• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

আরেকটা কলকাতা – সুপ্রিয় চৌধুরী

Arekta Kolkata By Supriya Chowdhury

বাহালভাই। বৃষস্কন্ধ। ছ’ফিটের কাছাকাছি উচ্চতা। পালিশ করা হাতির দাঁতের মতো গায়ের রং। চোখের কোণে সুর্মা। অ্যাপোলোর মতো সুদর্শন। ঠোঁটের কোণে চাপা, ভারী মিঠে একটা হাসি সবসময়। ইদানীং ধর্মে কর্মে মন দেওয়ায় মাথায় ফেজ টুপি আর একগাল শ্বেতশুভ্র দাড়ি। শুনেছি ব্যাবসার ব্যস্ততার কারণে আজকাল আর খলিফার কাজটা সেভাবে করতে পারেন না। তবে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের কোনও অনুষ্ঠানে জোরাজুরির ফলে এখনও দৌড়োতে হয় মাঝেমধ্যে। কারণ ওই অলৌকিক ওজন-জাদুটা যে আজও ভোলেননি বাহালভাই।

খ্যাপা খুঁজে ফেরে…

বউবাজার স্ট্রিট অধুনা বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় বারবার চোখে পড়েছে দৃশ্যটা। কয়েকজন মানুষ। ক্ষয়া ক্ষয়া চেহারা, মলিন পোশাক-আশাক। হাতে ছোট ছোট ঝাঁটা। ঝাঁট দিচ্ছে রাস্তার ওপর সার সার সোনার দোকানগুলোর মেঝে আর সামনের ফুটপাতে। কাজটা করছে খুব ধীরে ধীরে, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। প্রতিটি ইঞ্চিতে জমে থাকা ধুলো ঝাড়ু দিয়ে এনে জড়ো করছে একজায়গায়। তারপর সাবধানে কাঁচিয়ে তুলে নিচ্ছে হাতল লাগানো একটা চ্যাটালো পাত্রে যাতে এককণাও মাটিতে না পড়ে থাকে। কাজটা শেষ করে পাত্রটা নর্দমার ধারে চাপাকলের সামনে নিয়ে গিয়ে সমস্ত ধুলোটুকু ঢেলে দিচ্ছে একটা ছাঁকনিতে। অল্প অল্প জল ঢেলে ঢেলে ধুয়ে চলেছে বার বার। আঙুল দিয়ে খুঁটে খুঁটে সতর্ক চোখে খুঁজে চলেছে কিছু। খুঁজে পেলে দু’নখের ডগায় তুলে রেখে দিচ্ছে ছোট একটা কাপড়ের থলেতে। না পেলে ছাঁকনির ধুলোকাদা ঢেলে দিচ্ছে নর্দমায়।

