ওয়েটার করলেন কি, খুব শান্তভাবে তার হাতের খাবার পাশের টেবিলে রাখলেন। তারপর আরো শান্ত ভঙ্গিতে এক টোকায় তেলাপোকাটাকে কাঁধ থেকে পুরো রেস্টুরেন্টের বাইরেই ছুঁড়ে ফেরে দিলেন। তার পরের মুহূর্তেই সে আবার খাবার পরিবেশন শুরু করলো, যেন কিছুই হয়নি এতক্ষণ!
ব্যাপারটাতে সবাই বেশ মজা পেলেও সুন্দর পিচাইয়ের মনে তখন আরো গভীর একটা বিষয় চলছে। তার মনে হলো, ভদ্রমহিলাগুলোর চিৎকারে কোনো লাভ তো হয়ইনি, তাতে অহেতুক গোলযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ঠান্ডা মাথায় ওয়েটারের দারুণ সিদ্ধান্তে ব্যাপারটা আর। কোনোরকম ঝামেলায় গড়ায়নি!
পিচাইয়ের মনে হলো, আমাদের জীবনটাও কিন্তু এরকমই! যেকোনো সিচুয়েশনে আমরা যদি অকারনে React করি তাহলে ব্যাপারটা আরো খারাপের দিকে গড়াবে। কিন্তু সেখানে যদি আমরা Respond করি, তাহলে কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই অন্যরকম হয়ে যাবে! ছোট্ট দুটি শব্দ React আর Respond, কিন্তু দুটির পার্থক্য পুরো ঘটনাকেই পালটে দেয়।
এক তেলাপোকার গল্প থেকে কিন্তু আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমাদের সমাজে নতুন কিছু করতে গেলে, নিজের মত চলতে গেলে অনেকে অনেক কিছুই বলে। মানুষের সমালোচনার কোনো শেষ নেই, সমালোচনা চলতেই থাকে। তুমি যেভাবেই থাকো না কেন, সমাজের কেউ
কেউ সেটি নিয়ে একটু হলেও ভ্রম্নকুটি করবেই! এটা বলতে গেলে একটা রীতি হয়ে গেছে আমাদের সমাজের।
এই সমালোচনা, তিরস্কার, ভ্রূকুটি এগুলো হচ্ছে ওই তেলাপোকাটার মতো। এরা যেকোনো জায়গা থেকে কোনো না কোনোভাবে উঠে আসবেই! কিন্তু তুমি নিজেকে ওয়েটারের জায়গায় দেখবে, নাকি ওই ভদ্রমহিলার জায়গায় এটিই বদলে দেবে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি। ভদ্রমহিলা দুজন ভয় পেয়েছেন, অহেতুক চিৎকার করে লোকসমাগম করেছেন। তাতে কিন্তু তাদের খুব সম্মান বৃদ্ধি পায়নি!
আমাদের জীবনে আমরা এই ভদ্রমহিলাদ্বয়ের মত ভয় পেলে তাতে সমালোচনা আমাদের পেয়ে বসবে। আমাদের মনের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যাবে যে আমরা অকর্মা, কোনো কাজ পারি না, আমাদের দিয়ে কিচ্ছুটি হবে না। তাতে ক্ষতি বৈ লাভ কিছু হচ্ছে না।
অন্যদিকে তুমি যদি ওয়েটারের জায়গায় নিজেকে দেখ, ঠান্ডা মাথায় যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত থাকো, তাহলেই কিন্তু জীবন অনেক সুন্দর আর সহজ হয়ে ওঠে। ওয়েটার যেমন শান্ত হয়ে এক টোকা সব সমস্যার সমাধান করেছেন, তোমরাও তেমনি সমালোচনাকে তুড়ি মেনে উড়িয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই! এতে যেটা হবে, তোমার আত্মবিশ্বাস থাকবে পরিপূর্ণ, পরের কাজগুলোতে আরো সাহস করে আরো ভালো কাজ করতে পারবে! দারুণ হবে না সে ব্যাপারটা?
