————————
(১) পাল পর্বের লিপিমালা দ্রষ্টব্য।
(২) রামচরিত, ১।১৭ শ্লোকের টীকা দ্রষ্টব্য।
(৩) Taranath’s Geschichte der Buddhismus. — p. 202.
(৪) Ain-i-Akbari. Trs. Blochmann & Jarret, II, p. 145.
(৫) Manjusrimulakalpa, ed. Jayaswal. v. p. 883.
(৬) রামচরিত, কবিপ্রশস্তি, ৩নং শ্লোক।
(৭) Eggeling, Cat. of Sans, Mss. In the Library of the India Office, London. 1887. v. p. 974
(৮) সুকুমার সেন, বাঙ্গলা সহিত্যের ইতিহাস, ১ম খণ্ড; JASB. 1912, p. 34I.
(৯) Ed.S. C. Das, lnt o. p. iii; দুই পৃষ্ঠা পরেই এক কায়স্থ-বৃদ্ধের উল্লেখ আছে এই গ্রন্থে।
(১০) Eр, Ind. 1. р. 122
(১১) Ep. Ind, I, p, 81
(১২) Ep. Ind. XI, p. 4 I
(১৩) lnd. Ant. XIX, p. 2 18
(১৪) Ep. Ind. XVIII, p 25 I, P oc. A. S. B. 1880, p 78
(১৫) Ep Ind, J, p 332
(১৬) Ep. Ind. XI 1. p. 61
(১৭) Kane, History of the Dharmasastras, p. 76.
(১৮) উদয়সুন্দরীকথা, Gaekwad Or. Ser. p. 11.
(১৯) Ep lnd. XXlV, p. 101
(২০) কামরূপশাসনাবলী, পু ৪৩
(২১) Bhandarkar, List of Insciptions no. 350.
(২২) Ind. Ant., LXI, p. 48, I. H. Q. VI, p. 60
(২৩) H.B. (D. U.), p. 589.
(২৪) পরে দ্রষ্টব্য
(২৫) চন্দ্রপ্রভা, কলিকাতা সং
(২৬) Ep. Ind. XVII, 291-3o9; VIII, 317-38 1, Ind. Ant., 1893, 57 pp.
(২৭) Proc. A. S. B. 188o, 141 pp. Ep. lnd. XIX, 277 pp.
০৮. কৈবর্ত
পাল আমলে কৈবর্তদের প্রথম ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যাইতেছে। বরেন্দ্রীর কৈবর্তনায়ক দিব্য বা দিব্বোক পালরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান সামন্ত কর্মচারী ছিলেন বলিয়া মনে হয়; অনন্তসামন্তচক্রের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পালরাষ্টের বিরুদ্ধে বিদ্রোহপরায়ণ হইয়া রাজা দ্বিতীয় মহীপালকে হত্যা করেন, এবং বরেন্দ্রী কাড়িয়া লইয়া সেখানে কৈবর্তধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেন। বরেন্দ্রী কিছুদিনের জন্য দিব্য, রুদোক ও ভীম পর পর এই তিন কৈবর্ত রাজার অধীনতা স্বীকার করিয়াছিল। এই ঐতিহাসিক ঘটনা হইতে স্পষ্টই বুঝা যায় সমসাময়িক উত্তরবঙ্গ-সমাজে কৈবর্তদের সামাজিক প্রভাব ও আধিপত্য, জনবল ও পরাক্রম যথেষ্টই ছিল। বিষ্ণুপুরাণে কৈবর্তদের বলা হইয়াছে অব্রহ্মণ্য, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্য সমাজ ও সংস্কৃতি বহির্ভূত।(১) মনুস্মৃতিতে নিষাদ-পিতা এবং আয়োগব মাতা হইতে জাত সন্তানকে বলা হইয়াছে মার্গব বা দাস; ইহাদেরই অন্য নাম কৈবর্ত।