- বইয়ের নামঃ ইতিহাসের উত্তরাধিকার
- লেখকের নামঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায়
- বিভাগসমূহঃ ইতিহাস
০০. ভূমিকা: রাষ্ট্র, জাতীয়তা, ইতিহাস
ইতিহাসের উত্তরাধিকার – পার্থ চট্টোপাধ্যায়
আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা ৯
প্রথম সংস্করণ – এপ্রিল ২০০০
.
আমার লেখক জীবনের আদি কমরেড
অরূপ মল্লিক ও দীপেশ চক্রবর্তী-কে
.
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
‘রাষ্ট্র ও সামাবাদ’, এক্ষণ, শারদীয় ১৩৮৭ (১৯৮০)।
‘কৃষকবিদ্রোহ ও রাষ্ট্রবিপ্লব’, অনীক, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৮৩। ‘গণতন্ত্রে মানবাধিকার, কপিল ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা, ৮ অক্টোবর ১৯৯৬, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এ.পি.ডি.আর.) আয়োজিত। ইতিপূর্বে অপ্রকাশিত।
‘ক্ষমতা প্রসঙ্গে দুই প্রেক্ষিত: গ্রামশি ও মিশেল ফুঁকো’, শোভনলাল দত্তগুপ্ত সম্পাদিত আনলতানিও গ্রামশি বিচার-বিশ্লেষণ, দ্বিতীয় খণ্ড (কলকাতা: পার্ল পাবলিশার্স, ২০০০) গ্রন্থ থেকে পুনর্মুদ্রিত।
‘বন্ধন-ছেদন’, চতুরঙ্গ, জুলাই ১৯৮৬।
‘জাতীয় একাংকিকা’, অনুইপ, শীত ১৯৮৭।
‘জাত-জাতি-জাতীয়তা’, সুজিত সেন সম্পাদিত জাতপাতের রাজনীতি (কলকাতা: পুস্তক বিপণি, ১৯৮৯) গ্রন্থ থেকে পুনর্মুদ্রিত।
‘জাতিভিত্তিক সংরক্ষণ আর তার বিরোধীরা’, (মূল শিরোনাম ‘এই গেল গেল রব নতুন নয়’), আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯০।
‘বাংলার গ্রাম-সমাজ প্রসঙ্গে কার্ল মার্কস’, বারোমাস, শারদীয় ১৯৮৭। ‘ইতিহাসের উত্তরাধিকার’, বারোমাস, এপ্রিল ১৯৯১।
‘আমাদের আধুনিকতা’, শ্রীজ্ঞান হালদার স্মারক বক্তৃতা, ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪, শ্রীজ্ঞান হালদার স্মারক কমিটি আয়োজিত।
.
সুচি
ভূমিকা: রাষ্ট্র, জাতীয়তা, ইতিহাস
রাষ্ট্র
১। রাষ্ট্র ও সাম্যবাদ
২। কৃষকবিদ্রোহ ও রাষ্ট্রবিপ্লব
৩। গণতন্ত্রে মানবাধিকার
৪। ক্ষমতা প্রসঙ্গে দুই প্রেক্ষিত: গ্রামশি ও মিশেল ফুঁকো
জাতীয়তা
৫। বন্ধন-ছেদন।
৬। জাতীয় একাংকিকা
৭। জাত-জাতি-জাতীয়তা
৮। জাতিভিত্তিক সংরক্ষণ আর তার বিরোধীরা
ইতিহাস
৯। বাংলার গ্রাম সমাজ প্রসঙ্গে কার্ল মার্কস
১০। ইতিহাসের উত্তরাধিকার
১১। আমাদের আধুনিকতা।
নির্ঘণ্ট
.
