তখন মমতাজ-ই-মহল আরজ মন্দ বাণুবেগমের জগদ্বিখ্যাত সমাধির ভিত্তি নির্ম্মিত হইতেছিল। কতিপয় ফিরিঙ্গি বন্দী দূরে মৃত্তিকা বহন করিতেছিল, বৃদ্ধ অঙ্গুলি চালন করিয়া তাহাদিগের একজনকে দেখাইয়া দিল। বাদশাহের আদেশে ময়ুখ তাহাকে ডাকিয়া আনিলেন। বিকলাঙ্গ বৃদ্ধকে দেখিয়া ফিরিঙ্গি শিহরিয়া উঠিল। বৃদ্ধ সস্মিত বদনে তাহাকে প্রণাম করিয়া কহিল, “একদিন পথভ্রান্তকে পথপ্রদর্শন করিয়াছিলে, অতএব তুমি আমার গুরু, বাদশাহের আদেশে তুমি মুক্ত।”
বাদশাহ ময়ুখকে ইঙ্গিত করিলেন, ময়ুখ ফিরিঙ্গির বন্ধন মোচন করিলেন। ফিরিঙ্গি স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল।
সহসা যমুনাতীর হইতে প্রবল বেগে বায়ু বহিল, সৈকতের রাশি রাশি কাশগুচ্ছ সমাধির শুভ্র মর্ম্মরের উপরে ছড়াইয়া পড়িল, বাদশাহ্ কঠিন শীতল শ্বেত মর্ম্মর আলিঙ্গন করিয়া বসিয়া পড়িলেন। তাঁহার পশ্চাতে গুলরুখ্ ও ললিতা নতজানু হইয়া উপবেশন করিলেন। তাহা দেখিয়া ময়ূখও সমাধির পশ্চাতে জানু নত করিয়া মস্তক অবনত করিলেন। এতক্ষণে ফিরিঙ্গির নয়নে অশ্রু দেখা দিল, সে স্বদেশের প্রথানুসারে নতজানু হইল।
সেই ফিরিঙ্গি বন্দী হুগলীর পাদ্রী আলভারেজ।
সমাপ্ত