেলেই যে একটা জিনিস থাকবে না, তা না। ইলেকট্রন দেখা যায় না। কিন্তু ইলেক্ট্রন আছে।
অবশ্যই আছে। কিন্তু গাধা– ইলেট্রন দেখা না গেলেও ইলেকট্রনের কাজকর্ম দেখা যায়। তারে হাত দিলে শক খেতে হয়। শক খায় ইলেকট্রনের জন্যে। তোর ঝেং-এর বাচ্চা কিছু করে না। কাউকে শক দেয় না। এমন যদি হত ঘরের সব কাগজপত্র খেয়ে ফেলতো তাহলেও বুঝতাম।