প্রিয় পাঠক, যত সংক্ষেপে লাইনগুলো লিখলাম ব্যাপারটা আসলে কিন্তু মোটেই সেরকম নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায় এই গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ হতে। কিন্তু কী খুঁজছে লোকগুলো? পাঠকদের অবগতির জন্য জানাই— সোনা। গয়না তৈরির সময় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সোনার কুচি, খালি চোখে যা দেখতে পাওয়া অসম্ভব, ছিটকে পড়ে মিশে যায় ধুলোয়। ধুলোকাদা ঘেঁটে সেই সোনাই খুঁজছে ওরা। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র অণুকণার মতো সোনার কুচিও ধরা পড়ে যাবে ওদের মাইক্রোস্কোপিক চোখে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। সোনার দোকানদার অথবা কারিগররা ওদের ‘ঝড়ুয়া’ নামে চেনে। ওরা নিজেদের পরিচয় দেয় ‘সোনঝড়ুয়া’ নামে। সোনঝড়ুয়া গোষ্ঠী। এরা সবাই ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জীবিকার সন্ধানে এ শহরে চলে আসা হতদরিদ্র হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। এদের একমাত্র জীবিকা এই ধুলোকাদা ঘেঁটে সোনা খুঁজে বের করা। অর্থের বিনিময়ে সোনার দোকান আর সামনের ফুটপাতের ইজারা নেয় এরা। বিশেষ করে লগনশা (বিয়ের মরশুম), ধনতেরাস, পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়ার মতো উৎসবের সময় সোনঝড়ুয়াদের ব্যস্ততা যায় বেড়ে। দোকানদাররাও মওকা বুঝে ইজারার টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে দেয় এইসময়টায়। ভাগ্য খুব ভালো থাকলে একজন সোনঝড়ুয়া ধুলোকাদা ঘেঁটে বছরে ভরিদুয়েকের মতো সোনা সংগ্রহ করতে পারে। যদিও সেটা কালেভদ্রে ঘটে। এদিকে সোনার মহাজনরা বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে এদের থেকে সোনা কেনে অর্থাৎ চিরাচরিত সেই ঠকে যাওয়ার গল্পটা কিন্তু থেকেই যায় এই হতভাগ্য, হতদরিদ্র মানুষগুলোর জীবনে। এদের বড় একটা অংশ হাওড়া লাইনে উত্তরপাড়া, বালি রেলস্টেশনের গায়ে ছোট ছোট ঝুপড়ি বেঁধে সপরিবারে বাস করে। বিদ্যুত্হীন, জলহীন, অশিক্ষা আর দারিদ্রে ভরপুর পশুরও অধম জীবন। তবু কপালে থাপ্পড় মেরে মেনে নিতে হয়েছে সেটাকেই। কারণ কবিতার সেই খ্যাপার মতো পরশপাথর থুড়ি সোনা খুঁজে ফেরা ছাড়া আর কোনও জীবিকার সন্ধান যে জানা নেই মানুষগুলোর।

