এ আইনে শাস্ত্রীয় বিবাহের নিষিদ্ধ সম্বন্ধের গণ্ডি প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খুব বড়, কিন্তু লৌকিক বিবাহের ওই গণ্ডি তিন আইনের নিষিদ্ধ গণ্ডির চেয়েও ছোট। প্রস্তাবিত আইনের এই নিষিদ্ধ সম্পর্কের বিবরণ পূর্বেই দিয়েছি। এ নিয়মে খুড়তুতো জোঠতুতো ভাই-বোনের বিবাহ নিষিদ্ধ নয়। কমিটি তাদের টীকায় বলেছেন যে, এ রকম বিবাহের বৈদিক প্রমাণ আছে, এবং এর ঐতিহাসিক দৃষ্টাস্তের অভাব নেই। সত্য কথা। কিন্তু প্রাচীন প্রথার নজির তখনই কার্যকরী হয় যখন সে প্রথাকে পুনরায় চল করার সামাজিক প্রয়োজন আছে, এবং সামাজিক মন ও রুচি তার প্রতি একান্ত বিমুখ নয়। এ আইনের লৌকিক বিবাহের নিষিদ্ধ সম্পর্কের সীমা এত অপ্ৰসর যে এমন অনেক বর-কন্যার বিবাহ সম্ভব যে-বিবাহ আধুনিক হিন্দুর সামাজিক বোধ ও রুচিতে প্ৰকাণ্ড ঘা দেয়। কমিটি বলেছেন যে তাদের প্রস্তাবিত এই নিষিদ্ধ সম্পর্কের তালিকা পৃথিবীর প্রায় অন্য সব দেশের নিষেধের তালিকার সঙ্গে এক। কথাটা সর্বাংশে সত্য বলে মনে হয় না। বহু সভ্যদেশের নিষিদ্ধ সম্বন্ধের সীমা এর চেয়ে বড়। নিকট সম্পর্কিতের মধ্যে বিবাহ নিষেধের জীব-বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আধুনিক বিজ্ঞানের মতে খুব দৃঢ় নয়। ওর যথার্থ ভিত্তি হচ্ছে সামাজিক পরিবেশের ফলে সামাজিক রুচির বিরুদ্ধতা। সুতরাং কোনও বিশেষ সমাজের বিমুখ রুচিকে অন্য সমাজের দৃষ্টান্তে এখানে অগ্রাহ্য করা চলে না। আমার মতে শাস্ত্রীয় বিবাহের গণ্ডি কিছু খাটো করে, এবং লৌকিক বিবাহের গণ্ডি অনেকটা বাড়িয়ে বিবাহ-নিষেধের সম্বন্ধ-গণ্ডিকে এক করা উচিত। পৈতীনসির বিধি স্বীকার করলে আপাতত কাজ চলতে পারে। এবং তাতে দু’রকম বিবাহ-বিধি রাখার একটা কারণ লোপ হয়। এ পর্যন্ত হিন্দু-বিবাহ আইনের খসড়ার যে আলোচনা করেছি তাতে আমার মত সংক্ষেপে এই দাড়ায়।
১। ‘শাস্ত্রীয়’ ও ‘লৌকিক’ দু’ রকম পৃথক বিবাহবিধি থাকবে না। হিন্দু বিবাহবিধি হবে এক রকম।
২। সে বিধিতে বর-কন্যার অসবর্ণত্ব বৈধ বিবাহের বাধা হবে না।
৩। সগোত্র বা সমানপ্রবর বর-কন্যার বিবাহ হতে পারবে।
৪। বিবাহের সপিণ্ডত্ব পৈঠীনসির মতানুযায়ী হবে পিতৃপক্ষে পাঁচ ও মাতৃপক্ষে তিন।
৫। বিবাহ হবে একপত্নীক।
কমিটি যেমন প্রস্তাব করেছেন তিন আইন অনুসারে কোনও হিন্দু, যিনি নিজেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে স্বীকার করেন, তার বিবাহ হবে না। ওই আইন বা অনুরূপ আইন থাকবে তাদেব জন্য যাঁরা ‘ব্রাতা’–যাঁরা সংস্কার রহিত; যাঁরা কোনও ধর্মমতকে সামাজিক বিধির নিয়ামক স্বীকার করেন না। ভবিষ্যৎ কালের এক অখণ্ডজাতি ভারতবর্ষের তাঁরা সম্ভব পথপ্রদর্শক অগ্রদল। তাদের নমস্কার কবি। ইতিমধ্যে ভারতবর্ষের হিন্দু-সমাজ নূতন কলেবর নিয়ে শক্তিমান হয়ে গড়ে উঠুক।