ধাপ-২ সমস্যাটা চিহ্নিত করার পর সেটি নিয়ে ভাবা যাবে না। সমস্যা কীভাবে দূর করব, সমস্যা আমার কী ক্ষতি করবে এসব নিয়ে ভাবতে থাকলে যত দিন যাবে তোমার চারপাশ ঘিরে শুধু সেই সমস্যাকেই দেখতে পাবে, আর কিছুর দেখা পাবে না। তাই সমস্যা নিয়ে না ভেবে সমস্যা সমস্যার জায়গায় আমি আমার জায়গায় মনে করে কাজ করে যেতে হবে।
ধাপ-৩ নতুন কোনো কাজে লেগে পড়তে হবে। কাজ বলতে কাগজ কলম পিষে অফিসের কাজ করতে হবে, তা কিন্তু নয়। নতুন কাজ হতে পারে যেমন খেলাধুলা করা, নতুন কোনো একটা গল্পের বই পড়া কোনো একটা মুভি দেখা। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে, আর সেজন্যেই এসব করার দরকার। এগুলো ছাড়াও তোমার পছন্দের যেকোনো কাজ করেও তুমি নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পার।
ধাপ-৪ নিজেকে যখন ব্যস্ত রাখতে শুরু করেছ, তখন দেখবে ধীরে ধীরে তোমার দুশ্চিন্তা, হতাশা এরকম সমস্যাগুলো আর তোমার কর্মব্যস্ততার সাথে পেরে উঠছে না। আর পারবেই বা কেন? তুমি তো মহাব্যস্ত তোমার কাজগুলো নিয়ে! এখন তোমাকে তুলনামূলক দরকারি কাজ শুরু করতে হবে। পড়ালেখা এবং তোমার নিজের জন্যে দরকারি সব কাজ শুরু করে দিতে হবে এখনই!
ধাপ-৫ নিজেকে ব্যস্ত রাখলে তুমি, পাশাপাশি নিজের জন্যে একটু সময়ও বের করে ফেলেছ তুমি। আর কী লাগে? এই সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করলেই দেখবে তোমার এই যে দুশ্চিন্তা আর হতাশা সব চলে গেছে! কাজের চাপে তুমি সেটা টেরও পাওনি! এখন নিজের মত করে চলতে শুরু করবে তুমি আবার যদি কোনোদিন হতাশায় পড়, জানোই তো কি করতে হবে! সোজা ধাপ ১ এর চলে গেলেই কেল্লাফতে!
মন খারাপ, হতাশা, দুশ্চিন্তা, এসব আমাদের মানসিক ব্যাপার। এগুলোকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। তাই এগুলো নিয়েই নতুন কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে দেখা যাবে সব সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যায়।
.
পৃথিবীর সবথেকে ভালো আইডিয়াগুলো কোথায় পাওয়া যায়?
যদি প্রশ্ন করি, পৃথিবীর সবথেকে ভালো আইডিয়াগুলো কোথা থেকে আসে? অনেক রকমের উত্তর আসবে। কেউ বলবে বাথরুম থেকে, কেউ বলবে অবসর সময় থেকে, কেউ আবার ঠাট্টার ছলে বলবে বিয়ে করলে মাথায় অনেক ভালো আইডিয়া আসে! এমন অনেক রকম উত্তরের মেলায় সঠিক উত্তরটি কি জানো? পৃথিবীর সবথেকে ভালো আইডিয়াগুলো আসে। কবরস্থান থেকে। শুনে খুব অবাক হচ্ছো তাই না?
একটা ভিডিওতে দেখলাম এটাই বলা হয়েছে। যুক্তিটাও বেশ চমৎকার। আমাদের মাথায় দারুণ দারুণ সব আইডিয়া আসতে থাকে প্রায়ই। এই আইডিয়াগুলোর প্রায় সবগুলোই আমরা একটা সময়ে ভুলে যাই। যেগুলো ভুলি না, সেগুলোর কিন্তু প্রয়োগও করা হয় না বেশিরভাগ সময়েই। সব আইডিয়া এসে জমে মাথায়, আর এতো শত আইডিয়া মাথায় নিয়ে আমরা এক সময়ে মরে যাই। আমাদের সাথে সাথে আইডিয়াটাও কবরে চলে যায়। এজন্যেই বলা হয়েছে, সবথেকে ভালো আইডিয়াগুলোর সন্ধান মেলে কবরেই!