কালেকশন পার্টি

বড়বাজার এবং ডালহৌসি সংলগ্ন অফিসপাড়ায় দেখতে পাওয়া যাবে এঁদের। মূলত পুরনো ঘরানার মাড়োয়ারি ফার্ম ও গদিগুলোয় ঘোরাফেরা করেন এঁরা। বেশিরভাগই পুরনো কলকাতার ক্ষয়িষ্ণু বনেদি পরিবারের সন্তান। বাপ পিতেমোরা বুলবুলির লড়াই, বাঈ নাচ, রেসের মাঠে মুঠো মুঠো টাকা উড়িয়েছেন এক সময়। এখন ভগ্নপ্রায় বিশাল বাড়ি, জরাজীর্ণ। গাদাগুচ্ছের শরিক। মামলা মোকদ্দমা, কোর্ট কাছারি। নামে তালপুকুর কিন্তু ঘটি ডোবে না। মোটামুটি সকাল দশটা সাড়ে দশটা নাগাদ চানটান সেরে, রুটি-আলুকুমড়োর ঘ্যাঁটের ব্রেকফাস্ট সাঁটিয়ে এঁরা বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। এঁদের সবারই বয়স মোটামুটি ষাট থেকে পঁচাত্তরের কোঠায়। পরনে ধবধবে কাচা এবং পাটভাঙা বাংলা শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ধুতি অথবা পাজামা। ট্রামের সেকেন্ড ক্লাস অথবা বাসে চেপে পৌঁছে যান গন্তব্যস্থলে। ঢুঁ মারা শুরু করেন গদিগুলোয়। কোন গদিতে কবে যাবেন ডেট বাঁধা আছে। বাঁধা আছে আলাদা গদিও। মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে অনেকেরই দানধ্যানে বেশ মতিগতি আছে। এঁরাই এঁদের মূল টার্গেট গ্রুপ। টাকা চাওয়ার বাহানা হাজার রকম। মোটামুটি দশটা থেকে একটা অবধি গদি থেকে গদিতে ঘুরে ঘুরে টাকা সংগ্রহ করেন এঁরা। অতঃপর দ্বিপ্রাহরিক ফ্রি লাঞ্চ বড়বাজার অঞ্চলের কোনও মন্দির অথবা ধর্মস্থানে। এই অঞ্চলে বহু এরকম মন্দির রয়েছে যেখানে রোজই কোনও না কোনও ধর্মীয় সংস্থা বা ধনী গোষ্ঠীর তরফ থেকে ‘ভাণ্ডারা’-র (বিনামূল্যে প্রসাদ বিতরণ) আয়োজন করা হয়। কবে কোথায় কোন মন্দির বা ধর্মস্থানে ‘ভাণ্ডারা’ দেওয়া হবে এই কালেকশন পার্টিদের প্রত্যেকের সেটা নখদর্পণে। দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে ঘণ্টাখানেক জিরিয়ে নিয়ে ফের হানা দেওয়া শুরু হয় গদিতে গদিতে। চেয়েচিন্তে (ওদের নিজেদের ভাষায় কালেকশন) দিনের শেষে রোজগার হয় মন্দ না। মাসের শেষে উপার্জনকৃত অর্থের পরিমাণ পনেরো হাজার অবধি পৌঁছোয় অনেকের ক্ষেত্রে। রোজগারের অঙ্কটা নির্ভর করে বাকচাতুর্য অর্থাৎ গোদা বাংলায় দাতাকে পটিয়ে পাটিয়ে যতটা বেশি সম্ভব টাকা খিঁচে নেবার ওপর। এঁদেরই মধ্যে একজন, মিত্তিরদার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আজ থেকে বছর বিশেক আগে। উত্তর কলকাতার এক পড়তি বনেদি বাড়ির সন্তান। বয়স সত্তরের কোঠায়। দুধে আলতা গায়ের রং। নীলচে চোখের মণি। দুধসাদা ব্যাকব্রাশ চুল। উচ্চতা প্রায় ছ’ফুট। গলায় রুদ্রাক্ষ আর স্ফটিকের মালা। পরনে পাটভাঙা কনুই অবধি গোটানো ফুল হাতা বাংলা শার্ট আর ধুতি। হাতের আঙুলে গোটা চারেক পাথর বসানো আংটি। শার্টের ঝুলপকেটে ছোট একটা নোটখাতা। কবে, কোথায়, কোন ডোনার পার্টির কাছে যেতে হবে তার খতিয়ান। সেই সময় কাঁটায় কাঁটায় মেনে চলেন মিত্তিরদা। লোকমুখে শোনা দাতাদের কাছে মিত্তিরদার দাপট এতটাই ছিল যে কখনও চাহিদার তুলনায় অর্থের পরিমাণ কম হলে সেই দাতাকে অভিযোগ জানাতেন বেশ কড়া ভাষায়। সেই কড়া ভাষার একটি নমুনা এখানে তুলে দিচ্ছি। বয়ানটি মোটামুটি এইরকম— “তোমার বাপঠাকুরদারা অনেক ভাল যজমান ছিলেন। খোলা হাতে দক্ষিণা দিতেন। তোমরা আজকালকার ছেলেছোকরা, দানধ্যানের মর্মই বোঝো না।” প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা ভাল যে মিত্তিরদার মতো কালেকশন পার্টিরা সংগ্রহকৃত অর্থকে ‘দক্ষিণা’ আর দাতাদের ‘যজমান’ নামে ডাকেন। ওদের মুখেই শোনা সারা কলকাতা শহরে এরকম সংগ্রাহক প্রায় শ’চারেক রয়েছেন। তবে এঁদের প্রায় সবারই অভিযোগ, পুরনো ঘরানার অবাঙালি ব্যবসায়ীদের দানধ্যানে বেশ খোলা হাত ছিল কিন্তু তাদের লেখাপড়া জানা পরবর্তী প্রজন্ম এই দান খয়রাতির ব্যাপারটাকে আর মোটেই সেভাবে গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। প্রায় বিশ বছর আগে শোনা এসব কথা। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘কালেকশন পার্টি’-রা আজও এই শহরে টিকে আছেন কিনা জানা নেই।