(২) মনু বলিতেছেন, ইহাদের উপজীবিকা নৌকার মাঝিগিরি। এই দুইটি প্রাচীন সাক্ষ্য হইতেই বুঝা যাইতেছে, কৈবর্তরা কোনও আর্যপূর্ব কোম বা গোষ্ঠী ছিল, এবং তাহারা ক্রমে আর্য-সমাজের নিম্নস্তরে স্থানলাভ করিতে ছিল। বৌদ্ধ জাতকের গল্পেও মৎস্যজীবিদের বলা হইয়াছে কেবত্ত = কেবর্ত।(৩) আজ পর্যন্ত পূর্ববঙ্গের কৈবর্তরা নৌকাজীবী মৎস্যজীবী। দ্বাদশ শতকে বাঙালী স্মৃতিকার ভবদেব ভট্ট সমাজে কেবর্তদের স্থান নিদেশ করিতেছেন অন্ত্যজ পর্যায়ে, রজক, চর্মকার, নট, বরুড়, মেদ এবং ভিল্লদের সঙ্গে (৪); এবং স্মরণ রাখা প্রযোজন ভবদেব রাঢ়দেশের লোক। অমরকোষেও দেখিতেছি, দাস ও ধীবরদের বলা হইতেছে কৈবর্ত। মনুস্মৃতি এবং বৌদ্ধজাতকের সাক্ষ্য একত্র যোগ করিলেই অমকোষের সাক্ষ্যের ইঙ্গিত সুস্পষ্ট ধরা পড়ে। দ্বাদশ শতকের গোড়ায় ভবদেব ভট্টের সাক্ষ্য ও প্রামাণিক। স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, ঐ সময়ে ও কৈবর্তদের সঙ্গে মাহিষ্যদের যোগাযোগের কোনও সাক্ষ্য উপস্থিত নাই; এবং মাহিষ্য বলিয়া কৈবর্তদের পরিচয়ের কোনও দাবিও নাই, স্বীকৃতি ও নাই। পরবর্তী পর্বে সেই দাবি এবং স্বীকৃতির স্বরূপ ও পরিচয় পাওয়া যাইবে; কিন্তু এই পর্বে নয়। কৈবর্তদের জীবিকাবৃত্তি যাহাই হউক, পালরাষ্ট্রের উদার সামাজিক আদর্শ কৈবর্তদের রাষ্ট্ৰীয় ক্ষমতালাভ ও সঞ্চয়ের পথে কোন ও বাধার সৃষ্টি করে নাই, করিলে দিব্য এত পরাক্রান্ত হইয়া উঠিতে পারিতেন না। সন্ধ্যাকরনন্দী পালরাষ্ট্রের প্রসাদভোজী, রামপালের কীর্তিকথার কবি, তিনি দিব্যকে দস্যু বলিয়াছেন, উপধিব্রতী বলিয়াছেন, কুংসিত কৈবর্ত নৃপ বলিয়াছেন, তাঁহার বিদ্রোহকে অলীক ধর্ম বিপ্লব বলিয়াছেন, এই ডমর উপপ্লবকে ‘ভবস্য আপদম’ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন—শত্রু এবং শত্রুবিদ্রোহকে পক্ষপাতী লোক তাহা বলিয়াই থাকে—কিন্তু কোথাও তাঁহার বা তাঁহার শ্রেণীর বৃত্তি বা সামাজিক স্থান সম্বন্ধে কোন ও ইঙ্গিত তিনি করেন নাই। মনে হয়, সমাজে তাহাদের বৃত্তি বা স্থান কোনটাই নিন্দনীয় ছিল না। কৈবর্তরা যে মাহিষ্য, এ-ইঙ্গিতও সন্ধ্যাকর কোথাও দিতেছেন না। একাদশ-দ্বাদশ শতকে ও কৈবর্তরা বাংলাদেশে কেবট্ট বলিয়া পরিচিত হইতেন এবং তাঁহাদের মধ্যে অন্ততঃ কেহ কেহ সংস্কৃতচর্চা করিতেন, কাব্যও রচনা করিতেন, এবং ব্রাহ্মণ্যধর্ম, সংস্কার ও সংস্কৃতির ভক্ত অনুরাগী ছিলেন। ‘সদুক্তি কর্ণামৃত” নামক কাব্যসংকলন গ্রন্থে (১২০৬) কেবট্ট পপীপ অর্থাং কেওট বা কৈবর্ত কবি পপীপ রচিত গঙ্গাস্তবের একটি পদ আছে। পদটি বিনয়-মধুর, সুন্দর!
—————-