এর কারণটা কি জানো? কারণ হলো আমাদের দ্বিধা। ধরো, তোমার একটা ফাটাফাটি আইডিয়া আছে মাথায়। তুমি এমন একটা প্রজেক্টের প্লান করলে, যেটা পুরো ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম কমিয়ে দেবে সহজেই! আইডিয়া সুন্দর, চেষ্টা করলে হয়তো এগিয়ে যেতে পারবে তুমি প্লান নিয়ে। এসময়ে বাগড়া দেয় দ্বিধা। তোমার মধ্যে কনফিউশন শুরু হয়ে যায়–পারবে তো ঠিকমত সব কাজ করতে? ভুল হবে না তো? অর্থায়ন করতে সমস্যা হবে কি?
এতো শত দ্বিধা আর আমি কি পারবো? এমন প্রশ্নের ভীড়ে এক সময় কাজের আগ্রহটাই চলে যায়। তোমার দ্বিধাই জয়ী হয়, সেই প্রজেক্টে ধুলো জন্মে। একসময় সেটা আর কোনো কাজেই আসে না, তোমার প্লান তোমার মনেই রয়ে যায়। একটা সময়ে ওই ভিডিওর মতোই তোমার স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় তোমার সাথেই।
ওয়ারেন বাফেট একটা কথা বলেছিলেন, We dont see our lost opportunities, as we see our failures. সোজা একটা কথা, কিন্তু এর অর্থ অনেক গভীর। তুমি যখন কোনো কাজে ব্যর্থ হও, তখন তোমার চোখে পড়ে সেই ব্যর্থতাটাই। সেখানে তোমার ফোকাস রেখে তুমি সিদ্ধান্ত নাও, তাই ওই ব্যর্থতাকে ফলাফল ভেবে তুমি আর সেই কাজে এগোতে চাও না। একবার ভেবে দেখ তো, তুমি যদি ওই ব্যর্থতার দিকে চোখ না দিয়ে যে সুযোগটা হাতছাড়া হতে পারে সেদিকে চোখ দাও, তাহলে কিন্তু তোমার ওই কাজটা করার প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যাবে!
ব্যর্থতা আসতেই পারে, হতাশ হতেই পার তুমি। কিন্তু তাই বলে যদি হাল ছেড়ে দাও, তাহলে যে সুযোগটা হাতছাড়া হতে যাচ্ছে, সেই সুযোগ আবার পাবে কি তুমি? এটুকু ভেবেও কিন্তু এগিয়ে যেতে পার তুমি, সাফল্য আসতে বেশি দেরি হবে না!
আইডিয়া সবার মাথায় আসে না, তাই তোমার আইডিয়াগুলো হারিয়ে গেলে সেগুলো আরেকজনের মাথা থেকে আসবে, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। নতুন পৃথিবী খুব প্রতিযোগিতামূলক, এখানে তোমার একটা ভালো আইডিয়া তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অন্যদের থেকে। আইডিয়াগুলোকে তাই হারিয়ে যেতে দিও না।
তোমার জীবনে ব্যর্থতা আসতেই পারে। টেন মিনিট স্কুল শুরু করার সময় হাজারটা ব্যর্থতা এসে জুড়েছিল আমাদের সাথে। সব সমস্যার সমাধান। হয়েছে, আমরা একবারও হাল ছাড়িনি। আর হাল না ছাড়ার পর একটা সময়ে টেন মিনিট স্কুল এখনকার অবস্থায় এসেছে, পরিচিতি পেয়েছে। আমাদের আইডিয়াগুলো যদি আমরা এভাবে কাজে না লাগাতাম, তাহলে হয়তো টেন মিনিট স্কুলও পড়ে থাকত কোনো খসড়া খাতায়। তা হয়নি, কারণ, হাল ছাড়েনি টেন মিনিট স্কুল টিম।