ভূমিকা : রাষ্ট্র, জাতীয়তা, ইতিহাস
এই বই-এর প্রবন্ধগুলি গত বিশ বছরে নানা সময়ে লেখা। স্বভাবতই, প্রবন্ধের উপলক্ষ, প্রেক্ষিত, অনুষঙ্গ, এমনকী উদ্দেশ্য, রচনার সময় যা ছিল, এখন আর তা নেই। এই পরিবর্তনের কথা মনে রেখে প্রবন্ধগুলো নতুন করে লেখা যেত হয়তো। অন্তত সংস্কার করা যেত। কিন্তু তাতে মূল রচনার প্রামাণিকতা নিশ্চিতভাবে ক্ষুণ্ণ হত, এই মনে করে সেগুলি এখানে অবিকল ছাপা হল।
তা হলেও প্রবন্ধগুলোকে একটা আর-একটার সঙ্গে গেঁথে দেওয়া এবং আজকের পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আলোচিত বিষয়গুলো সম্বন্ধে আমার এখনকার মত ব্যক্ত করা এই দুটো দায়িত্ব পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। প্রবন্ধগুলোকে তিনটি বিভাগে সাজিয়েছি রাষ্ট্র, জাতীয়তা, ইতিহাস। তাই এই তিনটি প্রসঙ্গ ধরে প্রবন্ধের বিষয়গুলো নিয়ে খানিকটা বিস্তার করছি।
১.
রাষ্ট্র নিয়ে আমার আলোচনা শুরু হয়েছে মার্কস থেকে, শেষ হয়েছে ফুঁকো-তে। প্রথম প্রবন্ধটি লেখা ১৯৮০-তে। শেষ প্রবন্ধটি ১৯৯৮-এ। বলা বাহুল্য, এই প্রায় দুই দশকে বিশ্ব জুড়ে রাজনীতির খোলনলচে বদলে গেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, মার্কস থেকে যাত্রা শুরু করে ফুঁকো-তে এসে অবতীর্ণ হওয়া ঐতিহাসিক যুগ-পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তা আদৌ ঠিক নয়। সম্প্রতিকালে, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং এক ধরনের সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির অবলুপ্তির পর, চতুর্দিকে শোনা যাচ্ছে যে কার্ল মার্কসের তত্ত্ব নাকি অবশেষে ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এখন থেকে মার্কসসহ আধুনিক যুগের সবরকম বিপ্লবচিন্তার অবসান ঘটল। আধুনিকতার পালা শেষ, এবার শুরু উত্তর-আধুনিক প্রবহমানতা, যার কোনও কেন্দ্র নেই, কোনও। নির্দিষ্ট চালিকাশক্তি নেই, নেই কোনও বন্ধন মোচনের স্বপ্ন। অর্থাৎ কার্ল মার্কসের প্রস্থান, মিশেল ফুঁকোর প্রবেশ।
এই বর্ণনায় নাটকীয়তা আছে হয়তো কিন্তু সারবস্তু কিছুই নেই। বরং সমাজদর্শন-চিন্তার উদ্দেশ্য ও প্রয়োগ সম্বন্ধে যথেষ্ট মুখামি প্রকাশ পায় এ ধরনের মন্তব্যে। অ্যাডাম স্মিথের তত্ত্ব সঠিক না ভ্রান্ত? কান্ট অথবা রুসো ঠিক লিখেছিলেন না ভুল? সমাজতত্ত্ব নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের কাছে এরকম প্রশ্ন নিতান্তই বাঁচালের প্রগতা। এ প্রশ্নের কোনও সদুত্তর সম্ভব নয়। বস্তুত, প্রশ্নটাই অর্থহীন। মার্কসের সমাজ-বিশ্লেষণ পঞ্চাশ কি একশো বছর আগেও যতটা অর্থপূর্ণ ছিল, এখনও ততটাই অর্থপূর্ণ। যদিও পঞ্চাশ বছর আগে যে অর্থগুলো প্রাসঙ্গিক মনে করা হত, এখন হয়তো। আর তা হয় না। আবার আজকে মার্কসের লেখায় অনেক নতুন অর্থ আমরা খুঁজে পাই। যা পঞ্চাশ বছর আগে কারও নজরেও আসেনি। মহান দার্শনিকদের চিন্তার ভাঁড়ার সহজে শূন্য হয় না।
সোভিয়েত সমাজবাদ আর নেই, তাই মার্কসের তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে গিয়েছে–এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। মার্কস সোভিয়েত সমাজবাদের তাত্ত্বিক ছিলেন না। মার্কস ছিলেন আধুনিক পুঁজিবাদের বিশ্লেষক। তাই আধুনিক পুঁজিবাদ যতদিন টিকে থাকবে, মার্কসের চিন্তাও অন্তত ততদিন তার প্রাসঙ্গিকতা হারাবে না।