সুন্দর পিচাইয়ের গল্পটা এজন্যেই বলা যে, আমাদের জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে সমালোচনা আর তিরস্কার। এসবের ভারে নুয়ে না পড়ে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে আপন আত্মবিশ্বাসে। তবেই না লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারবে তোমরা!
.
গোলাপি হাতি থেকে রক্ষা পাওয়ার রহস্য
আমার এক স্যার একদিন আমার উপর ছোট্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট করেন। তিনি আমাকে বলেন, আয়মান, তুমি একটা কাজ কর। চোখ বন্ধ করে যেকোনো কিছু নিয়ে চিন্তা কর। আমার তখন সামনে পরীক্ষা, সেটি নিয়ে মহা দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করছে। আমি পরীক্ষা নিয়েই ভাবতে শুরু করলাম। খানিক বাদে স্যার আবার বলে বললেন, কিন্তু আয়মান, একটা নিয়ম আছে। তুমি যা কিছু নিয়েই ভাবো, গোলাপি হাতি নিয়ে চিন্তা করাই যাবে না।
কিছুক্ষণ পরে স্যার চোখ খুলতে বললেন। আমি একরাশ স্বস্তি নিয়ে চোখ খুলতেই স্যারের প্রশ্ন : তাহলে একবার বল, এতক্ষণ কী নিয়ে চিন্তা করলে?
আমাকে বলতেই হলো যে, স্যার ওই গোলাপি হাতির নিয়মটা বলার পর থেকে মাথায় শুধু গোলাপি হাতিই ঘুরছে, এমনকি চোখ খোলার পরেও! স্যার মৃদু হেসে বললেন, এরকমই হয়। এটাকে বলা হয় Pink Elephant Syndrome.
আমরা সবসময় সেটা নিয়েই ভাবি যেটা করতে মানা করা হয় আমাদের। এজন্যেই তোমাকে যদি কেউ বলে, দুঃখ করো না, তখন মনের মধ্যে দুঃখ আরো বেড়ে যায়!
স্যারের কথা শুনে আমার মনে হলো, আসলেই তো! স্যারের কথা কিন্তু একশো ভাগ সত্য! এরকম তো আমার সাথেও অনেক হয়! আমি যদি খুব ডিপ্রেসড থাকি, তখন যদি কেউ এসে বলে দোস্ত ডিপ্রেসড থাকিস না, প্রেসার নিস না, তখন কিন্তু আমার আরো বেশি খারাপ লাগে। বিষয়টা সেভাবে দেখলে আসলে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে মানুষগুলো কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয়!
এতোকিছু ভাবার পর মাথায় আরেকটা বিষয় এলো যে এ সমস্যাটা থেকে আমাদের যে দুশ্চিন্তা, ফ্রাস্ট্রেশন আরো বেড়ে যায়, তার কি কোনো সমাধান নেই? ভাবতে ভাবতেই মনে হলো এরও একটা সমাধান আছে। আমার এমনটা হলে সে সমাধানটাই আমি কাজে লাগাতাম!
এমন একটা সমস্যা থেকে রেহাই পেতে হলে আসলে আমাদের এগোতে হবে ধাপে ধাপে। কয়েকটি ধাপে চেষ্টা করলে কিন্তু এই গোলাপি হাতি কাছ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। চলো জেনে নিই এ ধাপগুলো :
ধাপ-১ প্রথমেই চিন্তা করতে হবে, আসলে সমস্যাটা কী? তুমি যদি ডিপ্রেসড থাকো, যদি হতাশা তোমাকে ঘিরে থাকে, তাহলে সেসবকে দূর করার পরিবর্তে সেগুলো নিয়েই কাজ করে যাবার চেষ্টা করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ ধরনের সমস্যা জীবনে থাকবেই, এগুলো। নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে তোমাকে। কিন্তু শুধুমাত্র এসব নিয়ে চললেও কিন্তু হবে না আবার!