তোমার শখ আমার বাঁচা

কখনও বিকেলের দিকে যদি কলকাতার কালীঘাট, টালিগঞ্জ, শ্যামবাজারের খালপাড়গুলোর দিকে যান, চোখে পড়লেও পড়তে পারে কিছু মানুষ, খালি গা, নিম্নাঙ্গে মালকোঁচা মারা লুঙ্গি, দু’হাতে খালের পাঁক তুলে বড় বড় মাটির চাড়িতে ভরছে। ব্যাপারটা কী? খাল সংস্কার হচ্ছে নাকি? এ ধরনের প্রশ্ন মনের কোণে উঁকিঝুঁকি মারার আগেই জানাই ব্যাপারটা আদৌ সেরকম নয়। ওই লোকগুলো আসলে কেঁচোশিকারি। আমাদের যাদের বাড়িতে অ্যাকোয়ারিয়ামে রঙিন মাছ পোষার শখ রয়েছে তাদের প্রায় সকলেরই জানা যে এক ধরনের অতি ক্ষুদ্রাকার কেঁচো এই ধরনের মাছের মূল খাদ্য। খালের পাঁক ঘেঁটে ঘেঁটে সেই কেঁচো সংগ্রহ করছে মানুষগুলো। আপাতদৃষ্টিতে নজর চালালে চাড়ির মধ্যে থকথকে কালো নোংরা পাঁক ছাড়া আর কিছুই নজরে আসবে না। সেই চাড়ি ভরতি পাঁক মাথায় করে বয়ে নিয়ে আসা হবে বাড়িতে। তারপর ঢেলে দেওয়া হবে ছড়ানো কোনও পাত্র বা এক ইটের দেওয়াল তোলা ঘেরাটোপে। ওপরে ঢেকে দেওয়া হবে কালো রঙের পলিথিনের চাদর। পাঁকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অযুত-কোটি নিশাচর কেঁচো রাত হয়ে গেছে ভেবে উঠে আসবে ওপরে। আড়াই-তিন ঘণ্টা বাদে চাদর সরিয়ে দক্ষ হাতে কাঁচিয়ে তুলে নেওয়া হবে কেঁচোগুলোকে। একটা লম্বাচওড়া সাদা কলাইকরা পাত্রে ঢেলে বারবার ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া হবে বাকি পাঁকটুকু। পড়ে থাকবে জমাটবাঁধা অযুত-কোটি রক্তলাল কেঁচো। বড় বড় পলিপ্যাকে ভরতি করে পৌঁছে দেওয়া হবে শহরের রঙিন মাছের দোকানগুলোয়। গৃহস্থের সাজানো ড্রয়িংরুমে গৃহশোভা বৃদ্ধির উপকরণ অ্যাকোয়েরিয়ামে লাল নীল মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবার জন্য। মাছের দোকানদার অথবা গৃহস্থ কেউ খবরই রাখবে না তাদের ব্যাবসা অথবা শখের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে প্রতিদিন কত রকমের বিপদ আর রোগবালাইয়ের ঝুঁকি নিয়ে জলে নামে কেঁচো শিকারিরা। খালের পাঁক কালো নোংরা জলে হাজার রকমের বিষাক্ত জীবাণু। ফলে বারোমাস হাতে-পায়ে জলহাজা সহ একাধিক চর্মরোগে ভোগে মানুষগুলো। এ ছাড়া রক্তচোষা জোঁক, সাপ আর বিষাক্ত পোকামাকড়ের (ওয়াটার স্পাইডার, ওয়াটার বিটলস) কামড়ের বিপদ তো আছেই। সঙ্গে দোসর দিনরাত জল ঘাঁটার ফল— বারোমাসে সর্দিকাশি আর জ্বর। এদিকে বর্ষাকালে খালের জল যায় বেড়ে। গভীর জলে নেমে কেঁচো ধরার কাজটা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে সে সময়টায়। এত হাড়ভাঙা পরিশ্রম, রোগবালাই আর বিপদের ঝুঁকি নিয়ে সারাদিন কাজ করার পরও হাতে লাভ থাকে অতি সামান্যই। ইদানীং সেই লাভেও থাবা বসিয়েছে ড্রাইফুডের বাড়বাড়ন্ত। দেশি-বিদেশি ড্রাইফুডে ভরতি রঙিন মাছের দোকান। সংরক্ষণের ঝামেলা নেই। গৃহস্থের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য। ফলে দারিদ্র্যসীমার অনেক নীচে বিচরণ করে এইসব প্রান্তিক মানুষগুলো। আনন্দ পালিত রোডের রেলব্রিজ সংলগ্ন বস্তি আর শিয়ালদা-পার্ক সার্কাস স্টেশনের মাঝখানে রেললাইনের ধারে ঝুপড়ি বেঁধে বাস করে এরা। ঘরে অপরিসীম দারিদ্র্য। তবু রোজ সকালে উঠে বেরোতেই হয় এই অসম্ভব পরিশ্রমসাধ্য, ঝুঁকিপূর্ণ আর বিপদসঙ্কুল জীবিকার সন্ধানে, কারণ দোকানদারের কাছে যা ব্যাবসা, গৃহস্থের কাছে যেটা শখ, ওদের কাছে সেটাই যে পেটের ভাত।

রাম-রথ

জানুয়ারি মাস। রাত সাড়ে দশটা। পৌনে এগারোটা মতো হবে। ইস্টার্ন বাইপাসের গায়ে অজয়নগর বাসস্টপে দাঁড়ানো দুটো ছেলে। বছর পঁচিশ-ছাব্বিশ। কথা বলছিল নিচু গলায় নিজেদের মধ্যে। “কীরে, তোর রাম-রথ তো এখনও এল না।” প্রথম জন জিজ্ঞেস করল দ্বিতীয় জনকে। দ্বিতীয় ছেলেটা, ছিপছিপে স্মার্ট চেহারা, লেদার জ্যাকেটের বুকপকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সময় দেখল, “চিন্তা করিস না এসে যাবে।” জবাব দিল নিশ্চিন্ত গলায়। মিনিট পাঁচেক বাদে একটা স্কুটার, গতি কমিয়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল বাস স্টপ থেকে হাত দশেক দূরে। দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেল ছেলে দুটো। স্কুটার আরোহী বেঁটেখাটো পেটা গড়ন। গলা অবধি জিপার টানা কালো জ্যাকেট। “কী বস, অ্যাতো দেরি হল ক্যানো?” জিজ্ঞেস করল দ্বিতীয় ছেলেটা। মাথা থেকে হেলমেটটা খুলল আরোহী, “আরে বোলো না, পাটুলির ওখানে শালা টায়ার ফাঁসল। রিপেয়ার করিয়ে আসতে আসতে…।” বলতে বলতে স্কুটারের সামনের ডিকিটা খুলে বের করে আনল চ্যাপটাপানা একটা রামের পাঁইট। প্রথম ছেলেটা দ্রুত আরোহীর হাত থেকে পাঁইটটা নিয়ে গুঁজে ফেলল কোমরে। তারপর হিপপকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে কয়েকটা নোট গুঁজে দিল আরোহীর হাতে। “আসি আরও তিন জায়গায় সাপ্লাই আছে। দরকারে ফোন কোরো।” স্কুটার স্টার্ট দিয়ে গড়িয়ার দিকে চলে গেল আরোহী। বাসস্টপের গায়ে স্ট্যান্ড করানো একটা হান্ড্রেড টুয়েন্টিফাইভ সি সি বাইক। ঝটপট বাইকে চেপে মোড় থেকে সন্তোষপুরের দিকে ঘুরে গেল ছেলে দুটো।

Page 54 of 65
Prev1...535455...65Next
Previous Post

সম্পাদকের বৈঠকে – সাগরময় ঘোষ

Next Post

গভীর নির্জন পথে – সুধীর চক্রবর্তী

Next Post

গভীর নির্জন পথে – সুধীর চক্রবর্তী

বাউল ফকির কথা – সুধীর চক্রবর্তী

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In